ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার দখল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, শান্তি আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য মি. জেলেনস্কিই দায়ী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশালে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধের জন্য শান্তি চুক্তি আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছিলো। কিন্তু ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে এই যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবেন।
ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল, জরুরি বৈঠকে নেতানিয়াহু
এর আগে, মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির একটি রোডম্যাপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এটি দুই পক্ষকেই একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে বাধ্য করবে।
মি. ভ্যান্স আরও জানান, "রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয়কেই কিছু কিছু অঞ্চল ছাড়তে হবে।" তবে কার কোন ভূখণ্ডকে ছাড় দিতে হবে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি মার্কিন প্রশাসন।
ক্রিমিয়া নিয়ে জটিলতা যেখানে
ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বকে প্রশাসন স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে কিনা, হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের করা এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যে কোনো প্রকারে তিনি এই চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি চান। তার ভাষায়, "আমার কোনো পক্ষ নাই। আমি শুধু এর একটি সমাধান চাই।"
এদিকে, ইউক্রেন বহুদিন বলে আসছে যে ২০১৪ সালে রাশিয়া অবৈধভাবে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখল করে এবং এ বিষয়ে তারা আপসহীন।
মি. জেলেনস্কি বারবার জানিয়েছেন, তার দেশ কিছুতেই ক্রিমিয়া উপদ্বীপের দাবি ছাড়বে না। "এটা নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। এটি আমাদের সংবিধানের পরিপন্থি," বলেন তিনি।
এক সময়ে ইউক্রেনের দখলে থাকা ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেওয়া মি. জেলেনস্কির পক্ষে রাজনৈতিকভাবে এমনিতেই সম্ভব না।
পাশাপাশি, এটি বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নীতিমালারও পরিপন্থি। আন্তর্জাতিক আইনে জোর দিয়ে বলা আছে, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কোনো দেশ তার সীমান্ত সীমান্ত পরিবর্তন করতে পারবে না। সে হিসাবে, ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার দখলদারিত্বকে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া অসম্ভব।
ফের হামলা ইউক্রেনে
ইউক্রেন জানিয়েছে, গতরাতে দেশটিতে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিতস্কো জানিয়েছেন, হামলায় অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু ও একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীও রয়েছেন।
ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ থেকে ইউক্রেনের অনেক অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে এবং অনেক মানুষ সেসব ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছেন বলে জানান তিনি। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খারকিভ শহরেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে, পূর্ব ইউক্রেনের মার্হানেতস শহরে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় একটি বাসে থাকা অন্তত নয় জন শ্রমিক নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন।
হতাশ ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বাকযুদ্ধ নতুন নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে তাদের দু'জনের বৈঠকেও তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। গতকাল বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন যে ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার সাথে আলোচনা সহজ।
"আমার মনে হয়, রাশিয়া প্রস্তুত" জানিয়ে তিনি বলেন, "আমার ধারণা ছিল জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা সহজ হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটিই সবচেয়ে কঠিন প্রমাণিত হয়েছে।"
আগামী শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে বিশ্ব নেতাদের মিলনমেলায় মি. জেলেনস্কির সাথে ফের আলোচনায় বসা যেতে পারে বলেও তিনি জানান।
নির্বাচনি প্রচারণার সময় মি. ট্রাম্প বারবার দাবি করেছিলেন যে তিনি ক্ষমতায় এলে একদিনের মাঝে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন।
কিন্তু তার ক্ষমতায় থাকার একশোতম দিন ঘনিয়ে এলেও যুদ্ধবিরতির এখনও কোনো লক্ষণ নেই।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, "প্রেসিডেন্ট হতাশ। তার ধৈর্যশক্তি শেষ সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে।"
ওই একই দিনে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও সতর্ক করে বলেন, যদি রাশিয়া ও ইউক্রেন কোনো চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতার দায়িত্ব থেকে "সরে দাঁড়াবে"।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও সম্প্রতি একই সুরে কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এরই মাঝে এ বিষয়ক একটি বৈঠক থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি