মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি: রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় এক গৃহবধূকে হত্যার ভয় দেখিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ওই নারীর পরিবার মিঠাপুকুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয় পুলিশ। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস পর ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবারের বিরুদ্ধেই আদালতে পাল্টা মামলা করেছেন ধর্ষকের পরিবার।
অভিযুক্ত ধর্ষকের নাম নাঈম হাসান (২৫)। সে উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের রুপসী হাজীপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে। এবং নিষিদ্ধ সংগঠন স্থানীয় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তার সহযোগী ছিলেন একই গ্রামের রতন মিয়ার স্ত্রী শাহ বানু বেগম (৫৫)।
এদিকে ধর্ষকের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এমনকি প্রকাশ্যেই ধর্ষণের ফরেনসিক রিপোর্ট এবং মামলা থেকেও নাম প্রত্যাহারের কথা বলে বেড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ঘিরে ওই গ্রামে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। এমনকি ন্যায্য বিচার পাওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
ধর্ষণের শিকার ওই মেয়ের পরিবারের দাবি, তাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে উল্টো মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও মামলা প্রত্যাহার না করায় উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই আদালতে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ধর্ষণের ফরেনসিক রিপোর্ট মিথ্যা প্রমাণিত করতে ঢাকায় যোগাযোগ এবং মামলার চার্জশিট থেকেও ধর্ষক ও অভিযুক্তদের নাম বাদ দেওয়া হবে বলেও বেড়াচ্ছেন ওই প্রভাবশালী পরিবারের লোকজন।
স্থানীয়রা বলছেন, ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ছেলের পরিবার বিত্তবান হওয়ায় টাকার প্রভাব খাটিয়ে সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। ধর্ষকের পরিবারের করা মামলাটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মামলার এজাহার, ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার খোড়াগাছ রুপসী হাজীপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর মেয়ের সাথে গত ৩ বছর আগে একই উপজেলার ময়েনপুর ফুলচৌকি গ্রামের মাজেদুল ইসলামের ছেলে মনোয়ার হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোই চলছিল। গত ঈদুল ফিতরের আগে স্বামীসহ বাবার বাড়িতে আসেন ওই নারী। ঘটনার দিন চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে পাশের বাড়ির চাচী শাহ বানু বেগম তরকারি কুটে দেওয়ার কথা বলে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে লুকিয়ে থাকা নাঈম হাসান সুযোগ বুঝে মেয়েটির মুখ চেপে ধরে ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। আর মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া চাচী শাহ বানু তখন তার বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাহিরে পাহারা দেন।
ধর্ষণের শিকার মেয়ের ভাষ্যমতে, তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে, হত্যার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন চালায় নাঈম। একপর্যায়ে বাড়ির পথচারীরা ঘরের ভিতর প্রশ্নবিদ্ধ শব্দ শুনতে পেয়ে সন্দেহ হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ততক্ষণে ধর্ষক নাঈম পালিয়ে যায়। পরে দুপুরের দিকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির স্বামী, বাবা ও মা খবর পেয়ে বাড়িতে এসে ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে ধর্ষণের শিকার মেয়ের বাবা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে ২ জনকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি ধর্ষণ মামালা দায়ের করেন। মেয়েটিকে তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয় পুলিশ। ঘটনার প্রায় ১ মাস পর রংপুরের একটি আদালতে ধর্ষণের শিকার মেয়েকে উল্টো চরিত্রহীনা উল্লেখ করে মামলা করেছেন ধর্ষণে সহযোগী শাহ বানু বেগমের ছোট ভাই আশরাফুল ইসলাম। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাবা কৃষি মজুর আইয়ুব আলী বলেন, আমার একটাই মেয়ে। সে অসুস্থ হওয়ায় জামাইসহ কিছুদিনের জন্য আমার বাড়িতে এসেছে। অসুস্থ মেয়েটার উপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। দেশে কি আইন নাই? আমরা গরীব বলে কি বিচার পাবো না?
ধর্ষণে সহযোগী শাহ বানু বেগমের স্বামী রতন মিয়া বলেন, আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। তবে ঘটনার সত্যতা আছে। মেয়েটার বিয়ের আগে থেকে নাঈম ওই মেয়েটার উপর কুদৃষ্টি দিতো। আমি মিথ্যা বলতে পারবো না, মেয়েটাকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।
ধর্ষণে অভিযুক্ত নাঈম পলাতক রয়েছে। তার বাবা খালেক মিয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি মুঠোফোন নাম্বার সংগ্রহ করে কল দিলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এ ঘটনায় একটি ধর্ষণ মামালা হয়েছে। মূল আসামি পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের নজরদারি অব্যাহত আছে। আদালতে মামলার বিষয়ে জানা নেই, নির্দেশনা পেলে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে।