ঢাকা
১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১১:৩৩
logo
প্রকাশিত : জানুয়ারি ১১, ২০২৫

‘অভিমানটা’ পুষেই শেষের ঘোষণা

শেষটা আরও সুন্দর হতে পারত কিনা সেটা ভাবনার। তবে যেটা হয়েছে, যেভাবে হয়েছে সেটাকে সম্মান জানানোর সেরা সময়। তামিম ইকবাল শেষবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন। কোনও ‘টালবাহানা না করেই’ সোজাসাপ্টা ঘোষণা, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ।"

জোর করে যে পৃথিবীর কিছু হয় না সেটা আরেকবার দেখা মিলল। ২০২৩ সালে যে দরজা নিজ থেকে বন্ধ করে দিয়েছিলেন সেটা খুলে দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু নিজ থেকে সরে আসা জায়গায় আরেকবার ফেরত না গিয়ে নিজের পূর্বের সিদ্ধান্তকেই পূর্ণ সমর্থন করে গেলেন তামিম। পুরোনো এক অভিমান যে এতদিনেও ভাঙেনি সেই টের পাওয়া গেল তার কথায়,, ‘‘২০২৩ বিশ্বকাপের আগে যা হয়েছে, আমার জন্য তা বড় ধাক্কা ছিল, যেহেতু ক্রিকেটীয় কারণে আমি দলের বাইরে যাইনি…।’’

২০২৩ সালে তামিম নির্বাচকদের বোঝান যে, তাকে জাতীয় দলের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না রাখতে। বোর্ড প্রধানের (যদিও কেউ সরাসরি নাম নেননি) সঙ্গেও হয়েছিল তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। তামিম তাকে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘‘আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। আপনারা আমাকে প্রতিদিন একটা নতুন জিনিস ফেস করাবেন। এখানে আমি থাকতে চাই না।’’

তৎকালীন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নানামুখী পরিকল্পনায় বিপর্যস্ত তামিম অবসর ভেঙে ফিরেও বিশ্বকাপে না খেলার কঠিনতম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে তাকে রাখাও হয়নি। যদিও নির্বাচকরা তামিমের না খেলার সিদ্ধান্তের পরিবর্তে ফিটনেস ইস্যুকে সামনে এনেছিলেন। ফলে তামিমের ক্যারিয়ারের শেষে দাঁড়ি পড়ে গিয়েছিল সেদিনই!

কিন্তু আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তামিমকে বর্তমান নির্বাচক, অধিনায়ক পেতে চাইছেন। দুই দফা বৈঠকও হয়েছে নির্বাচকদের সঙ্গে। প্রথম দফায় না করে দেওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় সময় চান সাবেক অধিনায়ক। কিন্তু নির্ধারিত সময়েই তামিম জানিয়ে দেন চূড়ান্ত অবসরের সিদ্ধান্ত ,‘‘এখন যেহেতু সামনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় একটি আসর সামনে, আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার অলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক।"

২০২৩ সালের ৬ জুলাই হুট করে তামিম চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। ৩০ ঘণ্টার ব্যবধানে তিনি অবসর ভাঙতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে। পরবর্তীতে বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ খেলে বিশ্বকাপ খেলার সব প্রস্তুতি নিয়ে ফুরফুরে ছিলেন। ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ফিজিও রিপোর্ট দেয়, ‘‘বিশ্বকাপের আগে দশ সপ্তাহের রিহ্যাব হয়ে যাবে। প্রথম ম্যাচ খেলার জন্য খুব ভালো অবস্থায় চলে যাবে।’’

কিন্তু কোচ-অধিনায়ক ও বোর্ড প্রধানের ‘তিন-চার মাসে সাত-আটটা উদ্দেশমূলক ঘটনা’ তামিমকে ভাবতে বাধ্য করে বিশ্বকাপে না খেলার। তখন বেশ কিছু বিষয় সামনে আসে, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তামিমকে না খেলানো, খেলালেও নিচের দিকে ব্যাটিং করানো হবে। বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলবেন তামিম। সঙ্গে তার ফিটনেস ইস্যু।

যা পরবর্তীতে ভিডিও বার্তায় খোলাসা করেন তামিম। বোর্ড প্রধানকে তামিম বলতে বাধ্য হন, ‘‘এই নোংরামি যদি হয় আমি এখানে থাকতে চাই না। দরকার হলে আমাকে নির্বাচন করবেন না। আমি এগুলো মানতে পারব না।’’

তামিমের তখন দাবি ছিল, তাকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বিশ্বকাপে না রাখার প্রক্রিয়া চলছিল, ‘‘আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে একটা বড় জিনিসকে ঢাকার জন্য আরেকটা জিনিস ফিড করে দেওয়া। সে পাঁচ ম্যাচ খেলবে। তাকে কিভাবে সিলেক্ট করবো। আমি মনে এরকম কোনও কথা হয়নি, ওই দিন নির্বাচকরাও ছিলেন। ফিজিও, ট্রেনার ছিলেন। সবাই ছিল ওখানে।’’

‘‘আমার কাছে মনে হয় যে, আপনার যদি আসলেও আমাকে চাইতেন তাহলে আমাকে মানসিকভাবে চাঙা ও ফুরফুরে অনুভব করাতেন। কারণ আমি তিন-চার মাস পর খারাপ সময় কাটিয়ে ফিরছি। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল তিন-চার মাস। এসে একেকটা নতুন নতুন জিনিস বলা..হয়তো বা সাথে আমি এটাও বলি, এই কথাটাও যদি আমাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হতো, মেবি আমি জিনিসটাকে অন্যভাবে রিঅ্যাক্ট করতাম, মেবি আমি জিনিসটা মেনে নিতাম হয়তো।

কিন্তু হঠাৎ করে কোনও কারণ ছাড়া ফোন করে যদি বলে যে তুমি খেলবা না, আবার যদি খেলো আলোচনা হচ্ছে নিচে ব্যাটিং করাবে। আমি ঠিক নিশ্চিত নই এটা কতটুকু ফেয়ার।’’

সেই অভিমানটা তামিম পুষে রেখেছেন স্পষ্ট। সময়ের ব্যবধানে সেই মানুষগুলো অনুপস্থিত থাকলেও তাদের দেওয়া ‘দাগে’ ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের ক্রিকেটের সফলতম ওপেনার। পেছনে ফিরে তামিম অনেক কিছু পেতে পারেন। অনেক সুখস্মৃতিও জমাতে পারেন। কিন্তু হৃদয়ের কোনে একটু ব্যথাও অনুভব করতে পারেন, প্রিয় সন্তানের চাওয়া যে অপূর্ণ থেকে গেল!

ছেলে আরহাম চেয়েছিলেন বাবাকে দেশের জার্সিতে খেলতে দেখতে। কিন্তু পুরনো অভিমানটা এতোটাই বড় যে, তামিম ছেলেকেও বোঝাতে বাধ্য হন, ‘‘তুমি যেদিন বড় হবে, সেদিন বাবাকে বুঝতে পারবে।’’

‘‘বিদায় তামিম।’’

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram