জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ফরিদপুর ও কুমিল্লা নামে দুটি নতুন প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের প্রস্তাব তৈরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি; সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার)-এর বৈঠকে।
নিকার বৈঠকে অনুমোদন পেলে প্রস্তাবটি কার্যকর হবে। তবে বৈঠক কবে অনুষ্ঠিত হবে বা আসন্ন নির্বাচনের আগে তা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না- এখনও নিশ্চিত নয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর সরকার ‘প্রাক নিকার সচিব কমিটি’ গঠন করে। কমিটির সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, ভূমি সচিব, অর্থ সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব।
সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী কমিটি বৈঠক করে ফরিদপুর ও কুমিল্লা শহরের নামে নতুন দুটি বিভাগ গঠনের সুপারিশ তৈরি করেছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ফরিদপুর বিভাগে থাকবে- ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলা।
এছাড়া, কুমিল্লা বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হবে- কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা।
এছাড়া, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলাকে ভাগ করে ‘বাঙ্গরা’ নামে নতুন উপজেলা এবং কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে নতুন থানা স্থাপনের প্রস্তাবও দিয়েছে সচিব কমিটি।
নিকার কমিটির উপর নির্ভর করছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
নতুন বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা থানা গঠনের প্রস্তাব বিবেচনা করে নিকার গত ৭ মে সরকার এই কমিটি পুনর্গঠন করে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এই কমিটির আহ্বায়ক। এছাড়া এই কমিটির সদস্য অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিবসহ বেশ কয়েকজন সচিবও এই কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগ গঠন হবে কি না, তা এখন সম্পূর্ণভাবে নিকার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। তবে কমিটির বৈঠক কবে হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, নিকার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো তথ্য নেই। কবে হতে পারে, তাও আগে থেকে বলা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের আগে অনুমোদন অনিশ্চিত
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভাগ ইস্যুতে ইতোমধ্যে কুমিল্লা, নোয়াখালী, শরীয়তপুরসহ কয়েকটি জেলার মানুষ বিভিন্ন দাবি জানাচ্ছেন। বিষয়টি সরকারকে ভাবাচ্ছে। ফলে নির্বাচনের আগে নতুন বিভাগ অনুমোদনের সম্ভাবনা অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, যদি বিভাগ অনুমোদনের পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে নির্বাচনের আগে আর নিকার কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে না। সবকিছুই নির্ভর করছে নিকার কমিটির সিদ্ধান্তের উপর।
ভৌগোলিক ও যাতায়াত সুবিধা বিবেচনায় নতুন দুই বিভাগের প্রস্তাব
‘জনমুখী প্রশাসনের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত পুনর্গঠন’ শিরোনামে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ফরিদপুর ও কুমিল্লা নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের প্রস্তাব দেয়।
কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বর্তমানে দেশে মোট ৮টি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে। ভৌগোলিক ও যাতায়াতের সুবিধা বিবেচনায় কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ গঠনের দাবি বহুদিনের। সেই বিবেচনায় কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুইদ চৌধুরী সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
প্রস্তাবে ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলা নিয়ে ফরিদপুর বিভাগ, এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠনের সুপারিশ করা হয়।
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে কেন্দ্র করে বিভাগ গঠনের দাবি বহু বছরের। এর আগে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিকার বৈঠকে বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েকটি জেলা নিয়ে ‘পদ্মা বিভাগ’ এবং কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে ‘মেঘনা বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উঠেছিল। তবে সে সময়ও প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।