বাগেরহাট প্রতিনিধি: ফলের ভারে নুইয়ে পড়া গাছ গুলোর প্রায় প্রতিটিতেই ধরেছে ১০ থেকে ১৫ কেজি করে বিভিন্ন জাতের কুল। যার কোনটি দেখতে আঙ্গুরের মত আবার কোনটি দেখলে মনে হয় আপেল। রসালো মিষ্টি ও টক-মিষ্টি জাতের এসব কুলের চাষ করেছেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বিষখালী গ্রামের বাসিন্দা সুজন গোলদার। পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা সুজন ৪ বছর আগে শখ ও নিজ পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ২০টি বল সুন্দরী জাতের কুলের চারা রোপণ করেন। ভালো ফলন পাওয়ায় পরের বছর গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বড় পরিসরে কুল বাগান করার পরিকল্পনা করেন তিনি। বর্তমানে সৌখিন এগ্রো নামের তার কুল বাগানে সাড়ে ১৫ বিঘা জমিতে রেড এ্যাপেল, চায়না টক-মিষ্টি, ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি জাতের কুল গাছ রয়েছে ২ হাজার ৪শ টি। এখান থেকেই এ বছর ১৭ থকে ১৮ লাখ টাকার কুল বিক্রির আশা করছেন তিনি।
সৌখিন এগ্রোর মালিক কৃষি উদ্যোক্তা সুজন গোলদার বলেন, ২০২১ সালে শখের বসে খুলনার পাইকগাছা থেকে বল সুন্দরী জাতের ২০টি চারা সংগ্রহ করি। এরপর পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য বসতবাড়ির আঙ্গিনায় চারাগুলো রোপণ করি। ভালো ফলন পাওয়ায় পরের বছর কচুয়া কৃষি অফিস থেকে কুল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং দুটি প্লটে প্রায় ৪ বিঘা জমিতে বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী জাতের ১২০০ চারা রোপণ করি। এরপর থেকে প্রতি বছর আমার জমি ও গাছের সংখ্যা পরিমান বাড়তে থাকে। বর্তমানে সাড়ে ১৫ বিঘা জমিতে রেড এ্যাপেল, চায়না টক-মিষ্টি, ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি জাতের কুল গাছ রয়েছে ২ হাজার ৪শ টি। প্রতিদিন এই বাগান থেকে আমি ১৫ থেকে ২০ মণ কুল সংগ্রহ করছি। ইতিমধ্যে আমার ৮ লাখ টাকার কুল বিক্রি হয়েছে। এখনও গাছে যে পরিমান কুল রয়েছে তাতে এ বছর আমার ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাগান থেকে আকার ভেদে প্রতি মণ কুল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আমার এখানে ১২ জন শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। যারা গাছের পরিচর্যা থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ ও স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া বাগেরহাট সদর ও পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলা থেকেও অনেক পাইকারি কুল ব্যবসায়ী আমার বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে থাকেন।
বাগানে কর্মরত বিষখালি গ্রামের তপন মিস্ত্রি বলেন, আমি গত ৩ বছর যাবত এই বাগানে কাজ করছি। আমরা মূলত কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই শুধুমাত্র জৈব সার যেমন, সরিষা খৈল, ভার্মি কম্পোস্টসহ বিভিন্ন জৈব সার ব্যবহার করে গাছ তৈরি করেছি। এ কারণে আমাদের গাছে ভালো ফলনের পাশাপাশি ফলের সাইজও অনেক বড় হয়।
একই গ্রামের বাসিন্দা কমল বলেন, আমি মূলত সুজনের বাগান দেখতে এসেছি। বাগানে ফল দেখে আসলেই আমি মুগ্ধ হয়েছি। প্রতিটা গাছে এত পরিমাণ ফল হয়েছে যে, ফলের ভারে গাছগুলো নুয়ে পড়েছে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, বাগেরহাট জেলায় কুলকে নতুন সম্ভাবনাময় ফসল হিসাবে দেখছি আমরা। এ বছর জেলায় ৩শ ৩৬ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়েছে। সুজন গোলদার আমাদের কৃষি বিভাগ থেকে কুল চাষের ওপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এরপরে আমরা তাকে এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় সার, কীটনাশক ও চারা দিয়ে সহায়তা করেছি। বাগেরহাট কৃষি বিভাগ সব সময় এ ধরনের উদ্যোক্তাদের পাশে রয়েছে, আগামীতেও থাকবে।