মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: বিগত সরকারে আমলে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এখনও স্থবিরতা কাটেনি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার শূন্যতায় ব্যাহত হচ্ছে এখানকার চিকিৎসা সেবা। সরকারি এই হাসপাতাল চলে এখন কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তাদের দিয়ে।
হাওর অধ্যুষিত ওই উপজেলায় আড়াই লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। ৯টি ইউনিয়নে গঠিত উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ মধ্য ও নিম্নবিত্তের। যে কোন রোগে আক্রান্ত হলে ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জনবল ও ওষুধ সংকটে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটের কারণে খুড়িয়ে চলছিল স্বাস্থ্যসেবা। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে হাসপাতালটি কাগজে কলমে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও তা এখনও রয়ে গেছে প্রক্রিয়াধীন। যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ডাক্তারের পদগুলোও শূন্য রয়ে গেছে। নামমাত্র ৫০ শয্যার হাসপাতালটি কার্যত ৩১ শয্যার হাসপাতালই রয়ে গেছে।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে এখানে অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেস্থিসিয়লোজি পদায়িত রয়েছন। কিন্তু গাইনি কনসালটেন্ট না থাকার কারণে সিজারিয়ান অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না ওই হাসপাতালে। ফলে দুর্গম ওই উপজেলার গর্ভবর্তী মহিলাদের প্রসব কার্যক্রকম বিভাগীয় শহর কিংবা জেলা সদরে গিয়ে করাতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শেষ নেই মানুষের। চিকিৎসক না থাকায় যে কোন রোগী আসলেই রেফার করা হয় জেলা বা বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে। এনসিডি কর্ণারে প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল ওষুধ বরাদ্দের ফলে এখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছে না রোগীরা।
জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি হাসপাতালের কর্মচারীও সংকট রয়েছে। বাবুর্চি পদে দীর্ঘদিন কেউ নেই। সুইপারের ৫টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র একজন। মিড ওয়াইফ ৭ জনের মধ্যে আছেন ৩জন, অফিস সহায়ক ৭ জনের মধ্যে একজনও নেই। এছাড়া এক্সরে মেশিন থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে টেকনোলজিস্ট নেই, নার্স ২৫ জনের মধ্যে মাত্র ১৩ জন কর্মরত আছেন। তন্মধ্যে চারজন বিএসসি নার্সিং কোর্সে অন্যত্র অধ্যায়নরত। মেডিকেল টেকনোলজিস ডেন্টাল নেই। আল্টাসোনোগ্রাফ মেশিন থাকলেও পরিচালনার জন্য কোন ডাক্তার নেই। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত থাকায় ওই মেশিনটি এখন বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন রোগী ভর্তি রয়েছেন। নার্স থাকলেও সেখানে কোনও চিকিৎসক নেই।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী জানান, প্রায় সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। সবসময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। একই মন্তব্য করেন আরও কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
বছরখানেক পূর্বে আরএমওসহ একসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের ৪ জন ডাক্তার বদলি হওয়ার ফলে কার্যত ডাক্তার শূন্য হয়ে পড়েছে ওই হাসপাতাল। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এখানকার চিকিৎসাসেবা।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পপ কর্মকর্তা ডা. মো.আবু সলেহীন খাঁন বলেছেন, হাসপাতালে জনবল সংকট প্রকট। এ ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করে আসছি।