তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় পাওনা টাকা নিয়ে আপন জামাই-শশুর একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে। এ ঘটনায় মেয়ের জামাই উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের কালাইগোবিন্দপুর গ্রামের মরহুম মঙ্গল মিয়ার ছেলে মোঃ সোহেল মিয়া শশুরের বিরুদ্ধে ১৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা পাওনা দাবি করে তিতাস থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অন্যদিকে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে অসুস্থ শশুর একই উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের রঘুনাথপুর নয়ানী গ্রামের আব্দুল মান্নান জামাইয়ের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবির অভিযোগ তুলেন। তবে এ নিয়ে কয়েকবার বিচার সালিস করা হয়েছে বলে জানান দুই এলাকার পঞ্চায়েত।
অভিযোগ করে শশুর আব্দুল মান্নান বলেন, সোহেল আমার একমাত্র মেয়ের জামাই, বিয়ের পর থেকে আমরা তাকে বিদেশ পাঠানো ও নগদ অর্থসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে আসছি। সে একজন পরলোভী মানুষ। বর্তমানে আমার মেয়েকে ডিভোর্সের ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে, আমি টাকা দিতে রাজি না হলে আমার স্বাক্ষর জাল করে স্ট্যাম্প লিখে আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে এবং ফেসবুকে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এদিকে জামাই সোহেল অভিযোগ করে বলেন, আমার শশুর নিজের মালিকানাধীন জমি বিক্রির প্রস্তাব দিলে উক্ত জমি আমি ক্রয়ে আগ্রহী হই। এবং জমি বায়নাপত্র হিসেবে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি আমার শাশুড়ির উপস্থিতিতে শশুর আব্দুল মান্নান এর হাতে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করি। এছাড়াও শ্যালকদের বিদেশ পাঠানোর কথা বলে আরও ৯ লাখ ২২ হাজার টাকা ধার হিসাবে নেন শশুর আব্দুল মান্নান। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জমি রেজিস্ট্রি ও ধারের টাকা ফেরত দেননি তিনি। এতে টাকা চাইতে গেলে নানা টালবাহানা শুরু করেন শশুর আব্দুল মান্নান।
মেয়ে মনিকা আক্তার বলেন, আমার বাবা আঃ মান্নান একজন নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ, আমাদের টাকা আত্মসাত করতে আমার বড় ভাবিকে দিয়ে আমার স্বামীর নামে আদালতে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়ে হয়রানি করছে, এই কথা বলে মনিকা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ভুক্তভোগী সোহেল মিয়া ও তার স্ত্রী মনিকা আক্তার এ ঘটনায় ন্যায় বিচার চান এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন।
এ বিষয়ে পঞ্চায়েত নাজমুল হাসান কিরণ বলেন, জামাই শশুরের নিকট টাকা পাওনা এমন একটি বিচার আমার নিকট আসছিল, জামাই সোহেল টাকা দেওয়ার মূল স্ট্যাম্প দেখাতে না পাড়ায় বিচারটি করতে পারেনি।
রেনু স্বর্ণকার বলেন, জামাই সোহেলের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারপরও আমরা কয়েকজন বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি কাগজ লিপিবদ্ধ করেছিলাম চার লাখ টাকা দুই বারে আঃ মান্নান জামাইকে দিয়ে দিবে, এরই মধ্যে মান্নান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন যার ফলে টাকা দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে জামাই ও মেয়ে থানায় গিয়ে ১৫ লাখ ৫২ হাজার টাকার অভিযোগ দিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।
কালাইগোবিন্দপুর গ্রামের মোস্তাক বলেন, জামাই শশুরের টাকা লেনদেন বিষয়টি সত্য ঘটনা, একবার আমরা সালিশি করে ৫ লাখ টাকা শশুর আব্দুল মান্নান জামাই সোহেলকে দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পরে কয়েকবার তারিখ দিয়ে আর দেয় নাই।
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা তিতাস থানার এসআই কমল বলেন, জামাই সোহেলর অভিযোগ পেয়ে আমি অভিযুক্ত শশুর আঃ মান্নানের বাড়িতে যাই, গিয়ে দেখি মান্নান খুব অসুস্থ। আমি এক পর্যায়ে মান্নানের নিকট জানতে চাই টাকা নিয়ে জামাইকে জমি না দেওয়ার কারন কি? তখন মান্নান বলে এইগুলা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সুস্থ হলে থানায় আসবেন বললে আমি চলে আসি।