

মানুষের জীবনে এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলোর প্রভাব সে প্রতিনিয়ত অনুভব করে, কিন্তু গুরুত্ব দিয়ে ভাবেন না। এর মধ্যে অন্যতম হলো নিজের নাম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নামই মানুষের পরিচয়ের প্রতীক। এমনকি মৃত্যুর পরও মানুষ তার নামেই স্মরণীয় হয়ে থাকে।
শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে নামের গুরুত্ব শুধু সামাজিক পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর রয়েছে আখিরাতের সঙ্গেও সম্পর্ক। হাদিসে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন মানুষকে তার নাম ও পিতার নাম ধরে ডাকা হবে (আবু দাউদ)। ফলে শিশুর নামকরণ কোনো সাধারণ বিষয় নয়; বরং এটি একটি ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব।
আধুনিক কালে অনেকেই না বুঝে বা ভুল ধারণায় এমন কিছু নাম সন্তানের জন্য বেছে নেন, যেগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয় বরং কখনো তা ভয়াবহ পরিণতির কারণও হতে পারে।
প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ মামুনুল হক তার নিয়মিত লাইভ প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে বোখারি শরিফের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রসিদ্ধ তাবেয়ি হজরত সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) বর্ণনা করেন তার দাদা একবার নবী করিম (সা.)-এর দরবারে গেলে নবীজি (সা.) জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী?’ তিনি বলেন, আমার নাম হাযান (অর্থাৎ দুঃখ-কষ্ট)। তখন নবীজি (সা.) বলেন, না, তোমার নাম হবে সাহাল (অর্থাৎ সহজ-সরল)। কিন্তু তিনি পিতার দেওয়া নাম পরিবর্তন করতে অস্বীকৃতি জানান।
পরে সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যিব বলেন, তারপর থেকে আমাদের পরিবারে দুঃখ-ক্লেশ যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে।
মামুনুল হক আরও বলেন, মুসলিম শরিফের এক হাদিসে জয়নব বিনতে আবি সালামা বর্ণনা করেন, তার নাম ছিল বাররা (অর্থাৎ পবিত্র)। নবীজি (সা.) এ নাম শুনে বলেন, তোমরা নিজেদের পবিত্রতা নিজেরাই ঘোষণা করো না; আল্লাহই জানেন কে পবিত্র। পরে নবীজি (সা.) তার নাম পরিবর্তন করে জয়নব রাখেন।
এর আলোকে শায়খ মামুনুল হক বলেন, যেসব নামের অর্থ কষ্ট-ক্লেশ বোঝায়, অহংকার প্রকাশ করে বা অপছন্দনীয় বিষয় ফুটে ওঠে, সেসব নাম পরিহার করা উচিত। নামের প্রভাব শুধু ব্যক্তি নয়, তার বংশধরদের ওপরও পড়তে পারে।
একই বিষয়ে ইসলামি বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, অনেকেই এখন ‘আব্দুস সাত্তার’ বা অর্থবহ নামকে ‘পুরোনো’ মনে করে ‘টাল্টু’, ‘বল্টু’, ‘স্ক্রু’ প্রভৃতি নাম রাখেন যা অনুচিত।
তিনি বলেন, নামের অর্থের প্রভাব ব্যক্তির চরিত্রে পড়ে। আপনি যদি টাল্টু নাম রাখেন, তবে সে টাল্টুর মতো লাফালাফিই করতে পারে! তাই পিতা-মাতার উচিত সন্তানের জন্য সুন্দর, অর্থবহ ও ইসলামসম্মত নাম রাখা।

