মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি: কৃষক পরিবারের একমাত্র ছেলে সোহানুর জামান নয়ন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে চেয়েছিলেন। গত ছুটিতে এসে ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়ে ২ দিন আগে কর্মস্থলে যোগ দেন নয়ন। ছেলেকে নিয়ে বাবা-মা ও একমাত্র বোনেরও স্বপ্ন ছিল ভাই বড় অফিসার হবে। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্পট সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে মৃত্যু হয় ফায়ার ফাইটার নয়নের। তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নার্গিস বেগম। শোকে কাতর বোন সীমা আক্তার সহ স্বজনরা।
নিহত সোহানুর জামান নয়ন (২৪) রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান আটপুনিয়া গ্রামের কৃষক আখতারুজ্জামানের একমাত্র ছেলে।
বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিন স্থানীয় লোকজন ও নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নয়ন খুব ভালো ছেলে ছিল। বাবা-মায়ের একমাত্র ভরসা ছিল নয়ন। তার এমন অকাল মৃত্যুতে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেল। এমন মৃত্যু তারা মেনে নিতে পারছেন না। আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সড়কে বেরিকেড না দেওয়ায় সেই সড়ক দিয়ে ট্রাক ঢুকে পড়ায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের। ট্রাকচালককে অতি দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি অসহায় নয়নের পরিবারের পাশে যেন সরকার দাঁড়ায় সে দাবিও জানান তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নয়নের মরদেহ আনতে গিয়েছেন বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা। ঢাকা থেকে মরদেহ নিয়ে রংপুরে ফেরার পর দাফন কার্য সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য প্রস্তুতি চলছে গ্রামের বাড়িতে।
নয়নের চাচা বলেন, নয়ন খুব ভালো ছেলে ছিল। তার চাকরির বয়স প্রায় ৩০ মাস হলো। সচিবালয়ে আগুন নেভাতে ট্রাক চাপায় সে মারা যায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাস্তায় প্রটেকশন থাকলে এই দুর্ঘটনা নাও হতে পারতো। সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে যোগ দিলেও লেখাপড়া বন্ধ করেনি। ছুটিতে এসে এইচএসসি ও ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়েছে, প্রমোশন নিয়ে বড় অফিসার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্যি হলো না।
নয়নের পিতা আখতারুজ্জামান কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে একটাই, ওকে নিয়ে আমার অনেক আশা-ভরশা ছিল। হঠাৎ করে সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। আমাদের সংসার দেখাশোনা করার মতো আর কেউ রইলো না।
বড় বোন সীমা আক্তার বলেন, ফজরের আজানের সনয় শুনি আমার ভাই সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। তার কিছুক্ষণ পর শুনতে পাই, ভাইটা আমার মারা গেছে। আমার ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। নিমেষেই সবকিছু চুরমার হয়ে গেল।
মিঠাপুকুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ ও ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মশিউর রহমান বলেন, আমাদের সহকর্মী নয়নের এমন মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। এখন আমরা তার বাড়িতেই অবস্থান করছি। লাশ আসার পর দাফন কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা আছি।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে নামে। দায়িত্ব পালনে তেজগাঁও থেকে ছুটি গিয়েছিলেন স্পেশাল ইউনিটের এই সদস্য নয়নও। যুক্ত হয়েছিলেন আগুন নেভানোর কাজে। পানির পাইপ সংযোগ দিতে সচিবালয়ের রাস্তার উল্টো পাশে যাওয়ার সময় বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক ধাক্কা দেয় তাকে। মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি নয়নকে।