ছায়েদ আহামেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: হাতিয়া উপজেলা হাসপাতালে ঔষধে ভরপুর থাকলেও রোগীদের প্রয়োজন বা রোগের অবস্থাভেদে ঔষধ পাচ্ছেন না আগত রোগীরা। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো ঔষধে খুবই কম সময়ের ব্যবধান হওয়ায় মেয়াদ পেরিয়ে গেলে তা আর বণ্টন বা ব্যবহার হয়ে উঠেনা। ফলে অপ্রয়োজনীয় ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধে নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করে। যেখানে বিনামূল্যে মানুষকে ঔষুধ সহ চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে। ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরকারি ভাবেই প্রদান করা হয়। যা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ক্রয় ও বিতরণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এর মাঝে যখন কোনো ঔষধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায় কর্তৃপক্ষ তখন তা বাছাই করে সিজারলিস্ট করে। এবং রেজিস্ট্রারে মেয়াদ উত্তীর্ণের কারণও লিপিবদ্ধ করার কথা।
কিন্তু হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, এখানে স্টোর রেজিস্ট্রার ইচ্ছে মাফিক তৈরি করা হয়। ঔষধ আসার পরিমাণ যেমন কাগজ আর বাস্তবতায় অমিল। তেমনি রোগীদের মাঝে বিতরণেও কাগজ কলমের সঙ্গে বাস্তবতায় অমিল থাকে। তাই ঔষধ সরকারের মূল্যবান সম্পদ হলেও তারা কাগজ কলম ঠিক রাখতে অতিরিক্ত ঔষধ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনের আগে সরিয়ে রাখে। আবার রোগীদের মাঝে বন্টনেও করে অনিয়ম। ফলে সময়ে সময়ে সরকারের লাখ লাখ টাকার ঔষধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।
সাধারণ রোগীদের অভিযোগ ৫ টাকা দিয়ে বহিঃবিভাগ থেকে টিকেট কেটেও এনসিডিসি কর্নারে নিয়মিত ঔষধ পাচ্ছেন না। হাসপাতালটির বহিঃবিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৪০০ জন সাধারণ গরীব ও অসহায় রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। তারমধ্যে ৪০-৬০ জন নন কমিনিকেবল ডিসিজ যা দীর্ঘমেয়াদী রোগ- হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস ও বার্ধক্যজনিত রোগী। ডাক্তার এন্টিবায়োটিক ডোজ পুরোপুরি লিখলেও চিকিৎসা গ্রহণকারী সাধারণ মানুষ ঔষধ নেওয়ার জন্য গেলে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি তাদেরকে ২/৩ টা দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। একের অধিক ঔষধ চাইলে রোগীদের সাথে অসৌজন্য ব্যবহারও করেন তিনি।
এমন কিছু অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন 'ফৌজিয়া সাফদার সোহেলী' নামের এক ফেইসবুক একটিভিস্ট। যেখানে তামান্না সান্জু সহ কয়েকজনে এনসিডিসি কর্ণার ইনচার্জ, স্টোর কিপার ও ফার্মাসিস্ট কে দায়ী করে কমেন্ট করেন।
বিভিন্ন অভিযোগের সূত্র ধরে রোববার ও সোমবার সরেজমিন গিয়ে যার প্রমাণও পাওয়া যায়। ঔষধ প্রদানে দায়িত্বরত ব্যক্তি উপজেলার সাগুরিয়া এলাকার আয়শা আক্তার নামের এক রোগীকে বলেন, এখন ঔষধ নাই পরে আসিয়েন। কালাম নামের এক রোগীকে দুইটা এন্টিবায়োটিক দিয়ে এবং বাকি ওষুধ নাই বলে বিদায় করে দেন। শূন্যেরচর ৮নং পৌর ওয়ার্ডের আয়েশা বেগমকেও সামান্য কয়টা ঔষধ দিয়ে রূঢ় আচরণ করে তাড়িয়ে দেন ওষুধ প্রদানকারী উক্ত ব্যক্তি।
অথচ এনসিডিসি (নন কমিউনিকেবল ডিজিস কন্ট্রোল) কর্ণারের ঔষধ এবং সিভিয়ার এ্যকুইট ম্যাল নিউট্রেশনে (স্যাম) ক্যাটাগরির অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য ডিজি হেলথ কর্তৃক প্রেরিত এফ-৭৫ দুধ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আসায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায় বলে দাবি করেন এনসিডিসি কর্ণার ইনচার্জ মানছুরুল হক, স্টোরকিপার আকরাম ও ফার্মাসিস্ট ফিরোজ উদ্দিন।
তারা জানান, ঔষধগুলো লোকাল চাহিদা ব্যতিরেখে ডিজি থেকে তাদের মনমত উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়। ফলে যথাযথ ঔষধের স্থলে প্রয়োজনবিহীন বহু ঔষধে স্টোরভর্তি হয়ে যায়। তাহলে রোগীরা ঔষধ চাইলে সরবরাহ কম কিংবা নাই বলার কারণ সম্পর্কে সদুত্তর দিতে পারেননি দায়িত্বরত এই ব্যক্তিরা।
এছাড়া সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস্ কো.লি. এর সীল ছাড়া অন্যান্য কোম্পানি থেকে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক ক্রয়কৃত প্রায় ঔষধ বাইরে বিক্রি করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে। যদিও তা ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন দায়িত্বশীল এই ব্যক্তিরা।
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা: মানসী রানী সরকার বলেন, অভিযোগসমূহের ব্যাপারে আমি অবগত নই, তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এনসিডিসি এবং স্যাম কর্ণারের অতিরিক্ত ঔষধ প্রেরণের বিষয়ে সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা:মাসুম ইফতেখার জানান, অতিরিক্ত ঔষধ প্রয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঠাতে হবে, কোনো ঔষধ মেয়াদোত্তীর্ণ হবে না। এবং যেকোনো অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান তিনি।