জিহাদ রানা, বরিশাল ব্যুরো চীফ: অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) নতুন ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পেলেন ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব এএস এম কাসেমের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পূর্ণকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের পূর্বপর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদে দায়িত্ব প্রদান করা হলো। ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলেও মঙ্গলবারের (১৩ মে) ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে ১৩ মে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. শুচিতা শরমিন, প্রো ভিসি ড. গোলাম রাব্বানি ও ট্রেজারার ড. মো. মামুন অর রশিদকে অপসারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব এএসএম কাসেম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারকে অপসারণের খবরে ওইদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ষ্টাটিজ বিভাগের অধ্যাপক, প্রো-ভিসি ড. গোলাম রাব্বানিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনষ্টিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার এন্ড রিসার্চ বিভাগে এবং ট্রেজারার ড. মো. মামুন অর রশিদকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক বিজ্ঞান বিভাগ, প্রাণী বিজ্ঞান এবং ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ১২ মে রাত থেকে আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ১৩ মে সকালে দুটি প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ববির ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর মোল্লা। সেখানে তিনি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেছেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষক এবং ঢাকা ও বরিশালের গেস্ট হাউজের আহবায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে আরো তিনজন শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
এরমধ্যে সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন। আইকিউএস এর পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. মো. সোহেল চৌধুরী। তিনি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এছাড়া শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মামুনুর রহমান। তিনি অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
উল্লেখ্য, উপাচার্যের ডাকা ৮৭তম সিন্ডিকেট সভাকে অবৈধ দাবি করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাওয়ের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গেট ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় ভিসির নির্দেশে ১৭ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
এরপর মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে উপাচার্যকে একাধিকবার আলটিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে মুচলেকা দেওয়ার শর্তে মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন উপাচার্য। ওই প্রস্তাবের পর ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।
তারপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মাঠে নামেন ববির শিক্ষার্থীরা। গত ৭ মে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তালা দিয়ে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা। পদত্যাগ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেওয়া হয়।
এরইমধ্যে ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে নিয়োগ নিয়ে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির মতামত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে গত ৮ মে ববি উপাচার্যকে অপসারণের প্রস্তাব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
এরপরেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন, ববির শিক্ষকদের একাংশ। সেই ধারাবাহিকতায় গত ১১ মে সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল এবং ১২ মে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে ১৩ মে রাত থেকে শিক্ষার্থীরা আমরন অনশন শুরু করার পাশাপাশি ১৪ মে বিকেলে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা।