ঢাকা
১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:০৭
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ১২, ২০২৫

ঝুকিপূর্ণ ভবনে চলছে স্বাস্থ্যসেবা, পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে মাদকের আখড়া

মোহাম্মদ আবদুর রহিম, কুমিল্লা দক্ষিণ: ভবনের দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ থেকে খসে পড়ছে ফলেপ সামগ্রী। ২ তলা ছাদ বিশিষ্ট এ ভবনেই ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলছে চিকিৎসা সেবা। আর কর্মর্কতারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রোগীদের সেই কাঙ্খিত সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একই হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টার গুলো পরিত্যক্ত হয়েছে বহু আগেই। পরিত্যক্ত এসব কোয়ার্টারে দিন-রাত চলে মাদক আর অসামাজিক কার্যকলাপ। হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আবাসিক কোয়ার্টারের একটি কক্ষে গত কয়েক মাস আগে উদ্ধার করা হয়েছে যুবকের গলাকাটা লাশ। ইতোমধ্যে হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১'শ শয্যায় উন্নিত করার কাজ চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের কিছু অংশ করে কাজ রেখে পালিয়েছে।

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জেলার কয়েকটি উপজেলার মধ্যে অন্যতম। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পার্শ্ববর্তী লালমাই, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলা থেকে শত শত রোগী সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন বহিঃবিভাগে প্রায় ১ হাজার থেকে ১২'শ রোগী সেবা নিতে আসেন। সেবার এ প্রতিষ্ঠানটি নিজেই নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত। ১৯৬৫ সালে স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মিত হয় লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক কোয়ার্টার। এ সব কোয়ার্টার গত কয়েক বছর আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ সব কোয়ার্টারের দরজা-জানালা, পানি ও গ্যাসের পাইপসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গিয়েছে। কোয়ার্টারগুলোতে দিন-রাত মাদকসেবী ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে গত কয়েক বছর আগে ২০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন নির্মাণ করা হয়নি। ফলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা সেবা দিতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার শিকার হয়ে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যায়। আবার কেউ কেউ জেলা শহর ও ঢাকা থেকে এসে সেবা দিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের আবাসিক ভবনের ছাদের কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরে খসে পড়ছে। একই ভবনের দেয়ালের চাপে জানালার গ্রীল বাঁকা হয়ে গিয়েছে। যে কোন সময় ভবনের চাদ বা দেয়াল ধ্বসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।

আবাসিকে ভর্তিকৃত রোগীরা দুর্ঘটনার আশংকার মাঝে সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। নারী রোগীদের ডেলিভারি কক্ষ, টয়লেটের দরজা জানালা বহু আগেই ধ্বসে পড়েছে। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও নাজুক। এছাড়াও চাহিদা মত নেই ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্বর্তন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও কোন প্রতিকার নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত একাধিক রোগী জানায়, চিকিৎসা নিয়ে বাঁচতে এসে হাসপাতালের অবস্থা দেখে আতংকে আছি। কখন ভবনের কোন অংশ ধ্বসে পড়ে মারা যাই। ইতোমধ্যে ভবনের কয়েক স্থানের ফলেপ ধ্বসে পড়ছে। এছাড়াও জরুরি কাজে টয়লেটে গেলে সামনে একজন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। টয়লেটের নেই দরজা।

ডেলিভারিতে আসা রোগীর সাথের এক স্বজনরা রেগেমেগে জানায়, হাসপাতাল নয় এটি যেন উম্মুক্ত গোয়াল ঘর। সন্তান প্রসবে এসে ইজ্জত নিয়ে বাড়ি ফেরা দায়। ডেলিভারি কক্ষে দরজা-জানালা কিছুই নেই।

শিশু ওয়ার্ডে বাচ্চা ভর্তি এক গৃহিণী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাচ্চার পাতলা পায়খানা নিয়ে ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে রাত কাটে আতংকে কখন ভবনের ফাটল অংশ ভেঙ্গে পড়ে।

বহিঃবিভাগে সেবা নিতে আসা একাধিক রোগী জানায়, ডাক্তারদের কক্ষে সেবার জন্য গিয়ে দেখি এক টেবিলে কয়েকজন ডাক্তার বসে আছে। নিজের শারীরিক গোপন সমস্যার কথা বলার কোন সুযোগ থাকে না। প্রাথমিক সমস্যার কথা বলেই ডাক্তারের কক্ষ ত্যাগ করতে হয়।

হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা তো মানুষ নই। দিবারাত্রি কাজ করতে হয়। কিন্তু বিশ্রামের কোন স্থান নেই, নেই কোন আবাসন। ফলে বেতন যা পাই তার মোটা অংশ চলে যায় বাসা বাড়ায়। পরিবার নিয়ে চলা কষ্টসাধ্য।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মঞ্জুমা বেগম বলেন, হাসপাতালে আঘাত রোগীদের কি সেবা দিব, সারাক্ষণ অজানা আতংকে থাকি কখন হাসপাতাল ভবন বা কোন অংশ ধ্বসে পড়ে নিহত বা আহত হয়ে বাসায় ফিরতে হয়।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ কামরুল হাসান রিয়াদ বলেন, হাসপাতালের সমস্যার কোন অন্ত নেই। চিকিৎসা বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের কোন ব্যবস্থা নেই। হাসপাতাল ভবন মেয়াদ উত্তীর্ণ। ইতোমধ্যে ভবনের কয়েক স্থানে ফাটল ধরে খসে পড়ছে। যে কোন সময় ভবন ধ্বসে পড়ে রোগী বা হাসপাতালের কোন ডাক্তার বা কর্মচারী আহত বা নিহত হতে পারে। স্বাস্থ্য বিভাগে সমস্যা নিয়ে জানানো হয়েছে, কোন প্রতিকার নেই।

লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ নাজিয়া বিনতে আলম বলেন, লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বৃহত্তর লাকসামবাসীর স্বাস্থ্য সেবার প্রধান কেন্দ্র। এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার এ হাসপাতাল নিজেই নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ভবনে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে নিজেই আতংকে থাকি। কখন যে কোন অংশ ভেঙ্গে বা ধ্বসে পড়ে নিজে বা রোগী আহত বা নিহত হয়। সেবা দানকারী ডাক্তার বা নার্স অথবা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার নেই। যে সব কোয়ার্টার আছে তা ব্যবহার অনুপযোগী। কোয়ার্টারের দরজা বা জানালা সব চুরি হয়ে গিয়েছে। গেল কয়েক মাস আগে পরিত্যক্ত আবাসিক কোয়ার্টারে অজ্ঞাত যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কোয়ার্টারের আশপাশে বসে দিন-রাত মাদকের আড্ডা। ডাক্তার বা সেবিকারা নিয়মিত অজানা আতংকের মধ্যে সেবা দিয়ে থাকেন।

এছাড়াও রোগীদের আবাসিক পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের ভবনের অধিকাংশ স্থানে ফাটল ধরেছে। কোন কোন স্থানের ফলেপ ধ্বসে পড়েছে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ জানালার গ্রীল বাঁকা হয়ে গিয়েছে। এদিকে হাসপাতাল ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। বহিঃবিভাগ ও ডাক্তারদের আবাসিক কোয়ার্টারের কাজ চলমান অবস্থায় রেখে ঠিকাদার চলে গিয়েছে। চলমান কাজের মালামাল পড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আলী নুর মোহাম্মদ বশির আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram