ঢাকা
১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৯:০৯
logo
প্রকাশিত : জুন ১৫, ২০২৫

‘অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে’ জিম্মি হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরা, দেখার কেউ নেই

অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা। সিন্ডিকেটের বাইরের কোনও অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে বের হতে পারে না। আর এই সিন্ডিকেটের ফাঁদে আটকে মরদেহ ও রোগী পরিবহনে ভুক্তভোগীদের গুনতে হয় ২-৩ গুন বেশি ভাড়া। বছরের পর বছর এ অনিয়ম চললেও দেখার যেন কেউই নেই!

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কবলে পড়া এক ব্যক্তির সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। চিকিৎসাধীন মায়ের মৃত্যুর পর মরদেহ ফেনীতে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স খুঁজতে গিয়ে সিন্ডিকেটের কবলে পড়েন ভুক্তভোগী ছেলে। ভাড়া ৩ থেকে ৪ হাজার হলেও মায়ের মরদেহ নিতে তাকে গুনতে হয় ১১ হাজার টাকা।

এই ভুক্তভোগীকে বেশ কিছুক্ষণ অনুসরণ করে । দেখা যায় চার-পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পরেও কোনো অ্যাম্বুলেন্স ফেনীতে যেতে রাজি নয়। কারণ, সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করতে পারে না। কোনো চালক রাজি হলে চলে অত্যাচার-হুমকি।

ভুক্তভোগী এই সন্তান জানান, মা মারা গেছে, এখন মরদেহ নেয়ার জন্য গাড়ি লাগবে। কত ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই তারা বলছে এগারো হাজার। অথচ এই রাস্তার সর্বোচ্চ ভাড়া হতে পারে চার হাজার।

তার মতো অন্যদের অভিজ্ঞতাও তিক্ত। আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, মরদেহ বের করতে হবে। কিন্তু হাসপাতালের এরা এত বেশি টাকা চায় যা আমাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব না। তাই একজনকে ম্যানেজ করে দেড় হাজার টাকা দিয়ে মরদেহ মেডিকেলের বাইরে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে চকরিয়াতে নিয়ে যাই।

এদিকে চট্টগ্রাম হাসপাতালে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটকে সুবিধা দিতে অচল ফেলে রাখা হয়েছে সরকারি ৫টি অ্যাম্বুলেন্স। ক্যামেরা দেখে ভুক্তভোগীদের অনেকে তুলে ধরেন সিন্ডিকেটের হয়রানি। রোগীর স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিন্ডিকেটটা কিসের, আমাদের কেন ওদের থেকেই অ্যাম্বুলেন্স নিতে হবে? আমি নাকি বাইরের গাড়ি এখানে আনতে পারবো না? কেন?

বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিতে গেলে এখানে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়। প্রকাশ্যে আটকে রাখা হয়। এই সিন্ডিকেটে হাসপাতালের লোক জড়িত আছে বলেও দাবি ভুক্তভোগীদের।

অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভাররা বলছেন, এখানের ড্রাইভাররা আমাদের বাধা দেয়। রোগী নিয়ে আমরা হাসপাতালে ঢুকতে পারি, কিন্তু বের হওয়া নিষেধ। তাদের মাধ্যমে দামদর চূড়ান্ত হলে রোগী নিতে পারি।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে প্রায় আড়াইশো অ্যাম্বুলেন্স থাকে। ভাড়ার তালিকাও রয়েছে সেখানে। তবে তা মানে না মালিক সমিতি। রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আদায় করে তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া।

তবে, এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে চট্টগ্রাম অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল কবির পলাশ ও যুগ্ম সম্পাদক মো. হাসান। তারা বলছেন, সিন্ডিকেটের কিছু নাই। আমাদের সমিতির কারও কোনও স্বার্থ নেই এখানে। চাইলে আমরা আজই এগুলো ভেঙে দিতে পারি। বেশি ভাড়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, ভাড়ার ক্ষেত্রে সবকিছু হিসেব করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সবার এতো অভিযোগের পরও সিন্ডিকেটের হয়রানি বন্ধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছে না হাসপাতাল কতৃপক্ষ। চমেকের পরিচালক ব্রি. জে. তসলিম উদ্দীন বলেন, আমাদের পার্কিংয়ে এক ঘণ্টা পরপর অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেগুলো অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স আছে, সেগুলো বের করে দেয়ার জন্যও কাজ করছে দায়িত্বরতরা।

চট্টগ্রামের মতো রাজধানীর সরকারি হাসপাতালের চিত্রও এক। শুধু রাজধানী নয়, দেশের প্রায় সব জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোরই একই অবস্থা। এ সব হাসপাতাল থেকে সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে বের হতে পারে না। দামদরের ক্ষেত্রেও এক সিদ্ধান্তেই অটল থাকে ‘অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের’ সদস্যরা। তাই উপায় না পেয়ে তাদের দেয়া দরেই রোগী নিয়ে গন্তব্যে যেতে হয় স্বজনদের।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram