ঢাকা
৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ২:০৮
logo
প্রকাশিত : জুন ৪, ২০২৫

বাঁশখালীতে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়, নাগরিক জীবনে চরম হতাশা

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: জনভোগান্তির আরেক নাম বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ। দিন দিন জনজীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে এ পল্লীবিদ্যুৎ সেবা। বৃষ্টি-বাদলের সাথে পল্লীবিদ্যুতের যেন দা-কুমড়ার সম্পর্ক। বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ নাই, বিদ্যুৎ থাকলেও ঘনঘন ভেলকিবাজিরও শেষ নাই। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বিদ্যুৎ হয়ে যায় উধাও। বাঁশখালীর মানুষের কাছে একটি ধারণার জন্ম হয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকা মানে কোথাও না কোথাও ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝড় বাদলের দিনে বিদ্যুৎ একবার চলে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা এমনকি দিনব্যাপী বিদ্যুৎ আসার আর খবরই থাকে না। ঝড় বাদলে আটকা বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক সেবার নামে চরম বিপর্যয়ে বাঁশখালীর জনসাধারণ চরমভাবে অতিষ্ট। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে বিভিন্ন নাগরিক সেবা। দিনের বেশীরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। এতে সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নাগরিক সেবা যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি বিদ্যুৎবিহীন জনজীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। এমন ঘটনা চলছে প্রতিনিয়ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। অনেকেই বিদ্যুৎ বিভাগের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রতি আঙ্গুল তুলেছেন। সামিজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেইসবুকেও চলছে সর্বস্তরের প্রতিবাদ ও ক্ষোভ।

বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, 'এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার প্রায়। এর মধ্যে বাঁশখালী জোনাল অফিস (জলদী), উপকেন্দ্র নাপোড়া ও বৈলছড়ি এ তিনটি স্টেশনের আওতাধীন গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। অপরদিকে গুনাগরি সাব-জোনাল অফিসের আওতাধীন গ্রাহক সংখ্যা ৪০ হাজার। পুরো বাঁশখালীতে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২৪ মেগাওয়ার্ট। সে তুলানায় বিদ্যুতের ঘাটটিও নেই। বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের জনবল (লাইনম্যান সংখ্যা) ৩১ জন। যা প্রয়োজনের। তুলানায় অনেক কম।'

অফিসসূত্রে আরও জানা যায়, 'বাঁশখালীতে সরাসরি বিদ্যুৎ আসে দোহাজারি গ্রীড হয়ে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। দোহাজারি হয়ে বিদ্যুৎ আসার লাইনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়-বৃষ্টি হলে গাছের ডালপালা বিদ্যুতের লাইনের উপর পড়ে। অনেক সময় প্রবল বাতাসে গাছের গোড়া উপড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে করে বিদ্যুৎ লাইন চেক ও সংযোগ দিতে একটা নির্দিষ্ট সময় লাগে।'

ছনুয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ছানুবী বলেন, 'বাঁশখালী পল্লিবিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে চরমভাবে অতিষ্ট আমরা ছনুয়াবাসী। গেল 'গুর্ণিঝড় শক্তি'র প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টির কারণে লাগাতার দুইদিন ছনুয়া ইউনিয়নে বিদ্যুৎ ছিলো না। গতকাল থেকেও বিদ্যুৎবিহীন ছনুয়া এলাকা। সামান্য বাতাস আর বৃষ্টিপাত শুরু হলে সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুতের দেখা মেলে না। বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম কে ফোন করেও পাওয়া যায় না। এভাবে বিদ্যুৎ বিপর্যয় সভ্যতার যুগে মেনে নেওয়া যায় না।'

বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বৈলছড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম বলেন, 'বাঁশখালীর মতো ঘনঘন লোডশেডিং আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। ঝড় বাদলে দিনের বেশীরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ দায়িত্বশীল আচরণ করলে আমাদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। প্রায় সময় শুনা যায় জনবল সংকটে যথাসময়ে সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটে। আশা করি বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ এ বিষয়ে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন।'

বাঁশখালী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মো. আরিফ উল্লাহ্ জানান, 'প্রায় সময় বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ থাকে না। জনবল সংকটের কারণে দ্রুত সেবা দিতে পারে না তারা। সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকার কারণে সুপেয় পানির সংকটে পড়ে উপজেলার অধিকাংশ জনগণ। অন্তত সে সমস্ত এলাকায় সুপেয় পানি সংকট, কলের মাধ্যমে পানি তুলতে হয় তা চিহ্নিত করে দ্রুত সার্ভিস দিলে দূর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে। সামনে কোরবানীর ঈদ। আশা করবো ঈদকে সামনে রেখে বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন।'

বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম মো. আতিকুর রহমান বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে বাঁশখালীতে লোডশেডিং থাকে না। বিশেষ করে ঝড় বাদলের সময় বিদ্যুৎ লাইনের সমস্যাটা হয়। বাঁশখালীর গুনাগরি থেকে দোহাজারী পর্যন্ত বিদ্যুতের লাইনটি পাহাড়ী এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে। দোহাজারী থেকে নাপোড়া উপকেন্দ্র হয়ে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে বিদ্যুৎ আসে। ঝড় বৃষ্টির সময় গাছ উপড়ে পড়লে লাইন চেক করে বিদ্যুৎ সার্ভিস দিতে হয়। জনবল কম থাকায় সার্ভিস দিতে একটু সমস্যা হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুৎ বোর্ডের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জনবল সংকটের কথা বললেও তারা নতুন সার্কুলারের আশ্বাস দিয়ে যায়, জনবল নিয়োগ দেয় না। এদিকে বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের লাইনের পাশে গাছপালা থাকায় বাতাসে পড়ে গিয়ে লাইনে সমস্যা হয়। তারপরও আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সার্ভিস দিতে অক্রান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার ত্রুটি রাখি না।'

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram