আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে নির্মিত ম্যুরালটি ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার (২৫ জুন) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ম্যুরাল ভাঙার ছবি ভাইরাল হলে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন মহলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও ম্যুরালটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
সমালোচনার মুখে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার জানিয়েছেন, ম্যুরালটি পুনঃ-স্থাপন করা হবে।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম।
১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। রফিক তার সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে নিয়ে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সংগঠন দাঁড় করান এবং অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রচেষ্টা শুরু করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। এ গৌরবময় অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাদের সংগঠন একুশে পদক লাভ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে কুমিল্লা নগরীর রাজবাড়ি এলাকায় জেলা প্রশাসনের অধীন সরকারি জায়গায় কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের পরিবারের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে একটি শহীদ মিনার এবং ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ওই শহীদ মিনার ও ম্যুরাল উদ্বোধন করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জমান কল্লোল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বুলি ইসলাম। ম্যুরালের পাশেই রফিকুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি।
কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নারগিছ আক্তার বলেন, রফিকুল ইসলামের ভাগনে মেরাজ আহমেদ রাজ শহীদ মিনার ও ম্যুরাল স্থাপনে অর্থ সহায়তা করেন। উদ্বোধনের পর থেকে এ স্থাপনা আমরা দেখভাল করে আসছিলাম। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন ওই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বুধবার সকাল থেকে রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে দেখা দেয় তীব্র সমালোচনা। তবে এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক এবং স্থানীয় বাসিন্দারাও ভয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউল আহমেদ বাবুল গণাধ্যমকে বলেন, মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে রূপ দিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের অবদান অপরিসীম। তার স্মরণে স্থাপিত ম্যুরালটি ভেঙে ফেলার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। তাই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ম্যুরালটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।
রাতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মৃতি রক্ষায় ও তার সম্মানে ম্যুরাল পুনঃস্থাপনসহ যা কিছু করণীয় সবকিছুই করা হবে।