ঢাকা
২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ১০:৫৫
logo
প্রকাশিত : জুন ২৪, ২০২৫

কুমিল্লায় আউটসোর্সিংয়ের অন্তরালে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস নিয়ন্ত্রণে ফ্যাসিবাদ সিন্ডিকেট

শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: কুমিল্লায় আউটসোর্সিংয়ের অন্তরালে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস নিয়ন্ত্রণ করছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের ৮২ জনের একটি সিন্ডিকেট। ২০২২ সালে শীতালক্ষ্যা ফাউন্ডেশন নামের একটি ফ্যাসিস্ট চক্রের মাধ্যমে ওই নির্বাচন অফিসে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তারা।রাজনৈতিক শেল্টারে নিয়োগ পাওয়া এসব ফ্যাসিস্ট নেতাকর্মী সুরক্ষিত থেকে এখনো নির্বাচন অফিস গুলোর নানা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে। শুধু তাই নয় শীতালক্ষ্যার এসব কর্মীরা কুমিল্লা অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় গুলোতে দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে সেবা প্রত্যাশীদেরকে জিম্মি করে চাহিদা অনুসারে ঘুস হাতিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিব এক নির্বাহী আদেশে ওই সাপ্লাই কোম্পানির ৭০ জন কর্মীর নিয়োগ বাতিল করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে তাদের কর্মীরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুসরণ না করে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৮২জন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। শীতালক্ষ্যা ফাউন্ডেশন নামের একটি আওয়ামী লীগ দলীয় কোম্পানির মাধ্যমে তাদেরকে নিয়োগ করা হয়। কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের অধীনে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর জেলার ৮২টি উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে তাদেরকে পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে পদায়ন করা হয়। এসব নেতাকর্মীরা নিয়োগ নিয়েই নির্বাচন কার্যালয় গুলোতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রাজনৈতিক শেল্টারে গড়ে তোলেন দালাল সিন্ডিকেট। সেবা প্রত্যাশীদের জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের সংশোধন, আক্ষরিক সংশোধন, ঠিকানা পরিবর্তন এবং জন্ম নিবন্ধনের নানা কার্যক্রম নিয়ে কাজ করেন এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। নির্বাচন অফিসগুলোতে তারা পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হলেও তারা ওইসব কার্যালয়ে কর্মকর্তার প্রভাব দেখাচ্ছেন। তাদের অনেকেই এখনো ফেসবুকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সরব প্রচারণা চালাচ্ছেন।

কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রাজনৈতিক প্রভাবে ৮২জন আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শীতালক্ষ্যা ফাউন্ডেশন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন কার্যালয় গুলোতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। তারা নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও কৌশলে শীতলক্ষ্যা তাদের ঠিকাদারির মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। চলতি মাসের ৩০শে জুন তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এখন নতুন করে তারা সেখানে বহাল থাকার চেষ্টা করছে। তাদের কাজের কোন অভিজ্ঞতা নেই। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ নিয়ে রাজস্ব থেকে বেতন ভাতা নিচ্ছে। এটা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে এক ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার মত। কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রতিটি পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপত্তা কর্মী ১৬ হাজার টাকা করে বেতন নিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দালালি এবং জাল জালিয়াতির নানা অভিযোগ আসছে। পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপত্তা কর্মী হলেও তাদের চলা ফেরা দেখলে বোঝা যাবে তারা অনেক বড় মাপের অফিসার।

এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত আউটসোর্সিং জনবলের সকল কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাগণ ও সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা/ থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কর্তৃক নিয়মিতভাবে মনিটরিংয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মাসিক ভিত্তিতে মনিটরিং প্রতিবেদন পর্যায়ক্রমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে বলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার নামে বরাদ্দকৃত ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিজ ব্যতীত তৃতীয় কোনো ব্যক্তির নিকট দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের অধীনে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোতে আউটসোর্সিং এর কর্মীরা সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে।

সরেজমিনে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জানা যায়, ওই কার্যালয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কর্মরত ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান আরমান নানা জাল জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সে উপজেলা সদরের ১৫ বছরের এক স্কুল ছাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র সৃজন করেছেন। পরে ওই জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিকাহ রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করা হয়েছে।

জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে কর্মরত শাহীন আলম শাহীন নামের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী সেখানে নানা অনিয়মে জড়িত রয়েছেন। সাবেক এক সংসদ সদস্যের সুপারিশে ওই ছাত্রলীগ কর্মী নিয়োগ লাভ করে পুরো অফিসটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। ৫ আগস্টের পর তার দাপটে হ্রাস পেলেও গোপনে নিয়ন্ত্রণ করছেন দালাল সিন্ডিকেট। পরিচ্ছন্নকর্মীর কাজ করেও এলাকায় বাড়ি ঘর জমি জায়গাসহ অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি এ দালাল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য কৌশলে বিএনপির বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছেন।

জেলার তিতাস উপজেলা নির্বাচন অফিসে কর্মরত আছেন এইচএম আলম নামের এক পরিচ্ছন্ন কর্মী। সে তিতাস সুপার মার্কেটের ইয়াসিন আইটি এন্ড কম্পিউটার সেন্টারে বসে নানান জালজালিয়াতির কাগজপত্র সৃজন করেন। সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের কাজ করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলা নির্বাচন অফিসে তার কর্মস্থল হলেও সে দিনভর ওই কম্পিউটার দোকানে বসেই দালালচক্র নিয়ন্ত্রণসহ নানা জালিয়াতির কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।

জেলার চৌদ্দগ্রামে নির্বাচন অফিসে জসিম উদ্দিন নামের পরিছন্নতা কর্মীর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা ধরনের অভিযোগ। গোটা অফিসের ঘুস অনিয়মের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। অফিসের আইডি পাসওয়ার্ড তার কাছেই রয়েছে। সেবা প্রত্যাশী আসলেই আবেদন দেখে দেখে সে কন্টাক্ট করে কাজ করিয়ে দেন।

অফিসের পাশের মুদি দোকানী ইকবাল হোসেন বলেন, ভোটার আইডি কার্ড সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা নিয়ে সবাই জসীম উদ্দিনের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন। সারাক্ষণ তাকে এদিক সেদিক সেবা প্রত্যাশীদের নিয়ে কথা বলতে দেখি।

জাকির হোসেন নামের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মুরাদনগর উপজেলা নির্বাচন অফিসে সার্ভার নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধনের কন্টাক্ট করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার আবুল হোসেন বলেন, নির্বাচন অফিসে জাকির হোসেনকে আমরা কর্মকর্তা হিসেবেই জানি। আমার আইডি কার্ডের নামের সংশোধন করতে জাকির হোসেনকে ঘুস দিয়েছি। তবে আমি তার সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কাজ হয়ে গেলে টাকা দেওয়ার বিষয়টি কাউকে বলবো না।

তবে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান, শাহিন আলম, এইচএম আলম, জসিম উদ্দিন এবং জাকির হোসেন। তাদের দাবি তারা নিজেদের পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের বাইরে অন্য কোন কিছুর সঙ্গে জড়িত নেই।

শীতালক্ষ্যা ফাউন্ডেশনের কোঅর্ডিনেটর মোঃ এরফান আলী বলেন, আমাদের কর্মীদের কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার বলেন, শীতালক্ষ্যা আউটসোর্সিং সাপ্লাই কোম্পানির ৮২ জন পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপত্তা কর্মী এ আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের আওতায় কর্মরত আছে। তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আমার জানা নেই। তাদের মধ্যে কেউ যদি জাল জালিয়াতি দালালি এবং সেবা প্রত্যাশীদের হয়রানিতে জড়িত থাকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram