গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের গৌরীপুরে রং আর বিষাক্ত ক্যামিকেল দিয়ে নকল জুস প্রস্তুতকারী কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। অবিকল প্রাণ কোম্পানির ফ্রুটিকার রঙের লেভেল ব্যবহার করে ও বিএসটিআইয়ের নকল লোগোযুক্ত ‘ডিএসএফ ফ্রুট্টো ম্যাঙ্গো ফুড ড্রিংকস’ নামে বাজারজাত করে আসছিল বিষাক্ত এই জুস। সন্ধান পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত কোম্পানির মালিক মো. দুলাল উদ্দিনকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড ও কোম্পানি সীলগালা করে দেয়।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের রুকনাকান্দা গ্রামে এ অবৈধ ও নকল কোম্পানির সন্ধান মেলে। অবৈধ ও নকল এ কোম্পানির মালিক মো. দুলাল উদ্দিন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার উষাতরা গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের পুত্র।
জানা যায়, রং, ফ্লেভার ও ২৫ গ্রাম কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হতো ৬শ লিটার ফ্রুট জুস। প্রতি লিটার জুস তৈরিতে খরচ হতো মাত্র ৬ টাকা, বিক্রি হতো ৮০ টাকা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার এ অভিযান পরিচালনা করেন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম. সাজ্জাদুল হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা, সেনাবাহিনীর গৌরীপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ ক্যাপ্টেন সাদমান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বিএসটিআই ময়মনসিংহের ফিল্ড অফিসার প্রকৌশলী মাওন কুমার ধর আবীর ও পরিদর্শক প্রকৌশলী আবিদ হাসনাত। অনুসন্ধানী বিএসটিআই টিম আমের জুসে, আমের রসের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। পুরোটাই ফ্লেভার, রঙ আর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত জুসে বিষাক্ত ক্যামিকেল, রঙ, নকল বিএসটিআই এর লোগো ব্যবহারের দায়ে বিএসটিআই এর প্রতিনিধি দল তাৎক্ষনিক কোম্পানির মালিক মো. দুলাল উদ্দিন গ্রেফতার করে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা সরকার প্রমা’র নেতৃত্বে তাৎক্ষনিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গ্রেফতারকৃত ভেজাল জুস কোম্পানির মালিক মো. দুলাল মিয়াকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড করেন। আদালতের নির্দেশে গ্রেফতারকৃত আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম. সাজ্জাদুল হাসান জানান, ভেজাল ও নকল জুস উৎপাদনের দায়ে মালিককে গ্রেফতার করে আদালতের সাজায় জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ছোট-বড় একশত ৬৮টি কার্টুন জুস জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়াও নিষিদ্ধ পলিথিন, ক্যামিকেল বিনষ্ট করা হয়েছে। ফ্যাক্টরিটি সিলগালা করে বিএসটিআই এর জিম্মায় দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, দুলাল উদ্দিন অনেকদিন যাবৎ নকল জুস কোম্পানি চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ অভিযান পরিচালনা করার পরও সে বারবার একই ব্যবসায় ফিরে আসে।
এ প্রসঙ্গে মো. দুলাল উদ্দিন জানান, এর আগে ভোক্তা অধিকার অর্থদন্ড করেছিলো। কোম্পানি সিলগালাও করেছিলো। বিএসটিআই এর অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা করার শর্তে সিলগালা খুলে দেয়। এখন পর্যন্ত বিএসটিআই এর অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, এ জুসে আমের কোনো রস নেই। পুরোটা ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তবে আমের ফ্লেভার দেয়া আছে।