গত বছরের ৫ আগস্টের পর দীর্ঘদিন একধরনের ট্রমার মধ্যে দিয়ে গেছেন পুলিশ সদস্যরা। অনেকে দায়িত্বের বাইরে ছিলেন দীর্ঘ সময়। অনেকে চাকরিতেই আর ফেরেননি। যারা এখন দায়িত্ব পালন করছেন তারাও কাজ করছেন ঝুঁকি নিয়ে। থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট করা অনেক অস্ত্র-গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি। অনেক অস্ত্র চলে গেছে সন্ত্রাসীদের হাতে।
এ অবস্থায় পুলিশকে যদি মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে না দেওয়া হয় তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, সাহস কিংবা ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ কাজ করতে পারবে না। পুলিশ যে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ধরতে অভিযান চালাবে, তাদের নিরাপত্তা কে দেবে। মারণাস্ত্র না থাকলে পুলিশকেই বা অপরাধীরা সমীহ করবে কেন। পুলিশকে মারণাস্ত্র না দেওয়ার চেয়ে কোথায়, কোন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যাবে, অযাচিতভাবে ব্যবহার করলে কী শাস্তি হবে- এসব বিষয়ে ভাবা উচিত। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা তো সমাধান নয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব কথা বলেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন সদস্য বলেন, পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র না দিলে পুলিশ আক্রান্ত হলে সেই দায় কার। পুলিশকে নিরাপত্তা দেবে কে। তখন কি পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে অন্য বাহিনীকে আনা হবে?
গত বছর জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে নির্বিচারে অস্ত্র ব্যবহার করে ভাবমূর্তির সংকটে থাকা পুলিশ বাহিনীকে আর কোনো মারণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোনো মারণাস্ত্র পুলিশের হাতে থাকবে না। শুধু আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে থাকবে। ১২ মে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্য থেকে শুরু করে পুলিশ সদর দপ্তর পর্যন্ত আলোচনা-সমালোচনা চলছেই। আলোচনা শুধু যে পুলিশের মধ্যে সীমাবদ্ধ তা নয়, টেলিভিশনের টকশো কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও পুলিশের মারণাস্ত্র নিয়ে চলছে আলোচনা।
পুলিশ প্রবিধানের ১৫৩ ধারা অনুযায়ী, তিন ক্ষেত্রে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। এগুলো হলো- ব্যক্তির আত্মরক্ষা ও সম্পদ রক্ষার অধিকার প্রয়োগ, বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা ও গ্রেফতার কার্যকর করা।
পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ সদস্যদের বেপরোয়া মারণাস্ত্র ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু যখন পুলিশ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত থাকবে, তখন সরকারের এই সিদ্ধান্ত ‘হিতে বিপরীত হতে পারে’। অপরাধীদের হাতে থাকা আধুনিক অস্ত্রের বিপরীতে শুধু ‘শটগান’ বা খালি হাতে থাকা পুলিশ তাদের মোকাবিলা করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত পুলিশের মনোবল বাড়ানোর পরিবর্তে আরও দুর্বল করে তুলবে। পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। তবে বিক্ষোভ বা আন্দোলন দমনে যেন মারণাস্ত্র ব্যবহার করা না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তারা।
পুলিশ তো শুধু আন্দোলন দমন করে না, সন্ত্রাসী, ডাকাত, অস্ত্রধারী, জঙ্গি, জলদস্যুদের গ্রেফতারে অভিযান করতে হয়। যেখানে এরকম প্রতিটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকে, সেখানে পুলিশ নিরস্ত্র অবস্থায় গিয়ে সফল হতে পারবে না।- বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান তালুকদার
