

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের গৌরীপুর-বেখৈরহাটি আঞ্চলিক সড়কটির বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। এই বর্ষায় সড়কের কোথাও কার্পেটিং উঠে ম্যাকাডম নষ্ট হয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কার্পেটিং উঠে ভাঙাচোরা বা ফাটল দেখা দিয়েছে। কোথাও আবার বিস্তৃত সড়ক জুড়ে খানাখন্দে ভরা। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটির এ করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই আশেপাশের বৃষ্টির পানিও রাস্তায় এসে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় সড়কের বিভিন্ন অংশ। ভাঙ্গা সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গৌরীপুর-বেখৈরহাটি ১৪ কিলোমিটার সড়কের সবচেয়ে বেহাল দশা গৌরীপুর পৌর শহরের বালুয়াপাড়া এলাকায়। বেহাল দশার কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে যানবাহন চালকসহ গৌরীপুর উপজেলা ও নেত্রকোণা জেলার বাসিন্দরা।
জানা যায়, গৌরীপুর পৌরশহরসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া, মদন, খালিয়াজুরী ও আটপাড়া উপজেলার হাজার হাজার যাত্রীসাধারণ ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব-সিলেট যাতায়াতের অন্যতম সড়ক এটি। দফায় দফায় মেরামত করা হলেও দুর্নীতি, অনিয়ম আর নিম্নমানের কাজের জন্য টেকসই হচ্ছে না সড়কটি। ফলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় খানাখন্দ আর জলাবদ্ধতায় প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সড়কটির পৌর এলাকার বালুয়াপাড়া বাজার থেকে পূর্বদিকে বোকাইনগর ইউনিয়ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে অতি বৃষ্টির ফলে বড়বড় গর্তে জলাবদ্ধতার কারণে বিপদজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় হ্যান্ডট্রলি চালক সিরাজ মিয়া বলেন, বুধবার ধানবোঝাই ট্রলি নিয়ে যাওয়ার পথে পৌর এলাকার বালুয়াপাড়া নামক স্থানে গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে তার প্রায় দশ হাজার টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুরে সামিয়া আক্তার পরিবহন নামের যাত্রীবাহী অটোরিকশাটি খানাখন্দে পড়ে গিয়ে উল্টে পড়ে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় বড় ধরনের বিপদ থেকে উদ্ধার হয়। অটোরিকশাচালক ইসলাম বলেন, আমি এ সড়কের নিয়মিত অটোচালক, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দির্ঘদিন ধরে এ সড়কে চলাচলকারী মানুষজন প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম ও স্থানীয় শিক্ষার্থী রাজন জানান, কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এ সড়কের বেহাল দশার ছবি প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা ছাড়াও যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর এর বিভিন্ন ভিডিও পাঠানো হয়েছে।
গৌরীপুর উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জিওবি প্রকল্পের আওতায় মেসার্স জামির ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সড়কের সংস্কার করে। এরপর গৌরীপুর পৌরসভা ও স্থানীয় উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে খানাখন্দক ভরাট করলেও সেগুলো পরিকল্পিত না হওয়ায় তা বেশি দিন টিকেনি।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম বলেন, সড়কটির গুরত্ব বিবেচনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জরুরি ভিত্তিতে একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া আমীন পাপ্পা বলেন, সড়টির বিভিন্ন খানাখন্দকে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে যাত্রীসাধারণের চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটি মেরামতের জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে সাময়িক সময়ের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি।
পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা বলেন, সড়কটি এলজিইডির তত্ত্বাবধানে আছে। যেহেতেু সড়কটিতে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে পৌরসভার তত্ত্বাবধানে সড়কের খানাখন্দ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সাময়িক সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যেই পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীকে আদেশ দিয়েছি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই জনভোগান্তি কমে আসবে।
