গৌরীপুর (ময়মনসিহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সন্দ্বীপ চন্দ্র দে সজিব (৪০) শ্বশুড়বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বাজিতপুরের ঘোড়াউত্রা নদীতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হন। মঙ্গলবার (১৭ জুন) নিখোঁজের ৮দিন পেরিয়ে গেলেও জীবিত বা মৃত সন্দ্বীপের সন্ধান মিলেনি। তিনি উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের রামগোপালপুর গ্রামের সুকুমার চন্দ্র দে’র পুত্র।
সন্তান হারিয়ে মা, স্বামী হারিয়ে স্ত্রী ও প্রিয় বাবাকে হারিয়ে সন্তানদের কান্না থামছে না। পুরো পরিবার ও স্বজনদের মাঝে চলছে শোকের মাতম।
নিখোঁজের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত ৯টার দিকে হাওরে আসা ২৫ যাত্রী ও ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে অষ্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিলো ইঞ্জিনচালিত নৌকা। ঘোড়াউত্রা নদী অতিক্রমের সময় ঝড়ো হাওয়ার প্রবল ঢেউয়ে নৌকাটি উল্টে ডুবে যায়। এ সময় অন্যরা সাঁতরিয়ে পাড়ে ফিরেন। তবে সজিব তীরে উঠতে পারে নাই। খবর পেয়ে বাজিতপুর ও ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল পরদিন (বুধবার) সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। কিন্তু বুধবার রাত ৭টা পর্যন্ত তারা নিখোঁজ পর্যটক সজিব ও নিমজ্জিত নৌযানটিও উদ্ধার করতে না পারায় অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করে চলে যায়।
সন্দ্বীপের শ্যালক কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ভাষ্করখিলা গ্রামের সুপ্রিয় কুমার দে জানান, দমকল বাহিনীর ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও স্বজনরা মিলে আশপাশের লোকজন নিয়ে নৌকায় করে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন; কিন্তু সন্দ্বীপ চন্দ্র দে’র হদিস মেলেনি।
এদিকে মিডিয়া কর্মীরা নিখোঁজ সন্দ্বীপের বাড়িতে গেলে মিডিয়া কর্মীদের গলায় জড়িয়ে ধরে কান্না ভেঙে পড়েন তার মা কল্পানা রানী দে। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানকে ফিরিয়ে দিন। আমার ছেলে বলছে, মা আমি আসতেছি, আর তো আসে না। কথাও বলে না। কোথায় লুকিয়ে আছে। তাকে বের করে দিন।
নিহত সন্দ্বীপের দু’কন্যা চৈতী রানী দে ও গৌরী রাণী দে। চৈতী রানী দে রামগোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে জানায়, তার বাবা তাকে বলেছে ছোট বোনটাকে দেখে রাখিস। চারদিকে জল। আর আজ বাবাই জলে হারিয়ে গেছে, প্লিজ বাবাকে খুঁজে দিন।
তার বড় ভাই আরাধন চন্দ্র দে জানান, শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। সেই নৌকায় থাকা ২৫জন ঝড়ের কবলে পড়ে। সাথে তাঁর দুই শালাও ছিলো। সবাই তীরে ফিরলেও সন্দ্বীপ ফিরতে পারে নাই। স্বামীকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী নন্দিতা রানী দে। জ্ঞান ফিরলেই স্বামীকে খুঁজছেন। স্বামীকে হারিয়ে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণার নিশ্চিত করেন বাজিতপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, নদীতে প্রবল স্রোত, কয়েকটি উপজেলার সাথে এ নদীর সংযোগ। তাই আমরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় জেলে এবং এলাকাবাসীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি।