নির্বাচিত হওয়ার পর ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি নতুন সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদের ১৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পর মনে হচ্ছে ট্রাম্প তার পূর্বসূরীদের মতো একই ফাঁদে পড়েছেন এবং ইরানের উপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন নেতানিয়াহুর সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে- ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোতে সরাসরি হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কৌশলে ব্যবহার করেছেন। এমনকি ওয়াশিংটন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকেও ইরানের ওপর সামরিক হামলা করা থেকে প্রতিহত করতে পারেনি। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের কয়েকদিন আগে, মধ্যপ্রাচ্যে তার রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ ইসরাইলে প্রবেশ করে শাব্বাতে নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করার দাবি জানান, যাতে তিনি গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। সেই সময়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এটিকে ‘ট্রাম্প ফ্যাক্টর’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। অনেকেই সেইসময়ে বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিচক্ষণতা এবং চুক্তি করার দক্ষতা প্রভাবশালী ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে একটি নির্ণায়ক সুবিধা প্রদান করতে পারে।
নেতানিয়াহু যদিও পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলোকে এই অঞ্চলে তার সামরিক অভিযানকে সমর্থন করার জন্য কৌশলে ব্যবহার করেছিলেন। ইসরাইলের কিছু সমালোচক নেতানিয়াহুর এই কৌশল প্রতিহত করার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু শনিবারের ঘটনার পর যখন প্রথমবারের মতো মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে তখন এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ট্রাম্পের অন্তর্দৃষ্টি পরিবর্তিত হয়েছে। এমনকি তার অভ্যন্তরীণ দলের সদস্যরাও পররাষ্ট্রনীতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ট্রাম্পের যুদ্ধের প্রতি জনসমক্ষে বিতৃষ্ণা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আর কোনও সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনরায় ক্ষমতায় আসার ২০০ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে উধাও হয়ে গেছে। জনসমক্ষে উপস্থিত হওয়ার পর ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে ওঠা গুজবকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। শনিবারের হামলার পর ট্রাম্পকে বলতে শোনা গেছে, 'আমি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাতে চাই। আমরা এমন একটি দল হিসেবে কাজ করেছি যা সম্ভবত আগে কোনও দল কখনও করেনি এবং আমরা ইসরাইলের সামনে এই ভয়াবহ হুমকি মুছে ফেলার জন্য অনেক দূর এগিয়ে গেছি।
ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে ইসরাইলি বোমা হামলার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া থেকে শতহস্ত দূরে ছিল। কারণ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হামলাগুলোকে ‘একতরফা’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে ‘আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত হবে না এবং আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এই অঞ্চলে আমেরিকান বাহিনীকে রক্ষা করা।’
বলা বাহুল্য, এক সপ্তাহে অনেক কিছুই বদলে গেলো। এখন মনে হচ্ছে আমেরিকা ইসরাইলি হামলাকে পুরোপুরি সমর্থন করেছে এবং আক্রমণে যোগ দিয়েছে, যা সম্ভাব্যভাবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে পারে এমন ধারাবাহিক উত্তেজনার ক্ষেত্র তৈরি করছে। ভবিষ্যতের জন্য এর অর্থ কী? ট্রাম্প প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগতভাবে দাবি করেছেন যে ফোর্দো, নাতানজ এবং এসফাহানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সাইটগুলোতে মার্কিন হামলা এককালীন অভিযান ছিল এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীকে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং ট্রাম্প তেহরানকে বলেছেন যে, সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করা হলে আমেরিকাও আরও হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত। তবুও ট্রাম্পের নিজস্ব প্রশাসনের কর্মকর্তারা যার মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও রয়েছেন, সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তেহরান প্রতিশোধ নিলে ইরানে দীর্ঘমেয়াদী মিশনের সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত, ট্রাম্প মধ্যম পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে তিনি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে এমন উত্তেজনা রোধ করতে আগ্রহী।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র নেতানিয়াহু একটি ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অভিনন্দন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ ও ন্যায়নিষ্ঠ শক্তি দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার আপনার সাহসী সিদ্ধান্ত ইতিহাস বদলে দেবে।’
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান