ঢাকা
২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ১০:২৩
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫

ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া বেআইনি হয়েছে : কলকাতা হাইকোর্ট

বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কারাগারে বন্দি আছেন এক অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালি খাতুন। তাকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে সন্দেহে আটক করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল, তা বেআইনি বলে জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। এই নারীর পাশাপাশি আরো পাঁচজনকেও আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও ঋতব্রত মিত্রর বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে বলে মানবাধিকার কর্মীরা মন্তব্য করেছেন।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা রায় দিয়েছেন, সোনালি খাতুন এবং তার পরিবারের সদস্যদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া বেআইনি ছিল। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া, আদালত দিল্লি পুলিশের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো করার জন্য সমালোচনা করেছেন।

বিচারপতিরা বলেছেন, ‘আইন অনুযায়ী বিদেশি সন্দেহে আটক হলে তার পরিচয় যাচাইয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে।

কিন্তু এই পরিবারকে দুই দিনের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হলো, যা আইনি নিয়মের পরিপন্থী।’ এই রায় পরবর্তী সময়ে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটি বড় জয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রায় চার মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও পরিযায়ী শ্রমিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই অভিযানের ফলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্যান্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা, বিশেষ করে যারা বাংলায় কথা বলেন, তাদের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হচ্ছে।

এমন বহু ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে পশ্চিমবঙ্গের বৈধ বাসিন্দাদেরও ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে আটক করা হয়েছে এবং তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, অন্তত ১৫ জনকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।এই পরিস্থিতিতে, সোনালি খাতুনসহ ছয়জনের মামলা কলকাতা হাইকোর্টে রায় দেওয়ার পর এটি একটি ‘মাইলফলক’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মানবাধিকার কর্মী এবং পরিযায়ী শ্রমিক সংগঠনগুলির মতে, এই রায় পরবর্তী সময়ে রাজ্যগুলোর পুলিশ প্রশাসনকে আরো সতর্ক করবে এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মানুষদের বিরুদ্ধে অবিচার কমবে।

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এই রায়ের পর পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি আখ্যা দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

সোনালি খাতুনসহ দুটি পরিবারের সদস্যরা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত হলেও তাদের ‘বাংলাদেশি’ বলেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।’

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক জানান, এই রায় শ্রমিকদের জন্য একটি বড় স্বস্তি। তিনি বলেন, ‘যারা সীমান্তবর্তী অঞ্চলের শ্রমিক, তাদের এক ভয় থাকে যে তারা বাংলাদেশি সন্দেহে পুশ-আউট হয়ে যাবেন। এই রায়ের ফলে তাদের সেই আতঙ্ক কিছুটা কমবে। কারণ আদালত স্পষ্টভাবে বলেছেন, আইন বহির্ভূতভাবে কাউকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া যাবে না।’

এদিকে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, সোনালি খাতুনের গর্ভাবস্থার কথা তারা জানতেন। তাদের গ্রেপ্তার করার সময়েই আমরা জানতাম যে সোনালি খাতুন অন্তঃসত্ত্বা। আমরা চেষ্টা করেছিলাম যাতে তাদের ফেরত পাঠানো যায়, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। পরে তাদের আদালতে তোলা হয় এবং কারাগারে পাঠানো হয়।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের জেলার মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানিয়েছেন, সোনালি খাতুনের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার বিষয়ে কারাগারের ডাক্তার নজর রাখছেন। আমাদের কাছে হাসপাতাল নেই, তবে ডাক্তার তার নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছেন। প্রয়োজন হলে তাকে বাইরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।

যে ছয়জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে দুটি পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। সোনালি খাতুন, তার স্বামী দানেশ শেখ এবং তাদের ছেলে সাবির শেখ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার পাইকর থানার বাসিন্দা। অন্য পরিবারটির সদস্যরা বীরভূমের মুরারই থানা এলাকার ধিতেরা গ্রাম থেকে এসেছেন। তারা হলেন, সুইটি বিবি, কুরবান শেখ (১৬) এবং ইমাম শেখ (৬)। পশ্চিম দিল্লির কেএন কাটজু মার্গ থানার পুলিশ তাদের আটক করে এবং পরে ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে পাঠায়, যেখানে তাদের ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করা হয়। তবে বীরভূম জেলা পুলিশ একাধিক প্রমাণ সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয় যে তারা ভারতীয় নাগরিক।

পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ যে নথি সংগ্রহ করেছে, তার মধ্যে ১৯৫০, ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকের জমির দলিল রয়েছে, যা সোনালি খাতুন ও তার পরিবারের পূর্বপুরুষদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করে। এই দলিলগুলোর মাধ্যমে তাদের ভারতীয় পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। তবে, এইসব প্রমাণ দাখিল করার আগেই দিল্লি থেকে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram