গাজী জয়নাল আবেদীন, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: দেশের একমাত্র মিঠাপানির কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও মৎস্য অভয়ারণ্য হালদা নদীতে অবৈধ ঘের জালের ফাঁদে প্রতিনিয়ত নিধন হচ্ছে মা মাছ। শুধু মা মাছ নয়, এসব ঘের জালে আটকে মারা যাচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিন। এতে করে হালদার জৈববৈচিত্র হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে।
নৌযান, লোকবল ও আর্থিক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে হালদা সুরক্ষা অভিযান। এসব প্রতিকুলতার পরও বিগত জুলাই মাঝামাঝি হতে হতে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হালদা নদী হতে উদ্ধার হয়েছে ৪০ হাজার মিটার ঘের জাল। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে গত একমাসে ৩ দফা অভিযানে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৬ শত ৭৫ মিটার ঘের জাল।
রাউজান উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্রমতে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে উরকিরচর বাদশা বাপের ঘাট হতে ৭৫ মিটার ঘের জাল উদ্ধার করা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ও ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে দুই দিনের অভিযানে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৯ হাজার মিটার ঘের ও কারেন্ট জাল। এরপূর্বে গত ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি দুই দিনের অভিযানে উদ্ধার হয় ৫হাজার ৬ শত মিটার জাল। এসব জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় বলে জানান রাউজান সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন আজাদী।
তিনি বলেন, হালদার পাড়ের মৎস্য শিকারীরা চর ঘের জাল, কারেন্ট জাল ও নানা অবৈধ উপায়ে মৎস্য শিকার করে যাচ্ছে। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের নিজস্ব নৌযান না থাকা, লোকবল সংকটসহ নানা কারণে হালদায় সবসময় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবুও নৌপুলিশের সহায়তায় হালদা সুরক্ষায় সাধ্যমত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। তবে, গত ৫ আগস্টের পর মৎস্য শিকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ১৪ নভেম্বর রাতে অভিযানে গেলে মৎস্য শিকারীরা আমাদের হামলা চালায়।
বাংলাদেশ রিভার ট্রাভেলার্স নেটওয়ার্কের চট্টগ্রাম জেলার সেক্রেটারি জেনারেল মো. মুজিবুল হক বলেন, গত বুধবার রাতে রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সার্বিক তদারকিতে নৌ পুলিশের সহায়তায় রাত সাড়ে ১২ টার দিকে উরকিরচরের বাদশা বাপের ঘাটে অভিযান চালিয়ে ৭৫ মিটার ঘের জাল উদ্ধার করা হয়। এই জাল গুলি ছাড়িয়ে নিতে উরকিরচরের সাজ্জাদ ও রাজু নামের দুই ব্যক্তি হাটহাজারী উপজেলার একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতার রেফারেন্সে নিয়ে তদবির করেন। ৫ আগস্টের পর হালদার পারের মৎস্য শিকারীদের আচরণে বেশ উগ্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের আচরণ অনেকটা মারমুখী হয়ে উঠেছে। তবে, হালদা রক্ষায় নো কম্প্রোমাইজ নীতিতে অটল রাউজান সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন।
হালদা সুরক্ষায় সৃষ্ট পরিস্থিতি হতে উত্তরণে নৌ পুলিশ ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের প্রয়োজনের পাশাপাশি হালদা পাড়ের সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমূহের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির দরকার বলে মনে করেন তিনি।