ঢাকা
৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৭:৪৭
logo
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

যাকাতের অর্থনীতি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

যাকাত ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম। এটি কেবলমাত্র একটি আর্থিক ইবাদত নয়, বরং একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করে। বাংলাদেশে যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপাদান, যা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এই ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু সংস্কার প্রয়োজন।

যাকাতের ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

ইসলামে যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের বিত্তবানদের থেকে নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা, যাতে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত হয়। যাকাত শুধুমাত্র একটি দাতব্য কাজ নয়, বরং এটি একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য, যা মুসলিম সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, যদি যাকাত সঠিকভাবে আদায় ও বিতরণ করা হয়, তবে এটি দারিদ্র্য বিমোচনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, সঠিকভাবে যাকাত ব্যবস্থা পরিচালিত হলে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নেমে আসে। বাংলাদেশেও এটি সম্ভব যদি যথাযথ নীতিমালার মাধ্যমে যাকাত ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

বাংলাদেশে যাকাত ব্যবস্থা ও বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশে যাকাত বোর্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে সরকারি পর্যায়ে যাকাত ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ যাকাত বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সংগ্রহ ও বিতরণ করা হয়, যা অনেক সময় অনিয়মের শিকার হয়।

সম্প্রতি সরকার যাকাত ব্যবস্থাপনাকে সহজ করতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যার মধ্যে যাকাত অ্যাপস অন্যতম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, এখনো এর কার্যকারিতা ও জনগণের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

যাকাত ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ

১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব: বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যাকাত সংগ্রহ করা হলেও এর যথাযথ বন্টনের নিশ্চয়তা নেই।

২. সরকারি নীতির দুর্বলতা: বাংলাদেশে যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের জন্য কোনো শক্তিশালী সরকারি নীতিমালা নেই। ফলে এটি ব্যক্তিগত ও এনজিও পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থেকে যায়।

৩. সঠিক উপকারভোগীদের তালিকা না থাকা: দরিদ্রদের একটি সঠিক তালিকা তৈরি না থাকায় অনেক সময় প্রকৃত দরিদ্ররা যাকাত থেকে বঞ্চিত হন।

৪. অর্থের অপচয়: অনেক সময় যাকাতের অর্থ লুঙ্গি-গেঞ্জি বা অল্প পরিমাণ নগদ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে দরিদ্রদের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না।

    যাকাত ব্যবস্থার সংস্কারের প্রস্তাবনা

    ১. সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন:

    সরকার একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে পারে, যেখানে যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।

    যাকাত বোর্ডকে শক্তিশালী করে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে যাকাত ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে।

    দারিদ্র্য বিমোচনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা:

    দরিদ্রদের স্বাবলম্বী করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত, যেখানে যাকাতের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে।

    গরিব পরিবারগুলোর জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসার মূলধন, কৃষি সহায়তা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

    যাকাত ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন:

    যাকাত অ্যাপসের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বিতরণ নিশ্চিত করা যেতে পারে।

    যাকাতদাতাদের জন্য অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা হলে তাঁরা জানতে পারবেন তাঁদের প্রদত্ত যাকাত কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

    নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি:

    যাকাতের অর্থ দিয়ে দরিদ্রদের জন্য উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে তারা ভবিষ্যতে নিজেরাই যাকাতদাতা হয়ে উঠতে পারেন।

    গরিব ও অসহায় পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপন করা যেতে পারে।

    যাকাতের গণসচেতনতা বৃদ্ধি:

    মিডিয়া ও মসজিদের মাধ্যমে জনগণের মাঝে যাকাতের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।

    ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যাকাতের গুরুত্ব তুলে ধরতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রচারণা চালানো যেতে পারে।

    উপসংহার

    যাকাত ইসলামী অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে যদি সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে যাকাত ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে এটি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। ক্ষুদ্র অনুদানের পরিবর্তে বৃহত্তর ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে দরিদ্রদের স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সরকার ও সমাজের সক্রিয় সহযোগিতায় একটি কার্যকর যাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হবে।
    লেখক: বিল্লাল বিন কাশেম

    কবি, প্রবন্ধকার ও কলামিস্ট

    সর্বশেষ
    logo
    প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
    ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
    মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
    কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
    মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
    ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
    বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
    Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
    Host by
    linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram