ঢাকা
৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:২৭
logo
প্রকাশিত : মার্চ ১১, ২০২৫

‘শেখ হাসিনা যে ক্ষতি করেছেন তা বিশাল’

‘শেখ হাসিনা যে ক্ষতি করেছেন তা বিশাল’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব গ্রহণের সময় বাংলাদেশের অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘এটি ছিল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশ, যেন আরেকটি গাজা। তবে এখানকার ভবনগুলোর অবস্থা গাজার মতো নয়, বরং সকল প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস হয়েছে।’

যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা গত বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ফিরে একটি মলিন দৃশ্যের সম্মুখীন হন। রাস্তাগুলো তখনো রক্তে ভেজা ছিল এবং পুলিশের গুলিতে এক হাজারেরও বেশি প্রতিবাদকারী ও শিশুর মরদেহ মর্গে স্তূপীকৃত ছিল।

ছাত্রদের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তিনি বিমানে দেশের বাইরে চলে যান এবং এর পরপরই বেসামরিক লোকজন শেখ হাসিনার নৃশংসতার প্রতিশোধ নিতে তার বাসভবনে লুটতরাজ চালায়।

৮৪ বছর বয়সী ড. ইউনূস দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।তিনি বছরের পর বছর ধরে হাসিনার কাছ থেকে নিন্দা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং তাকে রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখতেন। ড. ইউনূস তার বেশিরভাগ সময় বিদেশে কাটিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাও ছিল না। কিন্তু যখন ছাত্র আন্দোলনকারীরা অধ্যাপক ইউনূসকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ করে তখন তিনি সম্মত হন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাসিনার শাসনকাল অত্যাচার, সহিংসতা এবং দুর্নীতির অভিযোগে পরিপূর্ণ ছিল। জুলাই ও আগস্ট মাসে কয়েক সপ্তাহে রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়, যখন তার দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এক হাজার ৪শ’রও বেশি মানুষ নিহত হয়। জাতিসংঘের মতে, পুলিশের সহিংস দমন-পীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল। তবে শেখ হাসিনা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূসের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন দেশটির জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ছয় মাসে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা, যারা হাসিনার সুরক্ষায় ছিলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। হাসিনার সমালোচকদের কথিত জিজ্ঞাসাবাদের নামে গোপন বন্দীশালায় আটক রাখা হতো, সেগুলো খালি করা হয়েছে, মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং হাসিনা শত শত অভিযোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। অবশ্যই তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ড. ইউনূস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবার বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় হাঁটতে গেলে, মনে হয় দেশটি একটি সংকটময় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। অধ্যাপক ইউনূস এখনো ব্যাপকভাবে সম্মানিত, যদিও তার শাসনক্ষমতা এবং প্রতিশ্রুত সংস্কারের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য মরিয়া এবং অধ্যাপক ইউনূসের ওপর নির্বাচন আয়োজনে চাপ তৈরি করছে। বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররাও তাদের নিজস্ব দল গঠন করেছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘এই সরকার শুধুমাত্র একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা। এখনকার সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয় এবং সংস্কার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য তাদের রাজনৈতিক ম্যান্ডেট এবং সংগঠন নেই।’

প্রফেসর ইউনূস দেশের সমস্যাগুলোকে হাসিনার শাসনের পরিণতি হিসেবে চিত্রিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘হাসিনার শাসনামলে কোনো সরকার ছিল না, এটি ছিল ডাকাত পরিবারের মতো। বসের কাছ থেকে কোনো আদেশ এলে তা করা হতো। কেউ সমস্যা সৃষ্টি করছে? আমরা তাদের অদৃশ্য করে দেব। নির্বাচন করতে চান? আমরা নিশ্চিত করব আপনি সব আসন জিতবেন। টাকা চান? ব্যাংক থেকে এমন একটি মিলিয়ন ডলারের ঋণ নিন যা আপনাকে কখনো ফেরত দিতে হবে না।’

হাসিনার সময়ে দুর্নীতির মাত্রা এমন ছিল যে, ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে একবারে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। হাসিনার আত্মীয়দের মধ্যে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের একজন হলেন তার ভাগ্নি, যুক্তরাজ্যের লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। সিদ্দিক মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। কারণ তিনি হাসিনার শাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত কথিত সম্পদের বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন এবং বাংলাদেশে একটি দুর্নীতির তদন্তে তার নাম এসেছে। তিনি সমস্ত অন্যায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ডের আর্থিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার, যাতে পাচার হওয়া আনুমানিক ১৭ বিলিয়নেরও বেশি ডলারের অর্থ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা যায়। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনরা দেশের ব্যাংক থেকে এই টাকা সরিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই অর্থ দ্রুত ফেরত আসার আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘ব্যাংকগুলোকে জনগণের অর্থ লুট করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল এবং এতে সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।’ তিনি বলেন, ‘তারা তাদের কর্মকর্তাদের বন্দুকসহ পাঠাতো সব কিছু অনুমোদন করানোর জন্য।’

শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তিনি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলতেন এবং বর্তমানে তিনি সেই প্রতিবেশী দেশেই লুকিয়ে আছেন। এ কারণে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে থাকাকালীন ভারত এই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না, বরং সম্প্রতি দিল্লি ঢাকা’কে ‘সন্ত্রাসবাদকে স্বাভাবিকীকরণ’ করার অভিযোগ এনেছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়, তবে তা সহ্য করা যেতে পারে। কিন্তু ‘ভারতে অবস্থান করে আমাদের সমস্ত কাজ নস্যাৎ করার প্রচারণা চালানোর অনুমতি দেওয়া বিপজ্জনক। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে।’

সম্প্রতি অধ্যাপক ইউনূস ট্রাম্পের বিলিয়নিয়ার সমর্থক ইলন মাস্ককে বাংলাদেশে তার স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, মাস্ক এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে ট্রাম্প বাংলাদেশকে ‘একটি ভালো বিনিয়োগের সুযোগ’ এবং বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দেখতে পারেন এবং মাস্কের সফরের সময় তিনি এই বিষয়টি তার সামনে উপস্থাপন করার পরিকল্পনা করছেন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram