ঢাকা
৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৩০
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ২১, ২০২৫

দেশ থেকে কার্গো এয়ার শিপমেন্টে বড় বাধা ‘পরিবহন ব্যয়’

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপ-আমেরিকা। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় কিছুটা অসুবিধায় পড়েছেন বাংলাদেশের খাত সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে সিজনাল ও জরুরি কার্গো পরিবহনে বেড়েছে বিপত্তি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে কার্গো এয়ার শিপমেন্টে বড় বাধা ‘পরিবহন ব্যয়’। ঢাকা থেকে পণ্য পরিবহনে ভারতের চেয়ে প্রতি কেজিতে ৫০ সেন্ট থেকে এক ডলার বেশি গুনতে হয় বায়ারদের।

ঢাকা থেকে ইউরোপের ফ্লাইট টাইম, কার্গো সহজলভ্যতা, শিপমেন্ট চার্জের কারণে খরচ বেশি পড়ে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় বাংলাদেশ স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতের কলকাতার নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে কম খরচে এয়ার শিপমেন্ট করতে পারতো। সমস্যা সমাধানে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে কার্গো শিপমেন্ট চালু করছে বাংলাদেশ। তবে তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহারে এখনো অপেক্ষা করতে হবে। সিলেট থেকে ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। শিগগির একটি চালান যাবে। চট্টগ্রাম থেকে চালুর বিষয়েও অগ্রগতি সন্তোষজনক পর্যায়ে।

এয়ার কার্গো পরিবহন এবং তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, সময় ও অর্থ সাশ্রয় করতেই ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা কাজে লাগান তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা ও বায়াররা। ভারতে উড়োজাহাজ চলাচল বেশি হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকায় কার্গো পরিবহনের সুযোগ বেশি। আবার বাংলাদেশে ইউরোপগামী উড়োজাহাজ চলাচল সীমিত এবং ইউরোপ থেকে আকাশপথে পণ্য আমদানি না করায় রপ্তানিতে একমুখী কার্গো পরিবহনে ব্যয় বেড়ে যায়। এজন্য ঢাকা, সিলেটের পাশাপাশি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে ইউরোপ থেকে কার্গো উড়োজাহাজের ফ্লাইট চালু ও বাড়ানো এবং এয়ার কার্গো পরিবহন ব্যয় কমানোর বাধা দূর করার পরামর্শ খাত সংশ্লিষ্টদের।

ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করায় সাময়িক সমস্যা হলেও আমাদের দেশীয় সম্ভাবনাগুলো আলো দেখবে। এয়ার শিপমেন্টের ক্ষেত্রে বর্তমানে যেসব সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে এখন আমাদের দেশের ভিতরকার নিজস্ব লজিস্টিক সুবিধাগুলো বাড়াতে হবে। সরকার চাইলে কম সময়ের মধ্যে এসব সুবিধা বাড়ানো সম্ভব।- বাফা সহ-সভাপতি খায়রুল কবির সুজন

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, দূরত্বের কারণেও কলকাতার চেয়ে ঢাকার কার্গো পরিবহন ভাড়া বেশি। তবে পোর্ট হ্যান্ডেল চার্জ কমিয়ে কার্গো এয়ার ফ্রেইট কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আকাশপথে কার্গো রপ্তানির সুবিধাও বাড়ানো হচ্ছে বলে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, আকাশপথে বছরে দুই লাখ টনের বেশি পোশাক রপ্তানির চাহিদা আছে। এর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক অপারেশন হয় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে। বাকি ১৫-২০ শতাংশ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় ভারতের কলকাতার নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়ে আসছিল।

জানা যায়, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে বিশ্বের ২৩টি দেশে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হচ্ছিল। এর মধ্যে বেশি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস এক আদেশে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়। ওই আদেশে ভারতের পেট্রাপোল (বাংলাদেশ অংশে বেনাপোল) শুল্ক স্টেশন দিয়ে সড়কপথে কলকাতা বিমানবন্দর ও কলকাতা বন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির সুবিধা দেওয়া হয়। এছাড়া ভারতের গেদে (বাংলাদেশ অংশে দর্শনা) শুল্ক স্টেশন দিয়ে রেলে ভারতের নভোসেবা বন্দর ব্যবহারেরও সুবিধা দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ শুধু বেনাপোল হয়ে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপে পণ্য রপ্তানি করে আসছিল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে ছয়শটির অধিক প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত শত কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ তৈরি পোশাক। গত বছর কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে ৪৪ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ।

জরুরি ও সিজনাল গার্মেন্টস প্রোডাক্টগুলো এয়ার শিপমেন্ট হয়। ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে বড় অংশের এয়ার শিপমেন্ট হয়। ১৫-২০ শতাংশ এয়ার শিপমেন্ট হতো ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে। এখন ঢাকার পাশাপাশি সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কার্গো শিপমেন্টের ব্যবস্থা করা গেলে সমস্যা দ্রুত কাটানো সম্ভব হবে।-বিজিএমইএ ফোরাম চট্টগ্রামের ট্রেজারার রফিক চৌধুরী বাবলু

রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আকাশপথে কার্গো (পণ্য) পরিবহনে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়ে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহারে কেজিতে ৫০ সেন্ট থেকে এক ডলার খরচ কম হয়। আবার জটের কারণেও শাহজালাল দিয়ে পণ্য পরিবহন বিলম্বিত হয়। জরুরি কার্গো দ্রুত পরিবহনে কলকাতা বিমানবন্দরের ব্যবহার বাড়ছিল।

এয়ার কার্গো পরিবহনের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে ইতিহাদ, এমিরেটস, কাতার, সৌদিয়া, বাংলাদেশ বিমান, অ্যাটলাস এয়ার এবং সিল্কওয়ে এয়ারলাইন্স আকাশপথে পণ্য পরিবহন করে।

এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় উড়োজাহাজ সংস্থা ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। ইতিহাদ বিশ্বের ৫৫টি দেশের ৮৫টি গন্তব্যে প্রতি সপ্তাহে ১৩০০-এরও অধিক ফ্লাইট পরিচালনা করে। ঢাকা থেকে ইউএই, দুবাইয়ে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে। তারা যাত্রীর পাশাপাশি ইউএই, দুবাই হয়ে ট্রানজিটের মাধ্যমে ইউরোপে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহন করে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক অন্যতম।

এমিরেটস এয়ারলাইন্স বিশ্বের ৫৫টি দেশের ৯১টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে। তারা বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে কার্গো পরিবহন করে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের জাতীয় উড়োজাহাজ সংস্থা কাতার এয়ারলাইন্স। বিশ্বের ১৫০টির অধিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান সংস্থাটি। এটি ঢাকা থেকে কাতারের রাজধানী দোহা হয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি পণ্য পরিবহন করে।

আগামী ২৭ মার্চ প্রথমবারের মতো একটি কার্গো ফ্লাইট স্পেনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এজন্য একটি কার্গো প্লেন চাটার্ড করা হয়েছে। আনুমানিক ৬০ টন কার্গো পাঠানো হবে ওই ফ্লাইটে।- সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমেদ

একইভাবে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ৮৫টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে সৌদিয়া। সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় কার্গো পরিবহন করে এয়ারলাইন্সটি।

পূর্ব ইউরোপের দেশ আজারবাইজানের বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা সিল্কওয়ে এয়ার। ঢাকা থেকে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু হয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে বিশেষত স্পেনে কার্গো পরিবহন করে সিল্কওয়ে। অন্যদিকে অ্যাটলাস এয়ার আমেরিকার একটি কার্গো উড়োজাহাজ সংস্থা। এয়ারলাইন্সটি চাটার্ড কার্গো পরিবহন করে। ঢাকা থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে কার্গো পরিবহন করে অ্যাটলাস এয়ার।

প্রায় দেড় যুগ সময় ধরে কার্গো এয়ার শিপমেন্ট ব্যবসায় জড়িত সেফ এভিয়েশন সার্ভিস লিমিটেডের কর্ণধার জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ধাক্কা খাবেন, তেমনটা নয়। আমাদের ঢাকা বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল হওয়ায় এখন আগের চেয়ে কার্গোর স্পেস তিনগুণ হয়েছে। এয়ার ফ্রেইটে পণ্য রপ্তানি করতে ব্যবসায়ীরা এ সুবিধাটা পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘মূলত আমাদের প্রত্যেকটি ফ্লাইট দিল্লির ওপর দিয়ে যায়। ঢাকা থেকে ইউরোপে সরাসরি ফ্লাইট যেতে গড়ে ১০ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। আর কলকাতা ও দিল্লি থেকে যেতে গড়ে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। এই তিন ঘণ্টার ভাড়া ঢাকা থেকে বেশি দিতে হয়। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পণ্য রপ্তানিতে ব্যয় সাশ্রয়ের এটাও একটি বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি। ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। এতে জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ থেকে ভারতের জনসংখ্যা ৭ গুণ বেশি। আমাদের দেশের মানুষ বেশিরভাগ থাকে মধ্যপ্রাচ্যে। ভারতের মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকে। বেশি থাকে ইউরোপে। জনসংখ্যার হিসাবেও তাদের (ভারত) বেশি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করে। এতে তারা বেশি কার্গো বহন করতে পারে। অথচ ঢাকা থেকে একটি বড় প্যাসেঞ্জার ফ্লাইট গেলে ২০-২২ টন কার্গো নিয়ে যেতে পারে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঢাকা থেকে প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটের পাশাপাশি চাটার্ড ফ্লাইটে কার্গো পরিবহন করা হয়। প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটগুলো বেশিরভাগ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হয়ে যায়। চাটার্ড ফ্লাইটগুলো ঢাকায় আসার পথে খালি আসে। যাওয়ার সময় কার্গো নিয়ে যায়। এতে এক পথে এয়ার কার্গো পরিবহনে আসা-যাওয়া দুই পথের খরচ হয়। এখন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হওয়ায় এটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।’

