ঢাকা
২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৮:৪০
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫

এখনো রমরমা ‘মেডিকেল টেকনোলজিস্ট’ বদলি বাণিজ্য

গত বছরের ৫ আগস্টের পর শুরু হওয়া মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের বদলি বাণিজ্য এখনো রমরমা। চলতি বছরের মে, জুন ও জুলাই মাসেই শুধু বদলি হয়েছে দুই শতাধিক। যার সিংহভাগ হয়েছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমট্যাব) মাধ্যমে।

এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম আট মাসে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল/প্রতিষ্ঠান থেকে বদলি করা হয় সহস্রাধিক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট। বদলির আরেকটি অংশ হয় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফোরামের (এমটিএফ) মাধ্যমে।

একজন সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত যে বদলি বাণিজ্য হয়েছে, গত ১০-১৫ বছরেও তা হয়নি। আওয়ামী লীগের আমলে পরিচালকের (প্রশাসন) দায়িত্বে ছিলেন সাদী সাহেব। তিনি জরুরি প্রয়োজন ও বোর্ডের অনুমতি ছাড়া একটি বদলিও করতেন না। আর এখন টাকার বিনিময়ে সকাল-বিকাল অর্ডার হচ্ছে।’

আমরা দীর্ঘদিন সংগঠন করি। অসংখ্য নেতাকর্মী ও সদস্য আছে। তারা অনেকে আমাদের কাছে রিকোয়েস্ট করে, আমরা সেগুলো দেখি। ছাত্রদলের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে বা আমাদের সংগঠনের সদস্য হলে আমরা তাদের সুপারিশ করি।- এমট্যাব মহাসচিব বিপ্লব উজ জামান

বিষয়টি স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এ বি এম আবু হানিফ বলেন, ‘এখানে অনেক মানুষের আবেদন আছে। এই আবেদনের মাধ্যমেই বদলি হয়। আর অধিকাংশ আবেদনের সঙ্গেই তদবির আছে।’

পুরো পরিসংখ্যান তুলে ধরে এ বিষয়ে এমট্যাব মহাসচিব বিপ্লব উজ জামান বলেন, ‘যে তথ্যটা আপনি দিলেন, আমি জানি না। আমরা খুব উদ্বিগ্ন। আমরাও জানি, প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৮-১০টা করে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বদলির অর্ডার হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে মহাপচরিচালক ও পরিচালক (প্রশাসন), উপ-পরিচালকের (প্রশাসন) শরণাপন্ন হয়েছি। তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, এগুলো কীভাবে হয়? তারা সদুত্তোর দিতে পারেননি। তবে, বলেছেন- উচ্চ লেভেলের নির্দেশে করতে হচ্ছে। আমাদের কিছু করার নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন সংগঠন করি। অসংখ্য নেতাকর্মী ও সদস্য আছে। তারা অনেকে আমাদের কাছে রিকোয়েস্ট করে, আমরা সেগুলো দেখি। ছাত্রদলের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে বা আমাদের সংগঠনের সদস্য হলে আমরা তাদের সুপারিশ করি। তবে সেটির সংখ্যা এত বেশি নয়। এটা আমাদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। এর বাইরেও অনেক কিছু হতে পারে, যেটা আমাদের জানার বাইরে।’

অনেকেই বদলি বাণিজ্য করছে, এটা সত্য। তবে আমরা যেসব ভাইদের বিষয়ে তদবির করেছি, তারা আমাদের গত ১৬-১৭ বছরের নির্যাতিত ভাই। বাড়ি চট্টগ্রাম, পদায়ন সিলেট বা রংপুর।- এমটিএফ সভাপতি আব্দুস সামাদ

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফোরামের (এমটিএফ) সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, ‘অনেকেই বদলি বাণিজ্য করছে, এটা সত্য। তবে আমরা যেসব ভাইদের বিষয়ে তদবির করেছি, তারা আমাদের গত ১৬-১৭ বছরের নির্যাতিত ভাই। বাড়ি চট্টগ্রাম, পদায়ন সিলেট বা রংপুর। এমন দূর-দূরান্ত থেকে তাদের সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অনুরোধ করি।’

গত ২৯ জুলাই ‘মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বদলিতে ‘কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এতে উঠে আসে, এই বদলি কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখায় বদলি সংক্রান্ত কাজ এখন প্রধান কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। কাজ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। জনপ্রতি বদলিতে দিতে হচ্ছে দুই থেকে তিন লাখ টাকা, যা দীর্ঘ সময় ধরে সিন্ডিকেটের সদস্যদের কোটিপতি করেছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং, তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সুবিধাজনক বদলি এবং অর্থ লেনদেনের নিয়ন্ত্রণ চালাচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এই নেতারা চিকিৎসকদের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ফলে অধিদপ্তরে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করেন।

বদলি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে অনিয়ম হলো কি না, সেটা দেখার বিষয়। অনিয়ম খুঁজে পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। কোথাও অনিয়ম থাকলে আপনারা তুলে ধরেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো।- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে অধিদপ্তরে এমট্যাব নেতারা সব কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তারা ছিলেন বেপরোয়া ও মারমুখী। কর্মকর্তারা নাজেহাল।’ এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং ফার্মাসিস্টদের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বেশিরভাগ সময় মহাপরিচালক থাকেন মন্ত্রণালয় বা বাইরের মিটিংয়ে। খুব কম সময়ের জন্য অফিসে আসেন। জরুরি ফাইল সাইন করে চলে যান।

সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘বদলি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে অনিয়ম হলো কি না, সেটা দেখার বিষয়। অনিয়ম খুঁজে পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। কোথাও অনিয়ম থাকলে আপনারা তুলে ধরেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

নিজের ব্যস্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই চেয়ারটাই ব্যস্ততার। যখন যেখানে কাজ, যেতে হয়। থাকতে হয়। অফিসের কাজই সব।’

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram