যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে হামলার ঘটনায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বেশিরভাগ মিত্র এবং আঞ্চলিক অনেক রাষ্ট্র তীব্র সমালোচনা করলেও, তুরস্ক এখনো সরাসরি এই হামলার নিন্দা জানায়নি। গত শনিবার রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ওয়াশিংটন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এর লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ ক্ষমতা ধ্বংস করা।
ট্রাম্প বলেন, ‘এই হামলা সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত সফল।
ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তেহরানকে শান্তি স্থাপন করতে হবে, নইলে আরো বড় হামলার মুখোমুখি হতে হবে।’
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলার কয়েক ঘণ্টা পর এক বিবৃতিতে সতর্ক করে জানায়, এই হামলা অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিবেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে তুরস্ক গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
চলমান এই ঘটনা আঞ্চলিক সংঘাতকে বিশ্বব্যাপী সংকটে রূপ দিতে পারে। আমরা চাই না এই বিপর্যয়কর পরিণতি বাস্তবে পরিণত হোক।’
এই বিবৃতির সুর আগের দিনের তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বক্তব্য থেকে ছিল অনেকটা ভিন্ন। তিনি তখন ইসরায়েলের চলমান হামলাগুলোকে ‘ডাকাতি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করলেও, তুরস্ক বরাবর কূটনৈতিক সমাধানকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ২০১০ সালে তুরস্ক ও ব্রাজিল মিলে একটি পারমাণবিক জ্বালানি বিনিময় চুক্তির মধ্যস্থতাও করেছিল।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুরাত ইয়েসিলতাস বলেছেন, ‘ইরানের কথিত পারমাণবিক প্রতিরোধ নীতি, যেটিকে দেশটির নেতারা আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বলে ব্যাখ্যা করেন, তা তুরস্কের কাছে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টিভঙ্গি।’ তবে তুরস্কের এই অবস্থান ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতি কোনো সমর্থন নির্দেশ করে না। বরং তুরস্কের মতে, ইসরায়েল যে হামলাগুলো চালাচ্ছে, তা উসকানিমূলক এবং অপ্রয়োজনীয়।
ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের ১৩ জুন থেকে চালানো হামলায় ইরানে ৪৩০ জন নিহত এবং প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের পাল্টা হামলায় ২৫ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে এবং শতাধিক আহত হয়েছে। এরদোয়ান এরইমধ্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করেছেন। তিনি ইস্তানবুলকে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনা স্থল হিসেবে প্রস্তাব করেছেন।
অ্যাক্সিওস-এর প্রতিবেদনের বরাতে তুরস্কের কর্মকর্তারা জানান, এরদোয়ান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে ইস্তানবুলে পাঠাতে ট্রাম্পকে রাজি করিয়েছেন, যেখানে ইরানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির। এমনকি ট্রাম্প নিজেও আলোচনায় অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
তবে শেষ পর্যন্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়নি, কারণ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চলমান সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে সংলাপ। তুরস্ক গঠনমূলক অবদান রাখতে প্রস্তুত।’
নাটোর সদস্য হলেও তুরস্কের ভূরাজনৈতিক কৌশল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাকে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় প্রভাবশালী করে তোলে। এরদোয়ান সাধারণত এই ধরনের সংকটে একপাক্ষিক অবস্থান না নিয়ে মধ্যস্থতা ও উত্তেজনা প্রশমনেই আগ্রহী থাকেন।
সূত্র : মিডিলইস্ট আই