এস আই মল্লিক, ঝিনাইদহ: জারবেরা ফুল চাষে সফলতা পেয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শামিম হোসেন। চলতি বছর প্রায় ১২ বিঘা জমিতে এই ফুল চাষ করছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকে ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তার ফুল চাষের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশা।
কৃষক শামিম হোসেন কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। ২০১৫ সালের দিকে পড়াশোনার পাশাপশি অল্প কিছু জমিতে ফুল চাষ শুরু করলেও এখন তিনি ১২ বিঘা জমিতে জারবেরাসহ কয়েকটি জাতের ফুল চাষ করছেন। তার ফুলচাষ প্রকল্পে স্থায়ীভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ৬ জনের।
শামিম হোসেন জানান, ২০১৫ সালের দিকে পড়াশোনার পাশাপাশি দুই বিঘা জমি নিয়ে গাদাফুল চাষের মাধ্যমে ফুল চাষে যুক্ত হন। পাশাপাশি ফুল কেনা বেচার ব্যবসাও শুরু করেন। এখন তিনি বিদেশী জারবেরা, মামফুল, গাদাফুল, চন্দ্রমল্লিকাসহ প্রায় ১২ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করছেন। ফুলচাষ এবং ফুল ব্যবসায়ী হিসেবে তার বলিডাঙ্গা বাজারে পরিচিতি রয়েছে। গত ২-৩ বছর আগে ফুল চাষ বাড়ানো ও ব্যবসার জন্য তিনি আশা’র আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের ফুল চাষ প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ টাকা ঋণ সহযোগিতা নিয়ে জারবেরার চাষ শুরু করেন। ফুল চাষ ভাল হওয়ায় এখন তিনি ১২ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করছেন।
শামিম হোসনে জানান, এক বিঘা জমিতে জারবেরা ফুল চাষ করতে আনুমানিক প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। ফুল ভাল হলে এখান থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব। একটি জমি থেকে ৩ বছর জারবেরা ফুল সংগ্রহ করা যায়। তিনি আরো জানান, এক বিঘা গাদা ফুল চাষ করতে খরচ হয় ৪০ হাজার টাকার মতো। এখান থেকে এক বছরে লাভ পাওয়া যায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তার ফুল চাষে স্থায়ী ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন ৬ জনের। যাদের মাসিক বেতন দেন ১৫ হাজার টাকা করে। এছাড়াও ফুলের সিজনে আরো অস্থায়ী ভাবে ১০ থেকে ১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়।
আশা’র টেকনিক্যাল অফিসার (কৃষি) কিলন চন্দ্র রায় জানান, তরুণ কৃষি উদ্যেক্তা হিসেবে শামিম হোসেন ঋণ সহযোগিতার পাশাপাশি কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। তার এই ফুল চাষ দেখা দেখি এলাকার অনেক কৃষক ফুল চাষে এগিয়ে আসছে। উদ্যোক্তা হিসেবে যাদের ফুল চাষের জন্য আর্থিক সহযোগিতা দরকার আশা তাদের পাশে আছে।
শামিম হোসেনের প্রতিবেশী রবজেল হোসেন জানান, লেখাপড়া শেষ করে সবাই চাকরীর খোঁজ করে কিন্তু শামিম চাকরীর পিছনে না দৌড়ে ফুল চাষ করেন। আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলচাষ করায় লাভবানও হয়েছেন। এখন তার দেখাদেখি এখাকার অনেকে ফুলচাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তরুণ উদ্যোক্তা শামিম এখন এলাকার কৃষকদের মধ্যে আদর্শ অনুকরণীয়।
আশা’র বালিয়াডাঙ্গা ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান জানান, আশা’র আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের ফুল চাষ প্রকল্পের আওতায় শামিম হোসেনকে প্রথম পর্যায়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ সহযোগিতা করা হয়। সেই টাকা দিয়ে তিনি জারবেরা ফুল চাষ বাড়ান। এরপর ওই টাকা পরিশোধ করেন এবং পরে তাকে ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আরো সাড়ে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়।