ঢাকা
৩১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ২:০৩
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ১৩, ২০২৫

রোগীর স্যালাইনে নয়ছয়

দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। রোগী বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে শিরায় দেওয়া স্যালাইনের (ফ্লুইড) চাহিদা। এই সুযোগে বাজারে কম দামে সুঁইবিহীন মানহীন স্যালাইন সরবরাহ করছে ‘লাগেজ পার্টি’র সিন্ডিকেট। সস্তা খুঁজতে গিয়ে বিপদে পড়ছে রোগী, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাননিয়ন্ত্রণ করে স্যালাইন উৎপাদন করা প্রতিষ্ঠানগুলো।

রাজধানীর মিটফোর্ড ও শাহবাগ এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে অপসোনিন, বেক্সিমকো, স্কয়ার, এক্মি, পপুলার, ওরিয়ন, লিব্রাসহ বিভিন্ন দেশিবিদেশি কোম্পানির স্যালাইন পাওয়া যায়। এগুলোর দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে থাকলেও ১৫-২০ টাকায় মানহীন স্যালাইন বিক্রি করা হচ্ছে। দাম কম হওয়ায় মানের চিন্তা না করে অনেক রোগীর স্বজনরা নিয়ে যাচ্ছেন এসব স্যালাইন। মানসম্মত স্যালাইন সেটের মাথায় সুঁই থাকে রোগীর সুরক্ষা ও ফ্লুইড ব্যবস্থাপনার মান ঠিক রাখতে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, যেসব মেডিকেল সামগ্রীতে সুঁই থাকে তার পৃথক অনুমোদন নিতে হয়। বাজারে এখন সুঁইবিহীন স্যালাইন সেট পাওয়া যায় ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন প্রক্রিয়াকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য। যেসব সামগ্রীর অনুমোদন থাকে তার একটি বিক্রিমূল্য নির্ধারিত থাকে। কিন্তু অনুমোদনহীন সামগ্রীতে দাম কিংবা মানের কোনো মানদণ্ড থাকে না। ফলে মানসম্মত স্যালাইন সেট নেওয়ার দিকে অনেকের নজর থাকে না।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘মানহীন স্যালাইন সেটের বিষয়ে আমরা কখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। সব ধরনের মেডিকেল ডিভাইস আমরা নজরদারি করি, কখনো মানহীন স্যালাইন সেট পাইনি।’ চিকিৎসকরা জানান, স্যালাইন সেট যদি পরীক্ষিত না হয় তবে তাতে কতটুকু স্যালাইনের ফোঁটা যাচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট মাত্রা ঠিক থাকে না। যেমন, মানসম্মত স্যালাইন সেটে প্রতি মিলিলিটারে ২০ ফোঁটা হলেও, মানহীন স্যালাইন সেটে প্রতি মিলিমিটারে ১৫ ফোঁটা স্যালাইন আসে। অর্থাৎ বেশি পরিমাণ স্যালাইন যায় রোগীর শরীরে। আবার কোনো কোনো সেটে ২৫ ফোঁটাও হয়, মানে কম স্যালাইন যায়।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন, একজন রোগীর জন্য যে পরিমাণ স্যালাইন প্রতি ঘণ্টায় যাওয়া উচিত, তা সুনির্দিষ্ট করে দেন চিকিৎসক এবং নার্স স্যালাইন পুশ করে পরিমাণ ঠিক করে দেন। যদি ফোঁটা কম-বেশি হয় তাহলে রোগীর অবস্থা ভালো হওয়ার চেয়ে খারাপ হওয়ার শঙ্কাই বেশি। অনেক সময় দেখা যায়, রোগী সময়মতো পর্যাপ্ত স্যালাইন পাচ্ছেন কিন্তু নিম্নমানের স্যালাইন সেটের কারণে শরীরের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বা অতিরিক্ত স্যালাইন গিয়ে জটিলতা বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, একটি গবেষণা করতে গিয়ে আমি বিষয়টি বুঝতে পারি। রোগী সময়মতো স্যালাইন পেয়েছে, রোগীর প্লাটিলেট কমেছে রোগের ধারাবাহিকতায়, কিন্তু রক্ত দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছিল না। এর কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত স্যালাইনের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। থ্রম্বো-ইলাস্টোগ্রাফি মেশিনের মাধ্যমে বিষয়টি সহজেই জানা যায়।’

শুধু রোগী নন বাজারের এসব মানহীন স্যালাইনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মান নিয়ন্ত্রণ করে স্যালাইন উৎপাদন করা প্রতিষ্ঠানগুলো। কম দামে মানহীন স্যালাইন বিক্রি করে একচেটিয়া ব্যবসা করছে অসাধু চক্র। এ ব্যাপারে, জেএমআই গ্রুপের ফাউন্ডার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশের বাইরে থেকে লাগেজ পার্টিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মানহীন ফ্লুইড বাজারে আসছে। মাননিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আমাদের উৎপাদিত ফ্লুইডের দাম তুলনামূলক বেশি হয়। ভোক্তারা তো এই মানের ব্যাপার অতটা জানেন না। তারা যেটা কম দামে পায় সেটাই ফার্মেসি থেকে কিনে নিয়ে যায়। তাই রোগীর সুরক্ষা এবং দেশের মেডিকেল ডিভাইস শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের এ খাতে মনিটরিং বাড়ানো খুব জরুরি।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram