কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বাজছে। ইতোমধ্যে দুই দেশের সামরিক বাহিনী পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। আছে হতাহতের ঘটনাও। প্রতিবেশী দুই দেশের এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়েছে। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা এবং পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ৬৬ জনকে ‘পুশইন’ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর থেকে তাদের পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত হয়ে ৩৬ জনকে এবং মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলই সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে পুশইন করার তথ্য পাওয়া গেছে। তিন জেলায় সীমান্ত দিয়ে পুশইন হওয়া ১১৭ জন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির হেফাজতে রয়েছে।
বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার দক্ষিণ শান্তিপুর হাজিপাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিনটি পরিবারের ২৭ জন। এদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। তারা স্থানীয় আবু তাহেরের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
মঙ্গলবার রাতে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন এবং পানছড়ির রূপসেনপাড়া সীমান্ত দিয়ে আরো ২৪ জনকে পুশ করা হয়।
কুড়িগ্রামের রৌমারী ও ভূরুঙ্গামারী সীমান্তে বাংলাদেশে পুশ করা ৪৪ জনকে আটক করে বিজিবি। এর মধ্যে আটজন বাংলাদেশি। বাকি ৩৬ জনের পরিচয় নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় বিজিবি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলই সীমান্তে জোরপূর্বক প্রবেশ করানো হয় ১৫ নারী-পুরুষ ও শিশুকে। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিজিবির সূত্র বলছে, তাদের নাগরিকত্ব ও পরিচয় বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া শেষে প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারত থেকে বাংলা ভাষাভাষী যাদের অবৈধভাবে পুশইন করা হয়েছে তারা বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই ধরনের পুশইনের ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিএসএফের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয়। যদি তারা ভারতীয় নাগরিক বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বিজিবির পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, ভারত থেকে এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়। আমরা এরই মধ্যে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্য করেন তিনি। নাগরিকদের পুশইন করার বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিটি কেস আলাদাভাবে নিরীক্ষণ করছি। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমাদের দেশের নাগরিক যদি কেউ হয়ে থাকেন, আর সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের আমরা গ্রহণ করব। তবে এটা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় হতে হবে। এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়।
এটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, আমরা এটা নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৩২টি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে তিনটি সীমান্ত জেলা রয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি ড. বাহারুল আলম।