নিরাপত্তা ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে পুলিশের দুর্বলতায় দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। সীমান্ত দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেদারছে অস্ত্র প্রবেশ করেছে দেশে। এসব অস্ত্র সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে চরমপন্থি, জলদস্যু, মাদক গডফাদার, পেশাদার অপরাধী, শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর কাছে রয়েছে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ইতোমধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে।
এছাড়া চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, গোলাগুলির মতো ঘটনা এখন প্রায়শই ঘটছে। নিরাপত্তা শঙ্কায় লুট হওয়া ও হদিস না পাওয়া অস্ত্র উদ্ধার জরুরি। তাই অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের মতো অন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হলে অবশ্যই পুলিশকে নিজের নিরাপত্তার জন্য মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। তবে বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলন, জমায়েতের মতো ঘটনায় মারণাস্ত্র ব্যবহার না করাই উত্তম।
পুলিশের হাতে কোন ধরনের অস্ত্র রাখা যাবে, কীভাবে কাজ করবে, সেসব বিষয় ঠিক করতে এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পুলিশের লুট হওয়া ১৩৬৯ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগ ও হামলা করে। থানা ও ফাঁড়িতে হামলার পর ৫ হাজার ৭৫৩ অস্ত্র ও ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টি গোলাবারুদ লুট করে দুর্বৃত্তরা। ৩ সেপ্টেম্বর ছিল অস্ত্র-গোলাবারুদ জমা দেওয়ার শেষ দিন। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর থেকে লুট ও অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। অভিযানের পরও উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৩৬৯টি অস্ত্র।
চায়না রাইফেল লুণ্ঠিত হয় ১ হাজার ১০৬টি, উদ্ধার ৯৯১টি। রাইফেল-টি লুণ্ঠিত হয় ১২টি, উদ্ধার ১১টি। এসএমজি-টি ৫৬ লুণ্ঠিত হয় ২৫১টি, উদ্ধার ২২১টি। এলএমজি-টি ৫৬ লুণ্ঠিত হয় ৩৪টি, উদ্ধার ৩১টি, উদ্ধার হয়নি তিনটি। পিস্তল-টি ৫৪ লুণ্ঠিত হয় ৫৩৯টি, উদ্ধার ৩২৫টি। মি.মি পিস্তল লুণ্ঠিত হয় ১ হাজার ৯২টি, উদ্ধার ৬৩০টি। এসএমটি লুণ্ঠিত হয় ৩৩টি, উদ্ধার ৩৩টি। বোর শটগান লুণ্ঠিত হয় ২ হাজার ৭৯টি, উদ্ধার ১ হাজার ৬৭৫টি। গ্যাসগান লুণ্ঠিত হয় ৫৮৯টি, উদ্ধার ৪৫৮টি। টিয়ারগ্যাস লাঞ্চার লুণ্ঠিত হয় ১৫টি, উদ্ধার ৮টি। সিগন্যাল পিস্তল লুণ্ঠিত হয় তিনটি, উদ্ধার একটি।
গোলাবারুদ লুট হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টি, এখন পর্যন্ত উদ্ধার ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭টি।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র ব্যবহারের প্রাধিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে। মাঠপর্যায়ে যে কোনো পুলিশি কার্যক্রম যেন ঝুঁকিমুক্ত থাকে সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অস্ত্রের প্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়। কাজেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা তৈরি হওয়ার বিষয়টি অমূলক। চিহ্নিত দুর্ধর্ষ অপরাধী, চরমপন্থি বা সশস্ত্র বিদ্রোহপ্রবণ (ইমারজেন্সি) এলাকায় পুলিশি কার্যক্রমের সময় অবশ্যই যথাযথ অস্ত্র ব্যবহারের জন্য পুলিশ প্রাধিকারপ্রাপ্ত।
পুলিশ বাহিনীতে যোগদানে তৈরি হতে পারে অনীহা
একটি জেলায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসআই পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, এখনো পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। সরকারের নির্দেশনা থাকলেও আওয়ামী লীগের অনেকেই এখনো অস্ত্র জমা দেয়নি। অপরাধীদের কাছে অগ্নেয়াস্ত্র থাকলে তারা আরও বেশি হিংস্র হয়ে ওঠে। তাদের প্রতিহত করতে যদি পুলিশের নিজের কাছেই অস্ত্র না থাকে তাহলে কীভাবে অপারেশনে যাবে। এসব দিক চিন্তা করে ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের সংখ্যা কমে যাবে।
পুলিশ বাহিনীকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। তাদের যদি শক্তি প্রয়োগ করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে আইনশৃঙ্খলা ও তদন্ত ঠিকমতো করতে পারবে না। মাঠপর্যায়ে কীভাবে কার্যকর হবে বাস্তবে তা পরিষ্কার করা হয়নি। এক কথায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলে প্রায়োগিক পর্যায়ে অনেক সমস্যা হতে পারে।- সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা
ডিএমপির অন্তত পাঁচটি থানার দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১২ মে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কোনো নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে দেওয়া হয়নি। তবে কোনো কোনো থানা পুলিশ টহল ডিউটিসহ নিয়মিত কার্যক্রমে শুধু শটগান নিয়ে বের হচ্ছে। অন্য কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নিচ্ছে না।
মারণাস্ত্র না থাকলে আত্মরক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে পুলিশ
পুলিশের সাবেক এক ডিআইজি বলেন, সন্ত্রাসীরা যখন জানবে পুলিশের কাছে শুধু শটগান আছে, তখন তো তারা পেয়ে বসবে। পুলিশ তাদের কাবু করতে পারবে না। উল্টো পুলিশ নিজে আক্রান্ত হবে। মারণাস্ত্র না থাকলে পুলিশ আত্মরক্ষার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হবে।
খুলনা রেঞ্জের একজন এসআই বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মোটেও পজিটিভ নয়। যে মুহূর্তে পুলিশেরই বৈধ কয়েক হাজার অস্ত্র লুট হয়েছে, সেই মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত পুলিশের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়াবে। আইনে অস্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। অবৈধভাবে ব্যবহারের সুযোগ নেই। যদি কেউ অন্যায়ভাবে ব্যবহারের আদেশ দেয় এবং কেউ তা পালন করে তিনি আইনের আওতায় আসতে পারেন।
তিনি বলেন, মাঠের পুলিশ সদস্যদের মনোবল দুর্বল হবে বলে মনে করছেন অনেকে। পুলিশ ঝুঁকি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব থেকে সরে গা বাঁচিয়ে ডিউটি করবে। সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। বাংলাদেশ তো আর সুইজারল্যান্ড বা ফিনল্যান্ড না। যে দেশে নরমাল মোটরসাইকেল চেক করে আসামি থানায় আনলে থানায় আক্রমণ করে সে দেশে পুলিশকে এভাবে নিরস্ত্র করলে পাবলিক পুলিশের প্রতি আরও বেপরোয়া হবে। তখন পরিস্থতি কোন দিকে যাবে সেটাও চিন্তা করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘বিরোধীদের আন্দোলন দমনে যেন মারণাস্ত্র ব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গত সরকারের আমলে এর ব্যবহার বিপজ্জনক হারে হয়েছে। পুলিশ তো শুধু আন্দোলন দমন করে না, সন্ত্রাসী, ডাকাত, অস্ত্রধারী, জঙ্গি, জলদস্যুদের গ্রেফতারে অভিযান করতে হয়। যেখানে এরকম প্রতিটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকে, সেখানে পুলিশ নিরস্ত্র অবস্থায় গিয়ে সফল হতে পারবে না।’
পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকা না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অস্ত্র থাকলেই ব্যবহার করা যাবে, এমন নয়। ব্যবহার না করলেও সঙ্গে অস্ত্র থাকা একটা শক্তি, অপরাধীদের জন্যও এটা একটা ভয়। এখন অস্ত্র না থাকলে সেই ভয়টাও থাকবে না, একই সঙ্গে পুলিশের মনোবলও ভেঙে যাবে।’
পুলিশের অস্ত্রের বিষয়ে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। পুলিশ বাহিনী একটি শক্তি প্রয়োগকারী আইনানুগ প্রতিষ্ঠান। তাদের যদি শক্তি প্রয়োগ করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে আইনশৃঙ্খলা ও তদন্ত ঠিকমতো করতে পারবে না। মাঠ পর্যায়ে কীভাবে কার্যকর হবে বাস্তবে তা পরিষ্কার করা হয়নি। একটি কমিটি হয়েছে তারা পরিষ্কার করুক তখন বোঝা যাবে। এক কথায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলে প্রায়োগিক পর্যায়ে অনেক সমস্যা হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মূল সমস্যা অস্ত্র নয়, অস্ত্র ব্যবহারের কৌশল, নীতি এবং ব্যবস্থাপনা জরুরি। মারণাস্ত্রের অপব্যবহার রোধ করার বন্দোবস্ত থাকলে অপব্যবহার কম হবে। যারা করবে তারাও আইনের আওতায় আসবে, জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।’
দেশের আইনে যা আছে
পুলিশ প্রবিধানের ১৫৩ ধারা অনুযায়ী, তিন ক্ষেত্রে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। এগুলো হলো- ব্যক্তির আত্মরক্ষা ও সম্পদ রক্ষার অধিকার প্রয়োগ, বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা ও গ্রেফতার কার্যকর করা।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ১০০ ও ১০৩ ধারা অনুযায়ী, প্রাণহানি, মারাত্মক আঘাত ও অগ্নিসংযোগের দ্বারা অনিষ্ট করাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশকে আক্রমণকারীদের মৃত্যু ঘটানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধান (পিআরবি) ১৫৩-তে বলা হয়েছে, নিজেদের (পুলিশের), জনগণের ও সরকারি সম্পত্তি হামলা থেকে রক্ষার জন্য পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করতে পারে।
তবে দণ্ডবিধির ৯৯ ধারায় এই শক্তি প্রয়োগের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, আত্মরক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করা যাবে না। তাছাড়া দণ্ডবিধির ১০২ ধারা অনুযায়ী, যখনই ক্ষতির আশঙ্কা শেষ হবে, তখনই আত্মরক্ষার জন্য শক্তি প্রয়োগের অধিকারও শেষ হবে।
কোনো সমাবেশ যদি বেআইনিও হয়, তাহলে তা ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি করার আগে হুঁশিয়ারি (ওয়ার্নিং) দেওয়ার বিধান রয়েছে পুলিশ প্রবিধানে। প্রবিধান ১৫৩ (গ)-তে বলা হয়েছে, সব ধরনের চেষ্টা ও ব্যবস্থার পরও যখন জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য একান্তভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে, তখন সবশেষ ব্যবস্থা হিসেবে গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। তবে পিআরবিতে এটিকে চরম ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
পুলিশ প্রবিধান ১৫৪-তে উল্লেখ করা হয়েছে, গুলি সব সময় নির্ধারিত লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতে হবে; একেবারে অপরিহার্য ব্যতীত কোনোরূপ বড় রকম ক্ষতি সাধন করা যাবে না এবং উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া মাত্রই গুলি বন্ধ করতে হবে।
কীভাবে গুলি করা যাবে, সে বিষয়েও পুলিশ প্রবিধানের ১৫৫-তে আছে, গুলি চালানোর নির্দেশ দানকারী কর্মকর্তা গুলিবর্ষণকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন, যাতে সর্বনিম্ন ক্ষতিসাধন করে দ্রুত উদ্দেশ্য পূরণ করা যায়। সমবেত জনতার মাথার ওপর দিয়ে অথবা সমাবেশে থাকা ব্যক্তিদের বাইরে অন্য কোনো লক্ষ্যে গুলি করা কঠোরভাবে নিষেধ। কারণ, এতে দূরবর্তী নিরপরাধ লোক হতাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার আগে দূরত্ব, লক্ষ্য ও গুলির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এছাড়া জনতার সরে যাওয়া ও ছত্রভঙ্গ হওয়ার সামান্যতম প্রবণতা থাকলেও গুলি চালানো বন্ধের নির্দেশনা আছে পিআরবিতে।