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহ-সভাপতি খায়রুল কবির সুজন বলেন, ‘এয়ার শিপমেন্টের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা এবং বায়াররা সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধাগুলো নিয়েছেন। এখন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হওয়ায় তারা বিকল্প চিন্তা করবেন। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করায় বর্তমানে যারা এয়ার শিপমেন্ট দিচ্ছেন তারা হয়তো সাময়িক বিপত্তিতে পড়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করায় সাময়িক সমস্যা হলেও আমাদের দেশীয় সম্ভাবনাগুলো আলো দেখবে। এয়ার শিপমেন্টের ক্ষেত্রে বর্তমানে যেসব সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে এখন আমাদের দেশের ভিতরকার নিজস্ব লজিস্টিক সুবিধাগুলো বাড়াতে হবে। সরকার চাইলে কম সময়ের মধ্যে এসব সুবিধা বাড়ানো সম্ভব। বিশেষ করে কার্গো পরিবহনের জন্য এখন দরকার কার্গো বিমানের ফ্লাইট চালু ও বাড়ানো। এয়ার কার্গো পরিবহন যাতে ব্যয় সাশ্রয়ী হয়, সে বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া।’

এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঢাকায় কার্গো ফ্লাইট বাড়াতে হবে। ইউরোপ থেকে যেহেতু আমাদের দেশে এয়ার কার্গো আমদানি হয় না, ঢাকায় আসা কার্গো ফ্লাইটগুলো আসার পথে চায়না থেকে যাতে এয়ার কার্গো বহন করে সরকার সে বিষয়টি কাজে লাগালে রপ্তানি ব্যয় অনেক কমে যাবে।’

বিজিএমইএ ফোরাম চট্টগ্রামের ট্রেজারার এবং চৌধুরী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিক চৌধুরী বাবলু বলেন, ‘জরুরি ও সিজনাল গার্মেন্টস প্রোডাক্টগুলো এয়ার শিপমেন্ট হয়। ঢাকা এয়ারপোর্ট দিয়ে বড় অংশের এয়ার শিপমেন্ট হয়। ১৫-২০ শতাংশ এয়ার শিপমেন্ট হতো ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে। এখন ঢাকার পাশাপাশি সিলেট ও চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে কার্গো শিপমেন্টের ব্যবস্থা করা গেলে সমস্যা দ্রুত কাটানো সম্ভব হবে।’

বেবিচক সূত্র জানায়, ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার কার্গো অপারেশনের জন্য বর্তমানে বার্ষিক দুই লাখ টন ধারণক্ষমতার একটি কার্গো টার্মিনাল রয়েছে। বর্তমানে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। চলমান সংস্কার ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের সমাপ্তির পরে কার্গো টার্মিনালের বার্ষিক ধারণক্ষমতা বার্ষিক পাঁচ লাখে উন্নীত করা হবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করার বিষয়টি আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। ইতোমধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ফ্যাসিলিটিজ এবং ইফিশিয়েন্সি বাড়ানো হয়েছে। আকাশপথে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যাতে সুযোগ সুবিধা পান সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে। আগামী ২৭ এপ্রিল সিলেট ওসমানী এয়ারপোর্ট কার্গো অপারেশন শুরু করবে। আগামী একমাসের মধ্যে চট্টগ্রাম শাহ আমানত এয়ারপোর্টেও যাতে অপারেশন শুরু করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরাসরি ইউরোপ-যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানিতে যে সমস্ত প্রটোকল পালন করা প্রয়োজন পড়ে, ঢাকা-সিলেটে ইতোমধ্যে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চট্টগ্রামেও বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ইডিএস মেশিন রয়েছে। সিলেট কিংবা ঢাকা থেকে ইডিএস মেশিন চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। আমি ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে মিটিংও করেছি।’

ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে এয়ার কার্গো পরিবহনে ব্যয় বেশি নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এয়ার কার্গো ফ্রেইট ফি তাদের (ভারত) চেয়ে আমাদের কিছুটা বেশি হবে এটা স্বাভাবিক। তবে পোর্ট হ্যান্ডেল চার্জ যৌক্তিকভাবে কমানো হচ্ছে। এতে কার্গো পরিবহনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের পণ্য আমরাই পরিবহন করবো। কোনো দেশকে পরিবহন করতে হবে না।’

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে কার্যকর করার উদ্যোগ- চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যগামী উড়োজাহাজ চলাচল থাকার সুবাদে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে নিয়মিত ফ্রেশ সবজি রপ্তানি হয়ে আসছিল। কিন্তু সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রটোকল পালনের সুবিধা না থাকায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ইউরোপে পণ্য রপ্তানি করা যেত না। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের পর চট্টগ্রাম শাহ আমানত দিয়ে ইউরোপে পণ্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য নির্ধারিত প্রটোকল পালনে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ইডিএস (এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম) স্ক্যানার মেশিন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যে বিষয়টি কার্যকর করতে শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে মিটিংও করেছে। চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সিএনএস প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘শাহ আমানত এয়ারপোর্ট থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পেরিশেবল (সবজি) আইটেম নিয়মিত পাঠানো হচ্ছে। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ টন কার্গো পাঠানো হয়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং যুক্তরাজ্যে কার্গো পাঠানোর ক্ষেত্রে যেসব প্রটোকল মেনটেন করতে হয়, সে সুবিধাগুলো শাহ আমানত বিমানবন্দরে নেই। যে কারণে ওইসব দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি কার্গো পরিবহন চালু হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ার পর শাহ আমানত থেকে সরাসরি ইউরোপে কার্গো পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো কার্গো রপ্তানির জন্য প্রটোকল পালনে যে স্ক্যানার প্রয়োজন হয়, শাহ আমানতে তা নেই। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের দুটি ইডিএস মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে জরুরিভিত্তিতে একটি চট্টগ্রামে আনা হচ্ছে। এ নিয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে একটি মিটিংও হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে আমদানিপণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে নিয়মিত এয়ার কার্গো আসতো। স্কাই লাইনন্স তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার পর সরাসরি কার্গো পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এখন সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করতে জরুরিভিত্তিতে কী কী প্রয়োজন হতে পারে, তা শিগগির সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের নিয়মিত কার্গো পরিবহন হয়ে আসছিল। কিন্তু পরিসরটা ছোট ছিল। আবার ইউরোপে কার্গো পরিবহনের সুযোগটা ছিল না। কারণ সেখানে কার্গো রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু প্রটোকল রয়েছে। আবার এক্সপোর্ট কার্গো হ্যান্ডেলের জন্য নির্ধারিত কোল্ড এরিয়ার প্রয়োজন পড়ে। আমরা ইতোমধ্যে কোল্ড এরিয়া তৈরির জন্য টেন্ডার করেছি।’

তিনি বলেন, ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করার বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক। এখন আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে পারবো। এজন্য সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান মহোদয় আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউরোপসহ কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে কার্গো পরিবহন করার সক্ষমতা অর্জন করবো ইনশাআল্লাহ।’

ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পর সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সরাসরি ইউরোপে কার্গো পরিবহনের সুবিধা সংযোজন করা হয়। ২০২২ সালে এ সুবিধা সংযোজন করা হলেও দীর্ঘ তিন বছরে সরাসরি ইউরোপে কোনো কার্গো ফ্লাইট চলাচল করেনি। ভারত তাদের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার পরপরই প্রথমবারের মতো ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্পেনে ৬০ টনের একটি কার্গো পাঠানো হচ্ছে। এজন্য কার্গো পরিবহন ফ্লাইটও চাটার্ড করা হয়েছে।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমেদ বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানি করতে কিছু প্রটোকল মেনে চলতে হয়। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্রেইট পরিবহনের সুবিধা ২০২২ সালের এপ্রিলে এসব প্রটোকল সুবিধা চালু করা হয়। এরপর ছোট ছোট দুটো কার্গো শিপমেন্ট করে প্রক্রিয়াটি চালু রাখা হয়। তবে চালুর পর থেকে বড় আকারে কোনো কার্গো ফ্রেইট করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ২৭ মার্চ প্রথমবারের মতো একটি কার্গো ফ্লাইট স্পেনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এজন্য একটি কার্গো প্লেন চাটার্ড করা হয়েছে। আনুমানিক ৬০ টন কার্গো পাঠানো হবে ওই ফ্লাইটে।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram