ঢাকা
১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:৫৮
logo
প্রকাশিত : জুন ১৬, ২০২৫

নদী ভাঙ্গনে বাস্তুহারা সুখেনের ডিঙ্গি নৌকায় এক যুগের ভাসমান জীবন

শেখ দীন মাহমুদ, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত এক সময়ের প্রমত্তা স্রোতসীনি কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে অনেকের মত বাস্তুহারা সেখানকার মালোপাড়ার বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ সুখেন দম্পতি। ভাঙ্গনের কবলে অন্যরা কোথাও না কোথাও বসতি গড়লেও সহায়-সম্বলহীন সুখেনের পুনর্বাসন হয়েছে নদী বুকের ভাসমান ডিঙ্গি নৌকায়। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ভাসমান জীবন-যাপন করছেন তিনি! নদের ভয়াবহ অব্যাহত ভাঙ্গনের মুখে বসতবাড়ি বিলীন হওয়ার পর ভূমিহীন ভাগ্য বিড়ম্বিত দম্পতি সমতলের যাপিত জীবন থেকে একেবারেই ছিটকে পড়েছেন।

গত সরকারের শাসনামলে কপোতাক্ষ তীরের বোয়ালিয়া মালোপাড়ার পশ্চিম পাড়ে গড়ে ওঠা আশ্রায়ণে মাথা গোজার ঠাঁই চেয়েও ব্যর্থ হন। এরপর আর ডাঙ্গায় ফেরা হয়ে ওঠেনি তাদের। স্ত্রী নমিতাকে নিয়ে সেই থেকে ডিঙ্গি নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৭০ বছর। নদীর বুকে একপ্রকার জনবিচ্ছিন্ন যাপিত জীবনে খেয়ে না খেয়ে কোন রকম দিন কাটছে তাদের।

জীবিকার প্রয়োজনে কপোতাক্ষ ও শিবসা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কখনো কখনো ডাঙ্গায় ফেরা হয়না তাদের। মাটির বুকে জন্ম নেওয়া সুখেনের এখনো আশা একদিন তারাও জীবনের মূল স্রোতে ফিরবেন। তারও এক খন্ড জমি হবে যেখানে ছোট্ট এক চিলতে ঘর বেঁধে অনেকের মত পুনর্বাসিত হবেন ফের সমতলে। আর সে আশা বুকে বেঁধে রাত-দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি তাদের।

বাস্তুহারার পর একমাত্র সম্বল একটি ডিঙ্গি নৌকায় নদীর বুকে ভেসে এক যুগের বেশী সময় পার হচ্ছে তার। জীবিকার মাধ্যম কিংবা মাথা গোজার ঠাঁই বলতে নৌকাই তার সব। যাযাবর বা বেঁদে সম্প্রদায়ের না হয়েও পানিতে ভাসার অভ্যাসটা পুরনো তাই এখন জীবনের সাথে সয়ে গেছে তার জানান, সুখেন ও তার স্ত্রী নমিতা।

সব কিছুই যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে তাদের। দিন শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার তাড়া নেই, বিকেলে চুলা জ্বলে নৌকাতেই। এরপর গোধূলি শেষে সন্ধ্যা নামতেই সোলারের আলোয় আলোকিত হয় নৌকা। এরপর রাতে খাবারের পর ঘুমিয়ে পড়েন তারা। এভাবেই নদীর বুকে জীবন চলছে সুখেন দম্পতির।

বিচিত্র জীবনের অভিজ্ঞতা জানতে সম্প্রতি কথা হয় তাদের সাথে। স্ত্রী নমিতা রানী জানান, স্বামী তার ভাবুক মানুষ। নদীর ভাঙ্গা-গড়ার খেলাকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন তারা। সময় পেলে কিংবা কষ্ট মনে বাসা বাঁধার আগেই নৌকায় আপন মনে একতারা বাজিয়ে বাউল গানে খানিকটা সময় কাটে তাদের। যেখানে শিল্পী ও স্রোতা তারাই। এ যেন নিয়তির নির্মম পরিহাস।

জানা যায়, পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের হিতামপুর বোয়ালিয়া মালোপাড়ায় কপোতাক্ষ নদের তীরে সুখেন বিশ্বাসের এক সময় জমি ও ঘর-বাড়ি ছিলো। কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে সুখেনসহ অনেকের জমিসহ বসত-বাড়ি বিলীন হয়েছে। তবে হত দরিদ্র সুখেনের অন্যত্র জমি কিনে নতুন করে বসতি গড়া হয়ে ওঠেনি।

দাম্পত্য জীবনে তার চার মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে বিদ্যুৎ বিশ্বাস কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। সুখেনের এক মেয়ে কপোতাক্ষ নদের চরে সরকারি জমিতে দো-চালা টিনের ঘর বেঁধে বসবাস করছে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যুৎ বিশ্বাস বোনের ঘরের এক কামরায় উঠেছে। সেখানে সুখেনের স্থান সংকুলান না হওয়ায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই মাছ ধরা ডিঙ্গি নৌকায় বসবাস শুরু করেন।

এক প্রতিক্রিয়ায় সুখেন বলেন, ভয়াবহ আম্ফানে তার নৌকা নদী থেকে উঠিয়ে দুরে আছড়ে ফেলে। এতে একমাত্র অবলম্বন নৌকাটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। তখন, ধার-দেনা করে পেট চালিয়ে ও সুদে ১৫ হাজার টাকায় নৌকাটি ক্রয় করেন। এই নৌকায় ভর করে জাল ফেলে মাছ ধরি, আবার দিন শেষে নৌকাতেই ঘুমাই বলেন সুখেন বিশ্বাস।

এাসের ১৫/২০ দিন কাটে শিবসা নদীতে মাছ ধরে বাকি দিনগুলো নাড়ির টানে কপোতাক্ষে। মাছ ধরে তা বিক্রির পর যা হয় তা দিয়েই চাল-ডাল কিনে দু’ জনের সংসার চালান। রাতে নদীর পাশে গাছের সাথে নৌকার রশি বেঁধে ঘুমান তারা। এভাবে ঝড় বা প্রাকৃতিক দূর্যোগের খবরে খালের ভিতর নৌকা ঢুকিয়ে বেঁধে রাখেন। তবে মাঝে মাঝে বোয়ালিয়া মালোপাড়ায় কপোতাক্ষ নদে এসে মেয়ের বাসায় রান্নার পর নৌকায় নিয়ে খেয়ে নৌকাতেই ঘুমিয়ে পড়েন।

সুখেন বিশ্বাস বলছিলেন, নদীতে তেমন আগের মত মাছ পড়েনা, গোনে পাঁচ শত গ্রাম থেকে এক কেজি আর বে-গোনে দুই-তিন শ’ গ্রাম মাছ পড়ে জালে। এই মাছ বিক্রির পয়সায় কোন রকম খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। তিানি আরো বলেন, গুচ্ছ গ্রামে ঘর চায়িলাম তবে ভাগ্য বিড়ম্বিত হওয়ায় ঘর জোটেনি। বয়স বড়েছে তো-তাই এখন নৌকায় থাকতে ভয় লাগে। ঝড় বৃষ্টিতে কখন কি হয়। আমাদের একটা ঘর দিলে অন্তত নিশ্চিন্তে সমতলের স্বাভাবিক জীবন ধারায় ফিরতে পারতাম বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নৌকা ছাড়ার তাগিদ দেন সুখেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এমনটি হলে পেশার সাথে সঙ্গতি রেখে নদী তীরের আশ্রয়নে খালি ঘর পাওয়া সাপেক্ষে সুখেনের জন্য ঘর বরাদ্দের আশ্বাস দেন তিনি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram