

আজ শনিবার ভোরেও থাই ও কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরেও এই সংঘর্ষ চলছিল।
থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, কম্বোডিয়া তার সমস্ত বাহিনী প্রত্যাহার এবং ল্যান্ডমাইন অপসারণের পরেই কেবল যুদ্ধবিরতি সম্ভব হবে।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড সামরিক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ভূমি ও জনগণের জন্য হুমকি অনুভব করব।
আমি এটাই স্পষ্ট করে বলতে চাই।’
এদিকে সীমান্তে রাতভর গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। থাই বাহিনী সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থানে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে সংঘাতে কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে এবং উভয় পক্ষের ৭ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি সোমবার থাই ও কম্বোডিয়ার বাহিনীর মধ্যে শুরু হওয়া লড়াই থামাতে পারবেন, যা কেবল ফোন করলেই সম্ভব। শুক্রবার রাতে উভয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, দুই দেশ আজ সন্ধ্যা থেকে গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে এবং অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ফিরে যেতে সম্মত হয়েছে।
তিনি আরো লেখেন, ‘উভয় দেশই শান্তির জন্য প্রস্তুত।’
তবে আনুতিন বলেন, ‘তিনি ট্রাম্পকে বলেছেন থাইল্যান্ড আগ্রাসী নয় এবং যুদ্ধবিরতি সম্ভব হওয়ার আগে কম্বোডিয়াকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে এবং সীমান্ত থেকে ল্যান্ডমাইন সরিয়ে নিতে হবে।
যুদ্ধবিরতির আগে এই বিষয় আমোদের নিশ্চিত করতে হবে। থাইল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে, সংঘাতকে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত না করতে।’
শনিবার কম্বোডিয়া জানিয়েছে, থাই বিমান হামলার শিকার হয়েছে তারা। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি এক্স পোস্টে জানিয়েছে, ‘১৩ ডিসেম্বর থাই সেনাবাহিনী দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে সাতটি বোমা ফেলেছিল। থাই সামরিক বিমান এখনো বোমাবর্ষণ বন্ধ করেনি।
’ থাই সেনাবাহিনীও নিশ্চিত করেছে, লড়াই অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত বিরোধ গত ২৪ জুলাই তীব্র আকার ধারণ করে, যখন কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট হামলা চালায় এবং প্রতিক্রিয়ায় থাই বিমান হামলা চালানো হয়। উভয় দেশ একে অপরকে আক্রমণের জন্য অভিযুক্ত করেছে। কয়েকদিন ধরে তীব্র লড়াইয়ের পর কয়েক ডজন লোক নিহত হয়।
প্রতিবেশী দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো ট্রাম্প এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় তাৎক্ষণিক এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় তখন। অক্টোবরে মালয়েশিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়। তবে উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
কম্বোডিয়ান সেনারা স্থলমাইন পুঁতে রাখার কারণে সাতজন থাই সেনা অঙ্গ হারিয়েছে। কম্বোডিয়া বলেছে, মাইনগুলো ১৯৮০-এর দশকের গৃহযুদ্ধের অবশিষ্টাংশ। তারপর থেকে, উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
গত রবিবার এক সংঘর্ষে থাইল্যান্ডের দুই সেনা আহত হওয়ার পর এই সপ্তাহে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার অভ্যন্তরে বিমান হামলা শুরু করে। কম্বোডিয়াও রকেট হামলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এই যুদ্ধে উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের ছয়টি প্রদেশ এবং কম্বোডিয়ার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের পাঁচটি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দুই দেশ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাদের ৮০০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত নিয়ে বিরোধ করে আসছে। ১৯০৭ সালে ফরাসি মানচিত্রকাররা এই সীমানাটি অঙ্কন করেছিলেন, যখন ফ্রান্স কম্বোডিয়ায় ঔপনিবেশিক শাসক ছিল।
সূত্র : বিবিসি

