মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোনার মদনে নারী কেলেঙ্কারির অজুহাত দিয়ে মসজিদের এক ইমামের চুল দাঁড়ি কেটে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ইমাম।
এর আগে রবিবার রাতে তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের একটি মসজিদের ইমামের শোয়ার ঘরে গিয়ে আব্দুল্লাহ, জামির উদ্দীন সহ ৩-৪ জন পরকীয়ার অভিযোগে চুল দাড়ি কেটে দেন। পরে ইমামের পরিবারের লোকজন কে এনে তাদের কাছে তুলে দিয়ে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দেন। তবে ভুক্তভোগী ইমামের দাবি দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল্লাহ সহ সাদ পন্থী একজন লোক মসজিদ থেকে তাড়ানোর ষড়যন্ত্র করে আসছে।
অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের আছাব আলির ছেলে। তিনি তিয়শ্রী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও ওই ইউনিয়নের তাঁতীদলের সহ সভাপতি।
ভুক্তভোগী ইমাম জেলার আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতি ইউনিয়নের গাতীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী পরিবার ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই ইমাম দীর্ঘদিন যাবৎ মদন উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করে আসছেন। বাগজান গ্রামেও তিনি ২০২০ সাল থেকে মসজিদে ইমামতি করছেন। ইমাম শুক্রবারে মসজিদে বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান পেশ করেন। এগুলো নিয়ে গত এক বছর ধরে তাবলীগ জামাতের সাদ পন্থী একজন ব্যক্তি ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ কে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে আসছে। এর আগেও ভুক্তভোগী ইমামের বিরুদ্ধে তারা দরবার সালিশ করেছেন। বাগজান গ্রামের মানুষ তাদের এসব চেষ্টা সফল হতে দেয়নি। সবশেষে ভুক্তভোগী ইমামের বিরুদ্ধে গত রবিবার রাতে মসজিদের পাশের বাড়ির এক নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ আনেন তারা। পরে আব্দুল্লাহ মেম্বার মসজিদের সভাপতি সহ কয়েকজন কে নিয়ে গভীর রাতে ইমাম কে ডেকে তুলেন। এরপর বিচারের নামে ইমামের চুল দাঁড়ি কেটে দেন তারা। এর বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী ইমাম ইউএনও সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
কেলেঙ্কারি ঘটনার ওই নারীর নাম্বারে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে তিনি কল কেটে দেন। এরপর ফোন করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী ইমাম বলেন, আমি চার বছর ধরে ওই মসজিদে ইমামতি করে আসছি। আব্দুল্লাহ মেম্বার সহ তাবলীগ জামাতের সাদপন্থী সফর উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। আমাকে ফাঁসাতে না পেরে সর্বশেষ আমাকে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা সাজিয়ে আমার চুল দাঁড়ি কেটে দিয়েছে। আমি আব্দুল্লাহ মেম্বরকে বলেছিলাম নবীর সুন্নত দাঁড়ির উপর আঘাত না করে আমার গলার চুড়ি দিতে বলেছি। তারপরও তারা আমার চুল দাড়ি কেটে দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই
তিয়শ্রী ইউপি সদস্য ও তাঁতীদল নেতা আব্দুল্লাহ জানান, নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় স্থানীয় জনতা ইমাম সাহেবের উপর আক্রমণ করতে যায়। পরে আমি সবাইকে বুঝিয়ে শান্ত করে চলে আসি। শুনেছি ইমাম সাহেব ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর সাথে খারাপ আচরণ করলে ইমাম সাহেবের চুল দাঁড়ি কেটে দেন। এখন দেখছি আমার বিরুদ্ধেই ইমাম সাহেব অভিযোগ দিয়েছে। আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত না।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আজির উদ্দিনের নাম্বারে ফোন করা হলে নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
তিয়শ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান মাস্টার জানান শুনেছি আব্দুল্লাহ মেম্বার একজন ইমামের চুল দাড়ি কেটেছে এ ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয় কাজ এটি সমাজে গ্রহণযোগ্য নয় । তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়া হবে
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অলিদুজ্জামান জানান তিয়শ্রী ইউনিয়নের এক মেম্বারের বিরুদ্ধে মসজিদে ইমামের চুল দাড়ি কেটে দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। ওসির কাছে অভিযোগের কপি রেফার করেছি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।