মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: সময় তখন সকাল ৮টা, ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ভ্যান, অটোরিকশা, সাইকেল নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে প্রায় ২ শতাধিক মানুষের উপস্থিতি। এতো ভিড়ের মধ্যে পুরুষ ও নারীদের লাইনের পাশে দুই হাটুর মাঝে মাথা রেখে এক হাতে লাঠি অন্য হাতে ভিজিএফ চালের স্লিপ ধরে বসে অপেক্ষা করছেন জমিলা বেগম (৮০)। এমন দৃশ্যের দেখা মিলে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ এর চাল বিতরণের আগ মুহুর্তে।
বুধবার (৪ জুন) বিরামপুর উপজেলার ৩০ হাজার ৩১৪ জন উপকারভোগী পরিবারের নিকট সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মসূচি ভিজিএফ'র চাল বিতরণের অংশ হিসেবে পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের ২ হাজার ৬১০ জনকে ১০ কেজি করে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হয়েছে। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমের দরজা বন্ধ থাকলেও সময়ের আগেই ২ শতাধিক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পরবর্তীতে যথা সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রহমত আলী ও ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের বারান্দায় ৮০ বছরের উর্ধ্বে বৃদ্ধ জমিলা দুই হাটুর মাঝে মাথা দিয়ে ভিজিএফ এর চাল নেয়ার অপেক্ষায় লাইনের পাশে বসে আছেন। তাঁর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ১ কি.মি. মাটির রাস্তা লাঠিতে ভর করে পায়ে হেঁটে এসেছেন তিনি। এই চাল নিয়ে দুই মেয়ের সন্তানদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করবেন তিনি। বৃদ্ধ জমিলা জানান, তাঁর স্বামী বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক আগে মারা যায়। দুই মেয়েকে নিয়ে টিনের চালার ঘরে বসবাস করে খুব কষ্ট করে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে নাতি নাতনিদের বিয়ে হওয়ায় কুঁড়ে ঘরে ঈদ আনন্দ উপভোগের জন্য নিজেই পরিষদে এসেছেন চাল নিতে। ১০ কেজি চাল পেয়ে তাঁর মুখ হাস্যজ্জল হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে একটি ভ্যানে করে সে চাল নিয়ে যায়।
বৃদ্ধ জমিলা উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের লক্ষিনারায়ণপুর গ্রামের মৃত তফিজ উদ্দিনের স্ত্রী। বর্তমানে সে মেয়েদের সংসারে সহযোগিতা করার লক্ষে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে এনে দিনের পর দিন অতিবাহিত করছেন।
পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, জমিলা বেগম বয়োবৃদ্ধ একজন নারী। তাঁর স্বামী যুদ্ধের আগে মারা যাওয়ার পর থেকে দুই মেয়ে সন্তানকে খুব কষ্টে মানুষ করেছেন। বর্তমানে গ্রামে ঘুরে সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে দিন পার করছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ভিজিএফ একটি মানবিক সহায়তা কর্মসূচি, যার মাধ্যমে সরকার দরিদ্র পরিবারের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করে থাকে। ভিজিএফ কর্মসূচিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এবং আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে অসহায়,গরীব জনগণের মধ্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়। এবার উপজেলার ৩০ হাজার ৩১৪ জন উপকারভোগী পরিবারকে এ সহয়াতা দেওয়া হবে।