ঢাকা
৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৯:৫৬
logo
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২, ২০২৫

শিক্ষকবিহীন পরীক্ষার হলে হ-য-ব-র-ল

সরকারের তরফ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে গতকাল কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেন সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা, যারা সারা বছর প্রস্তুতি নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা গতকাল বার্ষিক পরীক্ষা নিতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েন। সহকারী শিক্ষকবিহীন পরীক্ষার হলে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। অনেক কেন্দ্রে দেড় ঘণ্টা পরে পরীক্ষা শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা দেখাদেখি করেছে, একজন আরেক জনের খাতা টেনে ছিড়েছে। প্রধান শিক্ষক যে কেন্দ্রে থাকছেন না, সেই কেন্দ্রে ঘটছে বিশৃঙ্খলা। এমন অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলার মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সার্বিক অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সহকারী শিক্ষক অভিভাবকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।

অন্যদিকে চার দফা দাবিতে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। আবার অনেক জায়গায় স্কুল তালাবদ্ধ থাকায় গেট থেকেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে তাদের। নির্ধারিত সময়েও কেন্দ্রগুলোর দরজা না খোলা এবং শিক্ষকরা উপস্থিত না থাকায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, চার দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি এবং দাবি পূরণ না হলে তারা চলমান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে প্রাইমারি ও মাধ্যমিকের যেসব শিক্ষক পরীক্ষা চলাকালে অনুপস্থিত ছিলেন তাদের তালিকা হাতে পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল সকালে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং স্কুল ও কলেজের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান বার্ষিক ও নির্বাচনি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে চিঠি দিয়ে তথ্য চেয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। বিষয়টি অতীব জরুরি উল্লেখ করে দুপুর ১২টার মধ্যে তথ্য দিতে বলা হয়েছিল। চিঠি দিয়ে একই তথ্য চেয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সারা দেশের ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক সংখ্যা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮১। এদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক প্রায় ৩৫ হাজার। বাকি সবাই সহকারী। দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৫। তাদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ১ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৫ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৫৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সারা দেশের ৭২১ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১। দুই স্তরের শিক্ষকদের পৃথকভাবে ৩ দফা ও ৪ দফা দাবি নিয়ে টানা কর্মবিরতির ফলে সারা দেশে পরীক্ষার সূচি ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘমেয়াদি এই অচলাবস্থা শিক্ষাপঞ্জিকে নতুন করে বিপর্যস্ত করে তুলছে। রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে বলে জানান স্কুলটির সিনিয়র শিক্ষক ও বাসমাশিসের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুস সালাম। শেরপুরের সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমিতেও বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত ছিল বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সহকারী শিক্ষক আনিস রহমান। চট্টগ্রামের পটিয়ার আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি বলে জানান স্কুলটি সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ মাহফুজুল আলম। এছাড়া ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, রাজধানীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলসহ বেশ কিছু সরকারি স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার স্থগিত রেখে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেন।

এদিকে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক, নির্বাচনি ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশি। সোমবার অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বা কর্মকর্তার যে কোনো ধরনের শৈথিল্য বা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিঠিটি সব জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।’

আন্দোলনে অনড় প্রাইমারির শিক্ষকরা : গতকাল সারা দেশের বেশির ভাগ স্কুলে সহকারী শিক্ষকরা পরীক্ষার হলে যাননি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রেখে টানা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছেন।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram