ঢাকা
৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ২:১৮
logo
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪

হাসিনার ইন্ধনে ইজতেমায় বিরোধ, হত্যাকাণ্ড!

তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরকে দায়ী করছে। জুবায়েরপন্থীরা বলছেন, ইজতেমার মাঠে অবস্থানকালে রাত সাড়ে ৩টায় ‘ছুরি, ক্ষুর, হাতুড়ি, ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালান সাদপন্থীরা। আর সাদপন্থীদের দাবি, কামারপাড়া থেকে সুইস গেট পর্যন্ত সড়কে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়ার সময় রাত সাড়ে ৩টার দিকে জুবায়েরপন্থীরা তাদের দিকে ‘ইট-পাটকেল, জলন্ত মশাল’ নিয়ে হামলা করে।

তাবলিগ জামাতের এই দুটি পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর গাজীপুরে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ইজতেমা ময়দানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। খুনিদের তো কোনো অবস্থায়ই ছাড় দেয়ার কোনো অবকাশ নেই। তবে দুই পক্ষ নিজেরা বসেই ইজতেমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক।

তাবলিগ জামাতের ইজতেমা নিয়ে দু’পক্ষের পুরোনো বিরোধ মীমাংসিত। গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা পালন করেন কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা। এরপর ইজতেমা মাঠে ২০ ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা পালনের ঘোষণা দেন দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। তারপরও কেন এই প্রাণঘাতী সংঘর্ষ?

এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে তুমুল আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় বইছে। তাদের অনেকের অভিমত, ইজতেমা ইস্যুতে সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে ভারতের আশ্রয়ে থাকা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার কালো হাত। বিদেশে পাচার করা টাকা খরচ করে পর্দার আড়াল থেকে তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।

প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইজতেমা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের সৃষ্টি হয়। সরকারি একাধিক মন্ত্রী ও কর্মকর্তা দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন এবং সিদ্ধান্ত হয়, পৃথকভাবে টঙ্গী মাঠে ইজতেমা আয়োজন করবে সাদ ও যুবায়েরপন্থিরা। এরপর পরে থেকে দুইপক্ষ দুইবারে ইজতেমা আয়োজন করে আসছে।

এদিকে সরকারি একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ইন্ধন থাকলেও থাকতে পারে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। তাদের ধারণা, ৫ আগস্ট হাসিনা পালানোর পর দিল্লিতে বসে ভারতের সহায়তায় জুডিশিয়াল ক্যু, গার্মেন্টসে অস্থিরতা, পাহাড়ে অশান্তি, আনসারদের দিয়ে সচিবালয় ঘেরাও, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসকন ইস্যু পুঁজি করে বাংলাদেশে একের পর এক অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতে নানা প্রক্রিয়ায় চক্রান্ত করেছেন। ইসকন ইস্যু নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমগুলো এখনো ফেক নিউজ প্রচার করছে। তারই ধারাবাহিকতায় কি টঙ্গীর ইজতেমাকে রক্তাক্ত করার টার্গেট করা হয়েছে।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ‘তথাকথিত প্রগতিশীলতার চেতনাধারী’ একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা যিনি নানা কারণে বিতর্কিত তিনি দুদিন আগে গাজীপুরের পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে টঙ্গীর ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া টঙ্গীর ইজতেমা ইস্যুতে বিবদমান দুই গ্রুপের বিরোধ নিরসনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগকির কমিটির নেতাদের দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অনেকেই বলছেন, ওই সমন্বয়করা কি সরকারের কোনো পদে রয়েছেন? নাকি তারা সরকারের অংশ? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা থাকার পরও ছাত্রনেতারা কার নির্দেশে টঙ্গী গিয়ে সাদপন্থী ও কাকরাইল মসজিদে জুবায়েরপন্থীদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করলেন? সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষক বিতর্কিত ওই উপদেষ্টা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছেন। সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে তিনিই ছাত্রদের ‘কিংস পার্টি’ গঠনে উদ্বুদ্ধ করছেন।

এমতাবস্থায় ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব বলেন, নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের যাবতীয় কার্যক্রম দেশের সর্বস্তরে বন্ধ রাখা উচিত। তাবলিগ জামাতের উভয় গ্রæপের কার্যক্রমের সঙ্গে প্রতিবেশী কিছু বিদেশি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ কার্যক্রম ব্যবহার করে কিছু রাজনৈতিক শক্তি দেশের অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সহজ-সরল তাবলিগ জামাতের উলামায়ে কেরাম ও নেতৃবৃন্দকে বিভ্রান্ত করে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চলছে। এ পরিস্থিতিতে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হবে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram