ঢাকা
৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:০১
logo
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫

ট্রাম্প কি শেষ পর্যন্ত গাজা দখলে নিতে পারবেন?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে ‘দখল’ করে ‘নিজস্বভাবে পরিচালনার’ একটি বিতর্কিত প্রস্তাব দিয়েছেন। তার এই পরিকল্পনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। প্রতিবাদ জানিয়েছে সৌদি আরব, চীন, রাশিয়া, স্পেনসহ বিশ্বের বহু দেশ ও সংগঠন। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প কি শেষ পর্যন্ত গাজা দখলে নিতে পারবেন? ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলে তার এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত?

ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য
গত ৪ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন, আমরা গাজা দখল করবো এবং একে নতুনভাবে গড়ে তুলবো। আমরা সেখানে অবিস্ফোরিত বোমা ও অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করবো এবং দীর্ঘমেয়াদে এর নিয়ন্ত্রণ নেবো। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে গাজায় মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। গাজার জনগণকে উচ্ছেদ করে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা জোরপূর্বক দখল হিসেবে গণ্য হবে, যা জেনেভা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।

ইসরায়েলি হামলায় গাজা এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ১৫ মাসের সংঘাতের পর গাজার দুই-তৃতীয়াংশ অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত। সেখান থেকে অনেক ফিলিস্তিনি হয়তো পালিয়ে যেতে চাইতে পারেন, তবে অনেকেই আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে বা ঐতিহাসিক সংযুক্তির কারণে গাজা ছাড়তে চান না।

গাজার অধিকাংশ বাসিন্দা ১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’ বা মহাবিপর্যয়ের সময় বাস্তুচ্যুত হওয়া ফিলিস্তিনিদের বংশধর, যারা ইসরায়েলের সৃষ্টি ও দখলদারত্বের শিকার হয়েছিলেন। ফলে তাদের জন্য আরেক দফা উচ্ছেদ মেনে নেওয়া কঠিন হবে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি মূলত ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরে যেতে উৎসাহিত করছেন। তবে জোরপূর্বক উচ্ছেদ বা গণ-নির্বাসন আন্তর্জাতিক অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

ট্রাম্প গাজা দখল করতে পারবেন কি?
গাজার ওপর মার্কিন দখল প্রতিষ্ঠার কোনো বৈধতা নেই এবং এটি বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধার মুখোমুখি হতে হবে ট্রাম্পকে-

১. আন্তর্জাতিক আইন: গাজা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। জাতিসংঘের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সদস্য দেশ গাজাকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এখনো এটি স্বীকৃতি না দিলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়া মার্কিন দখল সম্ভব নয়।

২. মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ: গাজায় মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হলে সেটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাতের সূত্রপাত করবে, যা ট্রাম্পের ঘোষিত ‘নো ওয়ার’ নীতির পরিপন্থি। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সামরিক আগ্রাসন এড়ানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাই তার এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশঙ্কা কম।

৩. আরব দেশগুলোর বিরোধিতা: ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার ১৮ লাখ শরণার্থীকে মিশর ও জর্ডানে পুনর্বাসন করা হবে। তবে দুই দেশই এ পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে। আরব বিশ্বে গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের উচ্ছেদ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে।

৪. ইসরায়েলের নীতি: ইসরায়েল গাজাকে এককভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলেও তারা সরাসরি মার্কিন শাসনকে মেনে নেবে কি না তা স্পষ্ট নয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এরই মধ্যে গাজার প্রশাসনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (প্যালেস্টাইনিয়ান অথোরিটি) কোনো ভূমিকা থাকুক, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গাজার ভবিষ্যৎ কী?
গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসনের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা আলোচনায় আছে:

হামাস ও ফাতাহ যৌথ প্রশাসন গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছে।

  • আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে আরব দেশগুলোর সেনা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি সাময়িক প্রশাসন গঠনের পরিকল্পনা আলোচনায় রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram