ঢাকা
২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:৫৫
logo
প্রকাশিত : মে ২৫, ২০২৫

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভুল নীতিতে অর্থনীতির খেসারত

ব্যাংকে ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা বা পুলিশ পাঠিয়ে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এই সময়টাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ডলারের দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলেও মত তাঁদের।

এর আগে কমপক্ষে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার মতো খারাপ অবস্থায় চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছিলেন আহসান এইচ মনসুর। এমন বক্তব্যে আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে লাখো গ্রাহক। ফলে সংকট আরও তীব্র হয়। গভর্নরের আট মাস আগের এই বক্তব্যের জের টানছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। দফায় দফায় টাকা ছেপে সহায়তা দেওয়ার পরও এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ডজনখানেক ব্যাংক।

২০২২ সালের ৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে।’ এই ঘোষণার পরও বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকা কয়েকটি ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা ব্যাপক হারে টাকা তুলে নেয়। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে এমন দায়িত্বহীন বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের মূল ভরসাই হলো গ্রাহকের আস্থা।

এভাবে গভর্নরের বেফাঁস মন্তব্য আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভুল নীতিতে ভুগছে দেশের অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক এই কর্মকর্তা সংস্থাটির শর্ত পূরণে উদার নীতি দেখাচ্ছেন। আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার কার্যকর করায় ডলারের দাম বাড়ছে। এর আগে মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার চার দফায় বাড়ানোয় ব্যাংকঋণের সুদহার ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ নেমেছে তলানিতে।

৯৬ টাকার ডলার এখন ব্যবসায়ীদের কিনতে হচ্ছে ১২৩ টাকায়। বিনিময় হার নিয়ে একের পর এক ‘এক্সপেরিমেন্ট’ মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল করার বদলে আরো অস্থিতিশীল করেছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে বেসরকারি খাত। এত দিন ডলারের বাজার নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২ সালের নভেম্বরে মোট রিজার্ভ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ওপরে, যা এখন কমে হয়েছে ২৫.৬৪ বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে ডলারের দাম। কিন্তু আইএমএফের তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পেতে গিয়ে পাকিস্তান সরকার যেসব শর্ত মেনেছে, সেগুলো দেশটির সাধারণ মানুষের জীবনকে আরো দুর্বিষহ করে তুলেছে। আইএমএফের ঋণ পেতে গিয়ে যেন বাংলাদেশেরও তেমন কোনো অবস্থা তৈরি না হয়ে সে বিষয়ে পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে সমস্যা হতো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক একবারও বলেনি যে মার্কেটে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তারা বলছে, বাজারে ডলারের টান পড়লে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করবে। আবার ঘাটতি সৃষ্টি হলে বাজার থেকে ডলার কিনবে। অর্থাৎ এটা ম্যানেজ ফ্লোটিং সিস্টেম। তবে বাজারের স্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত করতে চাইলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভটা আরো শক্তিশালী করা দরকার, যাতে আবার পুরোদমে আমদানি শুরু হলে কোনো অস্থিরতা তৈরি না হয়। আমদানি বাড়লে ডলারের ক্রাইসিস তৈরি হয়, তাই আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা জরুরি।

১৪ মে বাজারভিত্তিক ডলার মূল্য ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। ডলারের দাম বাড়ার তীব্র আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল। আন্ত ব্যাংক, এলসি ও খোলাবাজারে ডলারের দামে তেমন কোনো বড় ধরনের ওঠানামা নেই। তবে খোলাবাজারে সরবরাহ সীমিত থাকায় দাম কিছুটা বেশি। এদিকে ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, বাজারে পর্যাপ্ত ডলার মজুদ রয়েছে এবং বড় কোনো পেমেন্টেও সমস্যা হবে না।

ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান জানান, বাজারে পর্যাপ্ত ডলার আছে, তাই এখন কোনো চাপ নেই। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, বর্তমানে ডলারের চাহিদা কম, তাই বাজারে চাপ নেই। কিন্তু চাহিদা বাড়লে আবারও সংকট দেখা দিতে পারে। তবে আশার কথা হলো, কিছু বিদেশি ঋণ দেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই অর্থ দেশে এলে বাজার আরো স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে খোলাবাজারেও ডলারের অতিরিক্ত উত্তাপ দেখা যায়নি। শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জে ১২৫-১২৬ টাকার মধ্যে ডলার বিক্রি হয়েছে। গুলশানের নাহার, তামিম ও বিকেবি মানি এক্সচেঞ্জে ক্রয় রেট ছিল ১২৪.৫০ টাকা এবং বিক্রয় রেট ছিল ১২৫.৫০ টাকা। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ডলারের সরবরাহ সীমিত হওয়ায় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকছেন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ যদি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না বাড়ে এবং আমদানি চাহিদা আবার বাড়তে থাকে, তবে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ডলার বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া বর্তমান সময়ের জন্য ঠিক আছে। প্রতিটি জিনিস আমরা যদি আজকে খেয়াল করি জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি আইটেমের দাম কম। এর মধ্যে আইএমএফ, এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ফান্ড দিচ্ছে। ফলে আগামী কয়েক দিন বিনিময় হার নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু আশঙ্কার কথা হচ্ছে, ২০২০-২১ সালেও যখন ৪৭ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল, সেটা হঠাৎ করেই ২২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এলো। কারণ জ্বালানি ও কমোডিটির দাম ডবল বা তারও বেশি হয়ে গিয়েছিল। তখন রিজার্ভের ওপর প্রভাব পড়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘যদি আগামী দিনে কোনো বড় দুর্যোগ আসে, তাহলে আমাদের ৫০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে উতরাতে পারব না। এটা খুবই ছোট অঙ্ক। এটাকে পাঁচ-ছয় বিলিয়নে নিয়ে যেতে হবে। বাজারের ওপর দর ছাড়ার পর সঠিক সময়ে যেন দাম পরিবর্তন করা হয়। তা না হলে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। যুক্তরাষ্ট্র রেমিট্যান্সের ওপর ৫ শতাংশ কর বসিয়েছে। এটা হুন্ডি বাড়িয়ে দেবে, যেটা আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। ফলে এখানে কাজ করতে হবে, যেন ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা আসে।’

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের বিনিময় হারকে ২০১৮-১৯ সাল থেকে চেপে ধরা হয়েছিল। সেখান থেকে একটা ফিক্সড জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে বিনিময় হারকে চাপিয়ে রাখা যায় না। এটা বেশিদিন রাখার কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বড় পরিবর্তনের কোনো সময় নেই।’

তথ্য সূত্র- কালের কণ্ঠ।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram