ঢাকা
২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৩:৩৩
logo
প্রকাশিত : জুন ২৫, ২০২৫

বাড়ছে মন্দ ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ঋণ খেলাপির সময়সীমা ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিনে নামিয়ে আনার পর থেকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ সীমিত হওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃ তফসিল কমিটির কার্যক্রমে ধীরগতি। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করে, যারা ইচ্ছাকৃত নয় এমন বড় অঙ্কের (৫০ কোটি টাকা বা তদূর্ধ্ব) খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন যাচাই-বাছাই করবে। তবে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৫৩টি আবেদন জমা পড়লেও কোনো আবেদন চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মাত্র ৫৬টি আবেদন প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন না আসায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ঋণ খেলাপির পরিচয় থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।

একজন আবেদনকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করে কমিটির সভায় আবেদন বাছাই হয়েছে, কিন্তু ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটির সাড়া না পাওয়ায় পুনর্গঠন আটকে আছে। এখনো খেলাপির তালিকায় থেকে যাচ্ছি। ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ধীরগতি, প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন সংকট মিলে দেশের ব্যাংক খাত চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর সিদ্ধান্ত না নিলে এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতির সার্বিক ভিত্তির ওপর এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সাধারণ ভোক্তাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মার্চে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে মন্দ ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা যা মোট খেলাপির ৮৪.৫৪ শতাংশ। ২০২৫ সালের মার্চে এসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা মন্দ ঋণ যা মোট খেলাপির ৮১.৩৮ শতাংশ। এক বছরে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।

এই ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা প্রায় শূন্য হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে এর বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর মুনাফা সে অনুযায়ী না বাড়ায় প্রভিশনের ঘাটতি এখন মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে যেখানে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৫ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকায়। এ সময়ের মধ্যে প্রভিশনের হার কমে এসেছে ৭৬ শতাংশ থেকে মাত্র ৩৮ শতাংশে। অর্থাৎ ৬২ শতাংশ ঋণের বিপরীতে কোনো প্রভিশন নেই, যা ব্যাংক খাতকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে প্রযোজ্য মূলধন রাখতে না পারায় ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, অনেক ব্যাংক স্মরণকালের সর্বনিম্ন মূলধন সংরক্ষণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যয় বেড়েছে এবং বিনিয়োগকারীরাও প্রত্যাশিত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বাড়ছে এবং ভোক্তারা চাপে পড়ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খেলাপি ঋণের পূর্ব ধাপে ‘স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে আরও ৫০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার ঋণ। তিন মাসের মধ্যে এসব ঋণ পরিশোধ না হলে তা ‘নিম্নমান’ ঋণে পরিণত হবে এবং ধাপে ধাপে ‘সন্দেহজনক’ ও শেষে ‘মন্দ’ ঋণে রূপ নেবে। প্রতিটি ধাপে প্রভিশনের হার বাড়তে থাকে বিশেষ হিসেবে ৫ শতাংশ, নিম্নমানে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনকে ৫০ শতাংশ এবং মন্দে ১০০ শতাংশ। এই ধারাবাহিকতাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামীতে খেলাপি ও মন্দ ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram