ঢাকা
১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৩৯
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ১৮, ২০২৫

শোভা রানী খাল এখন শোভাহীন সড়ক

একসময় মুক্ত বাতাস ঢেউ খেলত খালে, কচুরিপানায় লুকিয়ে থাকত স্বাধীনতার গোপন স্রোত। খালের পাশেই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়, শহরের ভেতরে অস্ত্র ও রসদ সরবরাহের পথ। স্থানীয়দের সুবিধার্থে খালটি খনন করেছিলেন শোভা রানী রায় চৌধুরানী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই খালের নামকরণ হয় শোভা রানীর নামে, যিনি মুক্তির স্বপ্নে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিলেন।

আজ সেই খালের অস্তিত্ব এখন শুধু স্মৃতিতে। দখল আর ভরাটের ইট-পাথরের নিচে হারিয়ে গেছে শহীদ শোভা রানীর খাল। যেখানে একদিন বইত মুক্তির স্রোত, সেখানে এখন একটি সরু ড্রেন। যেখানে সামান্য বৃষ্টিতে ভেসে বেড়ায় পলিথিন আর শহরের হাহাকার।

স্বাধীনতার পর সরকারি হিসাবে বরিশাল নগরীতে ২২ থেকে ২৩টি খালের অস্তিত্ব ছিল। তার মধ্যে শোভা রানীর খাল অন্যতম। সাগরদী খাল থেকে চাঁদমারী খালে মিলিত হতো এই খালটি। সরকারি কাগজে এখনো এটি ‘শোভা রানীর খাল’ হিসেবে চিহ্নিত থাকলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব নেই।

সিটি করপোরেশন খালটি হত্যা করে সেখানে সরু ড্রেন করেছে। খালের জমি দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার পাশে তৈরি হয়েছে রাস্তা, কিন্তু তারও অর্ধেক প্রভাবশালীদের দখলে। রাস্তাটির অবস্থাও বেহাল।

সম্প্রতি করপোরেশন ওই এলাকায় অভিযান শুরু করেছে। দখল করা জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনার নকশা বা অনুমোদনের কপি জমা দিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি যেসব স্থাপনা খালের জমির ওপর, সেখানে লাল দাগ টানা হয়েছে। নোটিশের কপি কাছে রক্ষিত আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আকন কুদ্দুস বলেন, `উচ্ছেদের জন্য আগেও একাধিকবার লাল দাগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। কারণ দখলবাজরা সবাই প্রভাবশালী। আগের মেয়রদের ম্যানেজ করেই বেঁচে গেছেন। এখন সাধারণ মানুষের দাবি, খাল ভরাট করে গড়ে উঠা ড্রেনটা প্রশস্ত করা হোক। যাতে করে জলাবদ্ধতা নিরসন হয় পাশাপাশি রাস্তাটাও সংস্কার করা হয়। না হলে বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ভুগতে হয়।’

৭৫ বছরের প্রবীণ বাসিন্দা মো. বজলু বলেন, ‘আশির দশকে কীর্তনখোলা নদী থেকে সাগরদী হয়ে শোভা রানীর খাল হয়ে চাঁদমারী খাল পর্যন্ত নৌকা চলত। আমরা এই খালে মাছ ধরতাম, গোসল করতাম। এখন খাল নেই, রাস্তা হয়েছে, তাও ভাঙাচোরা। ১৫ বছরে কোনো সংস্কার হয়নি। বৃষ্টির দিনে পানি জমে, অ্যাম্বুল্যান্স-ফায়ার সার্ভিস কিছুই ঢুকতে পারে না।’

অন্যদিকে সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলা ২৭ ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করছেন, তাঁরা নিয়ম মেনেই স্থাপনা করেছেন। তৎকালীন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ খালের দক্ষিণ পাশে দীঘিরপাড় এলাকার রাস্তা ও ড্রেন সম্প্রসারণের কাজ করেছিলেন। তবে পরবর্তী মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের সময় দখলমুক্তি ও সংস্কার কাজ আর এগোয়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, ‘শোভা রানীর খাল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত। সরকারি নথিতে এখনো শোভা রানীর খালের জমি খাল হিসেবেই রয়েছে। সেই জমি এখন কোথায় গেছে, তা খুঁজে বের করা জরুরি। দখল উচ্ছেদের পাশাপাশি ড্রেনেজ ও রাস্তা প্রশস্ত করাও প্রয়োজন।’

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, ‘চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে বিআইপি শাখা সড়কের ২৭ জন অবৈধ দখলদারকে অনুমোদিত প্লান দাখিলের অনুরোধ করা হয়েছে। নয়তো নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নিলে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওসার বলেছেন, খাল দখলকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে না নিলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। খুব শিগগিরই শোভা রানীর খালের জমি উদ্ধার ও রাস্তা প্রশস্ত করা হবে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram