ঢাকা
৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:৪৪
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ২৬, ২০২৫

নিয়ম মানছে না বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে না দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আইন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বয়স এক যুগেরও বেশি। বারবার দেওয়া সময় পার হলেও এখনো অনেকে সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি। বেশির ভাগই চলছে ভাড়া বাড়িতে।

অনেকে আবার বাড়ি ভাড়া নিয়ে একাধিক স্থানে খুলেছেন শাখা। কারো জমি কেনা হলেও ভবন নির্মাণের সামর্থ্য হয়নি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে। যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের অর্থিক অনিয়ম, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাত বেশি, আর্টস ফ্যাকাল্টিতে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ডিন নিয়োগ দেওয়া, একই ব্যক্তি ডিন এবং বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন, গবেষণায় অবহেলা, সনদ বাণিজ্যসহ আরো অনেক অভিযোগে অভিযুক্ত দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

নানা অনিয়মে জড়িত থাকায় লাল তালিকাভুক্ত হয়েছে ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি সেই প্রতিবেদনের আলোকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ইউজিসিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে গত ১৬ বছর ধরে উচ্চশিক্ষার সনদ বাণিজ্য ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভর্তি, শ্রেণিকক্ষে পাঠ ও পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। টাকা দিলেই মিলছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সনদ। বলতে গেলে ‘এক হাতে টাকা তো অন্য হাতে সনদ’ ধরিয়ে দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। এক শ্রেণির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই সনদ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে ‘হোম ডেলিভারি’তে সনদ মিলছে।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড বন্ধের সুপারিশ হয়, পরিকল্পনাও হয়, কিন্তু শেষমেশ কাজের কাজ কিছুই হয় না। সনদ বাণিজ্যের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসিও।

‘ইস্ট এশিয়ান ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধান পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বাস্তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও ওয়েবসাইট খুলে দেদার সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অবৈধ এমন কার্যক্রম ও ভুয়া তথ্যে প্রলুব্ধ না হতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, অভিভাবক, চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতাদের সতর্ক করে গত ২১ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ইউজিসি। এর আগে গত ৩০ নভেম্বর দেশের আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে সতর্কবার্তা দিয়েছিল ইউজিসি। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ঢাকা), দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন বেহাল দশা। নানা সংকটে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন মানসম্মত শিক্ষার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেদার সনদ বাণিজ্য হওয়ায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন দপ্তর থেকে ইউজিসিতে (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) আসছে সনদ যাচাইয়ের আবেদন। বিগত সরকারের আমলে লাগামহীনভাবে পরিচালিত হওয়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নজরদারিতে রেখেছে ইউজিসি।

জানা গেছে, বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাসহ দেশ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য দালাল। এরা নানাভাবে সনদ ক্রেতা নিয়ে আসেন। বিনিময়ে বিশেষ কমিশন পান। এছাড়া একশ্রেণির শিক্ষকও সনদ বিক্রির দালালি করেন বলে অভিযোগ আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশের আঁতাঁতের ফলে দেশ জুড়ে সনদের রমরমা বাণিজ্য চলছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা দিলে পাওয়া যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ।

ঢাকায় এমন বিশ্ববিদ্যালয় আছে প্রায় ১৫টি। ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সনদ বাণিজ্যই মূল কর্মকাণ্ড বলে অভিযোগ আছে। অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধের জন্য কিছু বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ লক্ষ করা গেলেও এ ব্যাপারে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বিভিন্ন সময় চিঠি চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে উদ্যোগ। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বেসরকারি সাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি অবৈধ ক্যাম্পাস পুলিশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ক্যাম্পাসও বন্ধ হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে দেশে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশ জুড়ে অবৈধ আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। ইউজিসির কাছে ১৪০টি অবৈধ ক্যাম্পাসের তথ্য আছে বলে সূত্র জানায়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের নিয়ম মেনে চলছে। তবে একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার নামে ব্যাবসায়িক-প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় কখনো ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। আইন না মেনে যেনতেনভাবে আর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মের মধ্যে পরিচালনা করতে সব রকমের উদ্যোগ নেব। আমরা কারো বিরুদ্ধে কঠোর হতে চাই না, তবে নীতিতে অটল থাকব।’

১৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ একেক রকম। ফলে সবার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার হতে পারে। তবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরো কিছুদিন সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram