ঢাকা
৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:২৩
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ২৪, ২০২৫

স্বেচ্ছাচারিতায় জিম্মি বাংলাদেশের ক্রিকেট

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিসিবির নতুন কমিটির বয়স প্রায় নয় মাস। নতুন কমিটি আসার পর বিসিবির নতুন প্রেসিডেন্ট হন ফারুক আহমেদ। ক্রিকেটপ্রেমীদের আশা ছিল নতুন কমিটি ক্রিকেটকে নিয়ে যাবেন অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি হয়নি বরং মান দিনদিন কমছে। ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ ব্যক্তি নিয়ে ইতিমধ্যে নানা অভিযোগ উঠেছে। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ৯ মাসের নানা গুণকীর্তন বর্ণনা করছেন মিডিয়ার সামনে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তা বলছে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিসিবি প্রধানের দায়িত্বে চমক হয়ে আসা ফারুক আহমেদ তার সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি করেছেন। ক্রিকেট বোর্ডের সব ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপান্তর করেছেন এক বিপিএলের টিকিট বিক্রির মুখোরচক, গোঁজামিলে ভরা তথ্যে। গত কয়েক দিনের অনুসন্ধানে ক্রিকেট বোর্ডের নানা অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।

সূত্রগুলো জানায়, ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফারুক সর্বপ্রথম নজর দেন বিসিবির ১৩০০ কোটির এফডিআরে। স্ট্যান্ডিং কমিটি বণ্টনে কালক্ষেপণ করে নিজের নির্বাহী ক্ষমতা বলে প্রবলেম ব্যাংকে এফডিআর ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করেন তিনি। অনুসন্ধানে প্রবলেমে থাকা দুই ব্যাংকে অবিশ্বাস্য লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। দুটি ব্যাংকের আদি অক্ষর ইংরেজি ‘এম’ দিয়ে। আগস্টে দায়িত্ব নিয়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এই দুই মাসে বিসিবি সভাপতি একটি ব্যাংকে ট্রান্সফার করেন ৫২ কোটি টাকা। শুধু সেপ্টেম্বরেই ৩৩ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা হয় এম আদ্যাক্ষরের আলোচিত আরেকটি ব্যাংকে। যার ২৫ কোটি আবার আসে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে। একই প্রবলেম ব্যাংক পরের মাস অর্থাৎ অক্টোবরে পায় আরও ১৯ কোটি টাকার এফডিআর। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঐ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতা এরকম অস্বাভাবিক লেনদেনে বড় ভূমিকা রাখে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ট্রান্সফারের আগে আলোচিত ঐ ব্যাংকে বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট ছিল মাত্র ৩ কোটি টাকার।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ‘এম’ আদ্যাক্ষরের অপর প্রবলেম ব্যাংকে বর্তমান সভাপতি টাকা ঢুকিয়েছেন আরও বেশি। ঐ ব্যাংকের মালিকানায় আছেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরা। এই ব্যাংকে ফারুক ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন গেল বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর এই চার মাসে। ক্রিকেট বোর্ডের ফান্ড থেকে তিন দফায় এফডিআর করা হয় ১০ কোটি ১৪ কোটি এবং ৩০ কোটি টাকা। এই ৫৪ কোটি টাকার বাইরে বিসিবির বিপিএল অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ১২ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট পায় আলোচিত ‘এম’ আদ্যাক্ষরের ইয়েলো জোনো থাকা দ্বিতীয় ব্যাংক। যে ব্যাংকে ক্রিকেট বোর্ডের মোট ডিপোজিট ১০০ কোটি টাকার বেশি। প্রবলেম ব্যাংক প্রীতির ব্যাপারে বিসিবি থেকে যেন কোনো ন্যূনতম তথ্য বের না হয় তা নিশ্চিতে বোর্ড সভাপতির রুমে ডেকে কর্মকর্তাদের শাসানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু প্রবলেম ব্যাংকে টাকা রাখা নয়, বিসিবি সভাপতি পছন্দের মানুষকে বিপিএলে দলে দেওয়ার ব্যাপারেও ছিলেন মুক্তমনা। আলোচিত সমালোচিত রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি শফিকুর রহমানকে দল দেওয়া হয় প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্তে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল গঠনের আগেই দলবণ্টন সেরে ফেলা হয়। ফরচুন বরিশাল ছাড়া কোনো দল থেকে ব্যাংক গ্যারান্টির টাকাও তুলতে পারেনি বিসিবি। বিসিবি এখন পর্যন্ত বিপিএলে খেলা ক্রিকেটারদের শতভাগ পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে পারেনি। রাজশাহীর ক্রিকেটাররাই এখনো ২৫ পার্সেন্ট পারিশ্রমিক পাননি। সাপোর্ট স্টাফদের অবস্থা আরও খারাপ। ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার চুক্তির টাকা না পেয়ে ম্যাচ বর্জন করেন বিদেশি ক্রিকেটাররা। বাস ড্রাইভার দ্বারা ক্রিকেটারদের কিট ব্যাগ আটকে রাখার ঘটনাও ঘটেছে সর্বশেষ বিপিএলে। উল্লেখ্য, বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ নিজেই।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, আর্থিক ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত ফারুকের মাঠের ক্রিকেটে সময় দেওয়ার একেবারেই ফুরসত নেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের গল্প বলা হলেও সেটি গত বছরের আগস্টের ঘটনা। ফারুক আহমেদ নতুন সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগেই রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই ম্যাচে ফারুকের ইনপুট দেওয়ার কিছু ছিল না। ফারুক আহমেদ বিসিবির দায়িত্ব ঠিকমতো দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর বাংলাদেশ কোনো টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেনি। ৯টি ওয়ানডে খেলে জিতেছে মাত্র ১টায়। এই পারফরম্যান্সের সঙ্গে যোগ হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লজ্জার ওডিআই সিরিজ হার।

এদিকে ব্রডকাস্ট রাইটস বা সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রির বিষয়েও বিসিবি এখন ধুঁকছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা বোর্ড সভাপতি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক প্রদানে চূড়ান্ত ব্যর্থ, মার্কেটিং কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিও নিজ হাতে রেখেছেন। জানা যায়, ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম আয়ের উত্স ব্রডকাস্ট রাইটস। চলমান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজের রাইটস কেনেনি কোনো কনসোর্টিয়াম। ফলে বিটিভি যুগে ফিরে গেছে বিসিবি। প্রসঙ্গত বিসিবির মার্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান খোদ বোর্ড সভাপতি। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করলেও, এখনো অন্তত একটা মিটিংও করতে পারেননি তিনি। নানা ডমেস্টিক টুর্নামেন্টে বিসিবি ক্রিকেটিং প্রোডাক্ট বিক্রিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ, ঘরোয়া লিগ আর বয়সভিত্তিক দলের টাইটেল স্পন্সরশিপ ম্যানেজ করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট দিয়ে।

বাংলাদেশ দল মাঠে ভালো পারফরম্যান্স করতে না পারলেও আট মাসের প্রেসিডেন্সিতে ফারুকের বিদেশ সফরে বিসিবির ব্যয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা। বোর্ড সভাপতি ফারুক তার প্রথম সাধারণ সভায় নিজের ডিএ বাবদ টাকা বাড়িয়ে নেন। হোটেল ভাড়া বাদে বিদেশ সফরে ফারুকের জন্য বিসিবির বরাদ্দ ৫০০ ডলার বা ৬০ হাজার টাকা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালে দলের খেলা দেখতে দুবাই যান বোর্ড সভাপতি। তিনি ঢাকা ছাড়েন ১৯ ফেব্রুয়ারি। ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলে ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি চলে যায়। তবে বোর্ডের টাকায় দেশের খেলা দেখতে যাওয়া বোর্ড সভাপতি থেকে যান দুবাইতেই। সেখানে আরও চার দিন থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ফেরেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশ যখন নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলছিল পাকিস্তানে বোর্ড প্রেসিডেন্ট তখন বিসিবির খরচে আরব আমিরাতে।

সূত্রগুলো জানায়, সর্বশেষ আইসিসি সভায়ও যোগ দিতে জিম্বাবুয়ে যান ফারুক আহমেদ। তবে যাওয়া-আসার পথে ব্যক্তিগত কাজে অবস্থান করেন আরব আমিরাতের দুবাইয়ে, যার খরচও যথারীতি বহন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, বিসিবি এখন চলছে প্রেসিডেন্টর নির্বাহী আদেশে। বিপিএলে একক সিদ্ধান্তে ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া দল বণ্টন, পছন্দের ব্যাংকে ফান্ড ট্রান্সফার, বিসিবির রেগুলার অ্যাকাউন্ট স্ট্যান্ডার্ট চার্টার্ড থেকে দুই দফায় দুই পছন্দের ব্যাংকে সরানো, পিয়নকে এক লাফে নিয়মের তোয়াক্কা না করে কর্মকর্তা বানিয়ে দেওয়া, বোর্ডের গুড বুকে থাকাদের বেতন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, ছাত্রলীগ ক্যাডারকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা বানানো, বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ, টেন্ডার ছাড়াই টিভি রাইটস বিক্রি সব হয়েছে বিগত আট মাসে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram