ঢাকা
২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:৪৮
logo
প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৬, ২০২৫

শৈলকুপায় গড়াই নদীর ভাঙ্গনের কবলে মাজদিয়া গ্রাম সহ ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ

মফিজুল ইসলাম, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: পানি কমার সাথে সাথে গড়াই নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে বদলে যাচ্ছে ঝিনাইদহের শৈলকুপার গড়াই নদী পাড়ের দৃশ্যপট। যে কারণে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে গ্রামের পর গ্রামের বেশির ভাগ অংশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীতে। বর্তমানে গড়াই নদীর ভাঙ্গনে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে। নদী পাড়ের বাসিন্দারা বাঁধ নির্মাণে কোন জনপ্রতিনিধি, মেম্বার, চেয়ারম্যান সহ দায়িত্বশীল ও স্থানীয় প্রশাসনের কাউকেই পাচ্ছে না। এমন অবস্থায় ভাঙ্গনকবলিত গ্রামের অসহায় মানুষগুলো হতাশ হয়ে পড়েছে। আবার নিজেরাই মাটি কেটে বস্তায় ভরে কোলে-পিঠে, ঘাড়ে বাঁধিয়ে ফেলছে ভাঙ্গনপাড়ে। এদিকে নিজেদের বসত বাড়ি ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য খাওয়া-দাওয়া, স্বজন-পরিজন, সাংসারিক কাজ ফেলে ভোর হলেই সবাই ঝুড়ি-কোদাল আর বস্তা নিয়ে মাটি কেটে ভাঙ্গনে ফেলছে। ভূমিহীন, অসহায় আর সর্বস্ব হারানো শ্রমজীবী মানুষগুলোর এমন উদ্যোগ এক অভাবনীয় মেলবন্ধনে আবদ্ধ করেছে সবাইকে। কিন্তু তারা জানেনা যেখানে কোটি কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ অত্যাবশ্যক সেখানে এমন বালি-মাটির বস্তা ফেলে কতদিন ঠেকাতে পারবে তাদের বাড়িঘর।

মাজদিয়া গ্রামের সাবেক পোস্টমাস্টার মোসলেম উদ্দিন জানান, গড়াই নদীর ভাঙ্গনে তাদের অনেক জমি বিলীন হয়ে গেছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রামের তার বাড়ি সহ শতাধিক বাড়ি নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যেতে পারে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটে তাদের। অনেক সময় গ্রামের লোকদের ডেকে ভাঙ্গন থেকে বাঁচার জন্য নিজেরাই মাটি কেটে ভাঙ্গন বন্ধ করার চেষ্টা করি। কেউ তো আমাদের পাশে নেই।

এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়াই নদীর অবিরাম ভাঙ্গনে বদলে যাচ্ছে সারুটিয়া, হাকিমপুর ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। গ্রামগুলির মসজিদ-মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর কিছুই আর বাকী থাকছে না। নদীগর্ভে সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। সেইসাথে হুমকির মধ্যে পড়েছে প্রায় ৩৫ কিলোমিটারের মত বেড়িবাঁধ। অব্যাহত ভাঙ্গনে চরম ঝুঁকিতে আছে উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়ুরিয়া থেকে কৃষ্ণনগর, হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা, খুলুমবাড়িয়া, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া, উলুবাড়িয়া ও লাঙ্গলবাঁধ বাজার।

মাজদিয়া গ্রামের সাবেক মেম্বর বকুল বিশ্বাস জানান, শুকনা মৌসুমে একটি প্রভাবশালী মহল নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় নদীতে পানি বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়ে অনেকর বসত ভিটা ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার না হওয়ায় ফাটল ধরে তা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ২ যুগ ধরে একে একে গড়াই নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বদলে গেছে উপজেলার তিন ইউনিয়নের মানচিত্রের বড় একটি অংশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বড়ুরিয়া, কৃষ্ণনগর, খুলুমবাড়ি, মাদলা, কাশিনাথপুর, মাজদিয়া, উলুবাড়িয়া, বন্দেখালি ও লাঙ্গলবাঁধ বাজার। ভিটেবাড়ি, জমিজমা সহায়-সম্বল হারিয়ে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাউবোর প্রধান সেচ খালের ধারে আবার। আবার এলাকার নদীগর্ভে জমা-জমি ও ঘরবাড়ি হারানো অনেক পরিবার নদীর ওপারে কুষ্টিয়া জেলায় জেগে ওঠা চরে জীবনযাপনের জন্য ভূমিহীন হিসাবে আশ্রয় নিয়েছেন। নদীগর্ভে ভিটে-মাটি চাষাবাদের জমি ও সহায়-সম্বল হারানো গৃহহীনরা বেড়িবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদী ভাঙন রূখতে সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।

কৃষ্ণনগরের শামসুল আলম বলেন, গড়াই নদীর তীব্র ভাঙনে আমাদের বাড়ি সহ অনেক বাড়ি ফসলি জমি যে কোন সময় নদীতে বিলিন হতে পারে। খুবই আতংকের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। সহায় সম্বল হারানো বড়লিয়া গ্রামের আঃ করিম বলেন, নদীগর্ভে সবকিছু হারিয়ে পাউবোর একটি মৃতপ্রায় খালের ধারে আশ্রয় নিয়েছি। তিনি জানান, অনেক পরিবারই এভাবে খালের ধারে আশ্রয় নিয়েছে। বড়ুরিয়া থেকে লাঙ্গলবাঁধ বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে নদীতে মিশে গেছে, যা অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস জানান, বড় ধরনের বরাদ্ধ হলে স্থায়ী বাঁধই একমাত্র সমাধান। তাছাড়া নদীর ভাঙ্গন ঠেকানো যাবে না। প্রতিবছর অস্থায়ী কিছু কার্যক্রম চললেও তা সমাধানের পথ না। তাই নদী ভাঙ্গন স্থায়ীভাবে ঠেকানোর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করা হবে।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তা(এসও) সুকর্ণ জানান, ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার জন্য অর্থ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করা হবে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram