ঢাকা
১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৭:৪৭
logo
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪

কোনো ক্যাডারই ছাড়ে রাজি নয়, প্রশাসনে চরম হ-য-ব-র-ল

সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে চরম ‘হ-য-ব-র-ল’ অবস্থা চলছে প্রশাসনে। সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখন তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়েই ব্যস্ত। একেক পক্ষ দিন দিন নিজেদের দাবিতে আরো বেশি সোচ্চার হচ্ছে। প্রতীকী কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

এতে কেন্দ্র থেকে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত সব স্তরের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাবে তারা কেউই একচুলও ছাড় দিতে রাজি নয়। তাদের সাফ কথা, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা যাবে না। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।

এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আজ বুধবার সকালে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে যৌথ প্রতিবাদসভায় বসছেন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ)’ উদ্যোগে এই সভা হচ্ছে। কাল বৃহস্পতিবার বিএএসএর সঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। সংগঠনটির কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)।

এদিকে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা এক ঘণ্টা সারা দেশে ‘কলমবিরতি’ কর্মসূচি পালন করেছে প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। সংগঠনটির সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান জানান, কর্মসূচি চলবে। কাল ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব অফিসের সামনে মানববন্ধন পালিত হবে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি বলেছে, শিক্ষাকে ক্যাডারবহির্ভূত করার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থেকে সরে আসার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা যাবে না। প্রায় অভিন্ন দাবি চিকিৎসকদের সংগঠন বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের। সোমবার তারা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, প্রকৃত সংস্কার প্রস্তাবনা বাদ দিয়ে কমিশন স্বাস্থ্যকে ক্যাডারছাড়া করার যে হঠকারী সুপারিশ করেছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন তৈরি ও বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সুপারিশ প্রত্যাহার করা না হলে প্রশাসনিক সংস্কার ব্যর্থ হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো ধরনের সংস্কার প্রস্তাব মেনে নেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা ছাড়া সিভিল সার্ভিসের উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ে কেউ পদোন্নতি পাবেন না। উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এ ছাড়া জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে সুপারিশ করা হবে। এমন খবরে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ক্যাডারসহ সব ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাঁরা সবাই দাবি জানাতে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে যেন প্রতিবেদন চূড়ান্ত না করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় রবিবার সচিবালয়ে কয়েক শ কর্মকর্তা নিয়ে ‘শোডাউন’ করে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বিএএসএ।

প্রশাসন ক্যাডারের মতোই বিসিএসের অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারাও নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করছেন। প্রশাসনিক কাজকর্ম ফেলে তাঁরা এখন নিজ নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্মসূচিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার জোগাড় হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস পার হলেও গত ১৫ বছরের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও কয়েকটি কমিশন গঠন করা ছাড়া প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হয়নি। এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতাও স্পষ্ট। স্থানীয় সরকারসহ এখনো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদ খালি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সচিব পদে যোগ দেওয়া অন্তত দুই ডজন কর্মকর্তা এখনো বহাল আছেন। যাঁরা এখনো সচিব পদে বহাল, তাঁরা অনেকটা আতঙ্কে। কখন না জানি নিজ চেয়ার চলে যায়! তাই বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না কেউই। ফলে প্রশাসনিক স্থবিরতা বেড়েছে।

প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারা জনগণের ভোগান্তিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু তারা সে পথে না গিয়ে ক্যাডার সার্ভিসগুলোর পদোন্নতিসংক্রান্ত বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে ক্যাডারগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো বাড়ছে। উসকে দেওয়া হচ্ছে আন্ত ক্যাডার দ্বন্দ্ব। ক্যাডার সার্ভিসের শৃঙ্খলা তছনছ হয়ে পড়েছে। চাকরির আচরণবিধি ভুলে কর্মকর্তারা দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে কেউ কর্মসূচি দিচ্ছেন, আবার কেউ শোডাউন করছেন। সবই চাকরির আচরণবিধির লঙ্ঘন।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram