এটা প্রমাণিত যে, চলতি বছরটি বলিউডের জন্য রূপান্তরকারী ছিল। পরিচালকরা সীমানা পেরিয়ে ঐতিহ্যগত রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। সামাজিক ট্যাবু, নিষিদ্ধ সম্পর্কের গল্প রুপালি পর্দায় তুলে এনে প্রচলিত কাহিনি বলার নিয়ম ভেঙেছেন নির্মাতারা। চলতি বছরে নির্মিত এমন ৬ সিনেমা নিয়ে এই প্রতিবেদন।
ফাইটার
সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত বলিউড সিনেমা ‘ফাইটার’। গত ২৫ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায় এটি। এ সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেন হৃতিক রোশান ও দীপিকা পাড়ুকোন। মুক্তির পর বক্স অফিসেও দারুণ সাড়া ফেলে। মূলত, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বালাকোট শহরের আশেপাশে ভারভীয় সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা করা বালাকোট বিমান হামলাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কাহিনি। সিনেমাটির শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় নারী চরিত্রগুলো ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গ ভূমিকাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। অর্থাৎ শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় নারী চরিত্রগুলো পুরুষ প্রতিপক্ষের মতোই সক্ষম। শুধু পুরুষরাই কঠিন অ্যাকশনের ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন না, বরং নারীরাও পারেন। সিনেমাটিতে প্রচলিত এই নিয়ম ভেঙেছেন নির্মাতারা।
লাপাতা লেডিস
নির্মল প্রদেশ নামে এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ‘লাপাতা লেডিস’ সিনেমার কাহিনির শুরু। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে যাত্রা করে কয়েকটি নবদম্পতি। সব নববধূর পরনে লাল শাড়ি আর অলঙ্কার। লম্বা ঘোমটা টানা এসব কনেদের চেনা কঠিন। এ অঞ্চলের বধূরা নিজের স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষকে মুখ দেখানো মানেই চূড়ান্ত সামাজিক অবক্ষয়। তাই ঘোমটা সরানোর আস্পর্ধা কারো নেই। এই ট্রেনের যাত্রী নবদম্পতি দীপক কুমার আর ফুল কুমারী। মধ্যরাতে ঘুমচোখে দীপক অন্যের বউকে নিজের বউ ভেবে ট্রেন থেকে নিয়ে নেমে যায়। ঘোমটার কারণে বাধে বিপত্তি। সহজ-সরল, ভোলাভালা ফুল কুমারী ট্রেনে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে। অন্যদিকে, দীপক জয়াকে নিজের বউ ভেবে বাড়িতে নিয়ে যায়। মূলত, গল্পটা এখান থেকেই শুরু। ১৩ বছর পর ‘লাপাতা লেডিস’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে রুপালি পর্দায় ফিরেন আমির খানের প্রাক্তন স্ত্রী কিরণ রাও। সিনেমাটিতে নারী চরিত্রগুলোর শক্তি, রসবোধ প্রদর্শনের মাধ্যমে নারীদের নিষ্ক্রিয় বা নির্ভরশীল হওয়ার নিয়মকে অস্বীকার করা হয়েছে। এটি পুরুষ-শাসিত সমাজে নারীদের মুখোমুখি হওয়া, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া এবং নারীর ক্ষমতায়নের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। চলতি বছরে অস্কার প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে এই সিনেমা।
চান্দু চ্যাম্পিয়ন
কবীর খান পরিচালিত সিনেমা ‘চান্দু চ্যাম্পিয়ন’। ভারতের প্রথম প্যারালিম্পিকে স্বর্ণপদক বিজয়ী পদ্মশ্রী মুরলীকান্ত পেটকরকে নিয়ে সিনেমাটির গল্প। মুরলীর জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন কার্তিক আরিয়ান। মুক্তির পর বক্স অফিসে সেভাবে ব্যবসা করতে না পারলেও সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা পান কার্তিক। অধিকাংশ সমালোচকের মত— “চান্দু চ্যাম্পিয়ন’ সিনেমায় কার্তিক তার ক্যারিয়ারে সেরা অভিনয় করেছেন।” শারীরিকভাবে সব মানুষ প্রতিভাবান নাও হতে পারেন। কিন্তু অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মহান কিছু অর্জন করা সম্ভব। মূলত, সিনেমাটির গল্পে এই বার্তা দিয়েছেন নির্মাতারা।
উলাজ
শুধাংশু সারিয়া নির্মিত স্পাই-থ্রিলার ঘরানার সিনেমা ‘উলাজ’। জাহ্নবী কাপুর অভিনীত এ সিনেমা গত ২ আগস্ট মুক্তি পায়। অনুসন্ধানী নারী চরিত্রগুলো যে প্রচলিত ধারায় উপস্থাপনা করা হয়, তাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে মনোমুগ্ধকর থ্রিলার ঘরানার এই সিনেমায়। শক্তিশালী, অ্যাকশন ঘরানার সিনেমার জন্য পুরুষরা উপযুক্ত— গল্প বলার এই ধারাও সিনেমাটিতে ভাঙা হয়েছে।
শ্রীকান্ত
রাজকুমার রাও অভিনীত সিনেমা ‘শ্রীকান্ত’। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শ্রীকান্ত বোল্লার জীবনী নিয়ে তুষার হিরানন্দানি নির্মাণ করেছেন সিনেমাটি। হিন্দি ভাষার এ বায়োপিকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাজকুমার রাও। অন্ধ ব্যক্তিরা সফল জীবনযাপন করতে পারে না— সমাজের এই সাধারণ বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করেছে সিনেমাটি। একটি অন্ধ চরিত্র কীভাবে সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে স্বপ্নপূরণ করে, সেই চিত্র সিনেমাটিতে তুলে ধরা হয়েছে; যার মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়েছে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো মানুষের সম্ভাবনাকে আটকে রাখতে পারে না।
শয়তান
অজয় দেবগন অভিনীত সিনেমা ‘শয়তান’। বিকাশ বহেল নির্মিত এ সিনেমায় অজয়ের সঙ্গে পর্দা শেয়ার করেন আর মাধবন, জ্যোতিকার মতো তারকারা। গত ৮ মার্চ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এটি। সিনেমাটিতে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর ইঙ্গিত রয়েছে। বলিউড সিনেমায় কালো জাদুর প্রচলিত চিত্রায়ণকে চ্যালেঞ্জ করেছে ‘শয়তান’। সিনেমাটিকে মহৎ বা চাঞ্চল্যকর করার পরিবর্তে, ভারতীয় সিনেমায় দেখা যায় এমন সাধারণ অতিপ্রাকৃত গল্প থেকে বেরিয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন নির্মাতারা।
তথ্যসূত্র: পিঙ্কভিলা