খালিদ হোসেন মিলু, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছীতে বিলুপ্তির পথে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন হলুদ বিহার। ঐতিহাসিক হলুদ বিহার প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে বিহারের চতুরধার দ্রুত ভেঙ্গে পড়ছে। এতে বিলুপ্ত হতে চলেছে ইতিহাস ঐতিহ্যের এই নিদর্শন। প্রাচীন এই বিহারটির উপর কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো নজর নেই বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের পাশাপাশি হলুদ বিহারে ও দেশের বিভিন্ন এলকা থেকে পর্যটক দেখার জন্য আসে। এছাড়া শিক্ষা সফরে দেশি বিদেশি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পর্যটকরা আসেন। বিহারটিকে সংস্কার করে এর ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার দাবি এই এলাকার মানুষের। বিহারটির চতুর দিকে বাউন্ডারী ওয়াল নেই। এ কারণে গরু-ছাগল অনায়াসে প্রবেশ করে এতে বিহারের সৌন্দর্য বিকৃত হয়ে পড়েছে। যা এখানে দেখার কেউ নেই।
তথ্য সংগ্রহকালে জানা যায়, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের নিভৃতপল্লী হলুদ বিহার গ্রামের এক প্রান্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই দ্বীপ। ইতিহাস ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এই দ্বীপে নজর পরলেই দর্শকরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আসলে এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ। এটি ছিল এক সময় গাছ গাছড়া ঝোড় জঙ্গলে পরিপূর্ণ উচু একটি দ্বীপ। দ্বীপের মাথায় ছিল একটি বড়ই গাছ, যার নিচে ছিল একটি গভীর কূপ। দ্বীপটি মাথায় পাটকূপ সম্পর্কে এই এলাকাবাসীর সকলেই জানা শুনা রেখেছে। দ্বীপের ঝোড় জঙ্গল গাছপালা কেটে ফেলার আগেই কূপটি ভরাট হয়ে যায়।
পরবর্তীতে দ্বীপটি সংস্কারকালে এই কূপের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকজন দ্বীপের চতুর ধারে মাটি কেটে বাড়ি ঘর নির্মাণ করেন। মাটি কাটার এক পর্যায়ে দ্বীপের পূর্ব দিকে ইটের সিঁড়ি বের হয়। তখন এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তারপরেই এই দ্বীপটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে নেয়া হয়। হলুদ বিহার গ্রামে ছিল অনেকগুলো বিক্ষিপ্ত ঢিপি তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়েছিল পুরনো ইট, ভাংগা মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন নিদর্শন। এথেকেই এখানে বৌদ্ধ বসতির প্রমাণ মিলে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এই দ্বীপটি সংরক্ষিত করা হয়।
১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১ম বারের মত খনন কাজ শুরু করেন। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ২য় বার খননকালে দ্বীপের অভ্যন্তরে ১টি মন্দির আবিষ্কৃত হয়। এটি খননকালে বেশ কিছু প্রাচীন নিদের্শন সামগ্রী মানুষের মূর্তি সম্বলিত ভাঙ্গা, পোড়া মাটির ফলক, পাথর সামগ্রী ও মূর্তির স্তম্ভ মূল অলংকারের ঢালাই ছাচ এবং চুর্ণ যন্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রসাশনিক উদাসীনতা ও সংরক্ষণের অভাবে এই প্রাচীনতম নিদর্শন আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে।
এ বিষয়ে হলুদবিহার গ্রামের শাহিনুর ইসলাম শাহিন, ফারুক মাষ্টার, রনি, বলরামপুর গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য নাজমুল, রুমন সহ আরও অনেকে জানান, বিহারটির চতুরদিকে দ্রুত বাউন্ডারি দেওয়ার প্রয়োজন, সেই সাথে বিহারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়াসহ সংস্কার ও সংরক্ষণের প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বিলাশবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান কেটু জানান, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন হলুদবিহার কে নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে চতুর্দিকে তার কাঁটা দিয়ে ঘিরার দরকার। বিহারটি সার্বক্ষণিক দেখাশুনার জন্য একজন কর্মী প্রয়োজন। এছাড়াও এই বিহারটির সুন্দর্য বৃদ্ধিকরণের ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।