ঢাকা
২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৫০
logo
প্রকাশিত : মে ২৪, ২০২৫

অঘোষিত যুদ্ধের মুখে ব্যবসায়ীরা

অঘোষিত যুদ্ধের মুখে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা। নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। বড় ব্যবসায়ীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে রাখা হচ্ছে। দুদকে তলব করা হচ্ছে। মব সৃষ্টির মাধ্যমে কোনো কোনো ব্যবসায়ীর বাসা ও কোম্পানিতে হামলা চালানো হচ্ছে। হামলার ভয় দেখিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর কাছে বড় রকমের চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। শেয়ারবাজারে ব্যক্তিগত ও কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে মামলা করা হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এখানেই শেষ নয়, কোনো কোনো ব্যবসায়ীকে হত্যা মামলার মতো মিথ্যা অভিযোগেও ফাঁসানো হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, ব্যবসায়ীরা এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। এরই মধ্যে অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে বেকারত্ব বেড়েছে।

নতুন করে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আরও হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। ফলে সামাজিক অস্থিরতা আরও বেড়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এমনিতেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নাজুক পরিস্থিতিতে আছে। এর ওপর স্থলপথে বাণিজ্য বন্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে বাড়তি শুল্কারোপসহ নানান ধরনের বৈশ্বিক চাপে যখন দেশের শিল্প-বাণিজ্য হুমকিতে তখন দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা দরকার। তা না করে উল্টো বিদেশি কোম্পানিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে দেশীয় শিল্পকে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা জানান, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা ট্রেডিংয়ের নামে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

এটি না করে যারা দেশে বিনিয়োগ করেছেন, শিল্প-কারখানা স্থাপন করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন, নানাভাবে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতিতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, চাঁদাবাজি ও মবের মতো ঘটনা দেশে উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগ ও শিল্প-কারখানা স্থাপনে নিরুৎসাহিত হবেন বলে মনে করছেন তারা। গত বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীরা গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, গত আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তাদের আশা ভেস্তে গেছে। পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই এবং পণ্য ছিনতাই বৃদ্ধির ফলে ছোট এবং বড় উভয় ব্যবসাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ বর্তমান ব্যবসায়িক পরিবেশের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য যে ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়েছে সেই চ্যালেঞ্জগুলো কেবল বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে তাই-ই নয়, বরং অনেক উদ্যোক্তাকে স্থায়ীভাবে আস্থা হারাতে বাধ্য করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে অর্থনীতির নেতিবাচক অবস্থা। গত জুলাইয়ের পর থেকে সামষ্টিক অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়ছে বেকারত্ব। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে দেশে বেকার বেড়েছে সোয়া তিন লাখ। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে বেকারত্বের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে।

বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৩০ হাজার। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকট, ডলার ঘাটতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)-এর নিট প্রবাহ ছিল ৮৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে নিট এফডিআই প্রবাহ ছিল ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসেবে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২৬ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগও কমছে। আস্থার অভাবে ব্যবসায়ীদের ঋণ নেওয়ার চাহিদা কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে ফেব্রুয়ারিতে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে ঠেকেছে।

আগের মাসে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, জুলাই আন্দোলন শুরুর পর থেকেই বেসরকারি খাতের ঋণ নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক চিফ ইকনোমিস্ট ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এটি কোনোভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য উপযোগী নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা, মব সৃষ্টি করে শিল্প-কারখানায় হামলা, বড় ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি এখন অহরহ ঘটছে। এটি শুধু অর্থনীতি নয় সামাজিকভাবেই এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এর ফলে যারা ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছে, তেমনি নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না, শিল্প-কারখানাতেও উৎপাদন কমছে। এ ধরনের পরিস্থিতি মহা দুর্যোগের শঙ্কা তৈরি করছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram