ঢাকা
১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৯:৫২
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ৩১, ২০২৪

হতাশ বিশ্বজিতের পরিবার: ‘যাদের ক্ষমতা আছে, তারাই বিচার পায়’

‘আমার ভাইকে হত্যার দৃশ্য দুনিয়ার মানুষ দেখেছে। এ হত্যার আলামত, তথ্য-প্রমাণ সব ছিল। কিন্তু নিজেদের লোক হওয়ায় আওয়ামী লীগ বিচার করেনি, এটা স্পষ্ট। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের বাবা হত্যাকাণ্ডের এমন প্রমাণ ছিল না।

তবু নিজের ক্ষমতায় বিচার শেষে রায় কার্যকর করেছে; কিন্তু আমরা তো নিরুপায়। আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই, বিচার কিভাবে পাব? যাদের ক্ষমতা আছে, তারাই বিচার পায়।’ এক যুগ আগে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে দরজি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না পেয়ে বিশ্বজিতের বড় ভাই উত্তম দাস কাছে আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন।

উত্তম দাস আরো বলেন, ‘অনেক দিন ধরে মামলার খবর জানি না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ভাইকে হত্যা করেছে। মামলা থেকে বিচার হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। জজকোর্টে আসামিদের সাজা হলেও হাইকোর্টে গিয়ে সেই রায় পানি হয়ে গেছে।

আসামিরা খালাস পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছে। তবে অন্য দলের কেউ হত্যা করলে ঠিকই বিচার হতো। নিজের দলের (ছাত্রলীগ) জড়িত থাকায় সেটা হয়নি।’

বিচার নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই। যারা আছে তাদের কাছে প্রত্যাশা, আমরা যেন সঠিক বিচার পাই।

আমরা বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার না থাকায় বিচার নিয়ে একটু হলেও সান্ত্বনা পাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ লোক-দেখানো বিচার করেছে উল্লেখ করে বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার ছেলেকে ছাত্রলীগ হত্যা করলেও তাদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর করা হয়নি। তারা বিচারে হস্তক্ষেপ করে ন্যায়বিচার থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছে। নতুন সরকারের কাছে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি, যাতে বেঁচে থাকতে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি। কারণ যারা পুত্র হারিয়েছে তারাই বোঝে পুত্র হারানোর শোক কেমন। এমন ঘটনা যেন বাংলাদেশে আর কখনো না ঘটে সেটাই চাই।’

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের (ভিক্টোরিয়া পার্ক) সামনে বিশ্বজিৎকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শাঁখারীবাজারে দরজির দোকান ছিল বিশ্বজিতের। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারে থাকতেন তিনি।

পরে অজ্ঞাতপরিচয় ২৫ জনকে আসামি করে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল আহমেদ। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম।

২০১৩ সালের ২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচার শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলাটিতে একই ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক এ বি এম নিজামুল হক ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পরে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অন্য দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দেয়।

এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে আপিল করে খালাস পেয়েছিলেন দুজন। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়া হাইকোর্টে খালাস পান। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া চার আসামি হলেন মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, ইমদাদুল হক ও নূরে আলম ওরফে লিমন।

মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয় রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও রাজন তালুকদারের। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে এইচ এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা খালাস পান হাইকোর্টে। বর্তমানে মামলাটি আপিলে বিচারাধীন।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram