ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষের সময় পাকিস্তানের সমর্থনের জন্য ইসলামাবাদকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, রবিবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপে এই ধন্যবাদ জানান মুসাভি।
রোববার (২৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ।
আলাপে মেজর জেনারেল মুসাভি ইসরাইলের ‘পশ্চিমা মিত্রদের সহায়তায় শুরু করা ১২ দিনের আরোপিত যুদ্ধের’ সময় তেহরানের পাশে থাকার জন্য ইসলামাবাদের নীতিগত অবস্থান ও সংহতিকে স্বাগত জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, এই সংঘাতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাসহ অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। তবে, তিনি দাবি করেন, ইরান পাল্টা হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের আগ্রাসনের জবাব দিতে সক্ষম হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত শত্রু পক্ষকে যুদ্ধবিরতির দিকে যেতে বাধ্য করেছে।
মুসাভি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শুধু সরাসরি যুদ্ধেই অংশ নেয়নি, বরং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা থেকে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে রক্ষা করতে তার পুরো সামরিক সক্ষমতাও ব্যবহার করেছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো মৌখিক এবং সামরিক সহায়তার মাধ্যমে ইসরাইলকে এই আগ্রাসনে সমর্থন দিয়েছে।
গত ১৩ জুন শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে ইসরাইল ইরানে বোমা হামলা চালিয়ে শীর্ষ সামরিক কমান্ডার এবং পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীদের হত্যা করে। জবাবে, ইরানও ইসরাইলি শহরগুলোর দিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
এই সংঘর্ষ এমন সময় শুরু হয় যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু ইসরাইলের লক্ষ্যভিত্তিক হামলা সেই আলোচনা ভেস্তে দেয়। পরে ইরান দখলকৃত অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি’ করার দাবি করে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে অন্তত ৬২৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪,৯০০ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলে ২৮ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটি।
ইসরাইল বলছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা, যদিও তেহরান বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়ে এসেছে যে তারা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করতে চায়।
এই যুদ্ধ ইরান ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর মধ্যকার ইতোমধ্যে টানাপোড়েনের সম্পর্ককে আরও নাড়িয়ে দিয়েছে। ইরান আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসিকে ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ’ এবং ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা না করার অভিযোগ এনে তাদের বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ সপ্তাহে ইরানি সংসদ আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে।